উন্নয়নে ইউনুস সরকার
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর, মুহাম্মদ ইউনুস একজন সাদা মনের মানুষ হিসেবে বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিত হন। তাঁর মেধা, পরিশ্রম, এবং সমাজ পরিবর্তনের তাগিদ তাঁকে এমন একটি অবস্থানে পৌঁছে দেয়, যেখানে তিনি বিশ্বের দরবারে একটি নতুন চিন্তা ও দর্শন প্রবর্তন করতে সক্ষম হন।
১৯৭৬ সালে, গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইউনুস সরকার মানব সমাজের প্রকৃত উন্নয়নের ধারণাটি তুলে ধরেছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংক এমন একটি ব্যবস্থা যা দরিদ্রদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য, যাতে তারা নিজেদের জীবনমান উন্নত করতে পারে। এটি ছিল একটি সঠিক চিন্তা, যা সমাজে বৈষম্য দূর করতে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এবং মানুষের জীবনে স্থায়ী পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিল।
এছাড়া, ইউনুসের বিশ্বাস ছিল যে উন্নয়ন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সম্ভব নয়, বরং সামাজিক কল্যাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের দিক থেকেও তা নিশ্চিত করা উচিত। তিনি বলেছিলেন, "উন্নয়ন হলো মানুষের আত্মমর্যাদা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।" আর সেই জন্যই তিনি গ্রামীণ জনগণের মধ্যে উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরিচালনা করেছেন।
একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি প্রমাণ করেছেন যে ব্যবসা এবং সমাজের উন্নতি একসাথে হতে পারে। ইউনুস সরকার তাঁর কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে, যেখানে দরিদ্র জনগণের জন্য অর্থনৈতিক সমতা এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করা হয়। আজ তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের একজন গর্বিত পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি, কিন্তু তাঁর মূল অর্জন হলো মানুষের জীবনে একটি স্থায়ী পরিবর্তন আনা।
তার কাজের পরিপ্রেক্ষিতে, ইউনুস সরকার আমাদের শেখায় যে, প্রকৃত উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন মানুষের জন্য এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়, যা তাদের ক্ষমতায়ন ও উন্নতি নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশ সরকারের ২০২৫ সালের উন্নয়ন পরিকল্পনা মূলত "অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২০-২০২৫)" এর অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, যার লক্ষ্য দেশের সমৃদ্ধি, সুষম উন্নয়ন, এবং দারিদ্র্য বিমোচন। এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন করা। এখানে কিছু প্রধান দিক তুলে ধরা হলো:
- বৃদ্ধি লক্ষ্য: ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮% এর বেশি রাখার লক্ষ্য। এতে জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির আশা করা হচ্ছে।
- অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরিবেশের উন্নয়ন করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া, সঠিক নীতিমালা ও নিয়মকানুনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা হবে।
- বেকারত্ব কমানো: ২০২৫ সালের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫% এর নিচে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং দক্ষতা বৃদ্ধি মাধ্যমে দারিদ্র্য কমানো হবে।
- গ্রামীণ উন্নয়ন: গ্রামীণ এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরো বাড়ানো হবে, বিশেষত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, এবং অবকাঠামো খাতে।
- গুণগত শিক্ষা: শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত মান বাড়ানো, নতুন প্রযুক্তি এবং কৌশল ব্যবহার করে শিক্ষার মান উন্নত করা হবে।
- স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন: স্বাস্থ্য সেবা জনগণের জন্য আরও সহজলভ্য এবং মানসম্মত করা হবে। চিকিৎসা খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো এবং হাসপাতালগুলোর অবকাঠামো উন্নত করা হবে।
- পরিবহন ব্যবস্থা: সড়ক, রেলপথ, বিমানবন্দর, এবং বন্দর উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করা হবে, যাতে বাণিজ্য এবং ভ্রমণ সহজ হয়।
- বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি: বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সাশ্রয়ী শক্তির ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
- ডিজিটাল বাংলাদেশ: ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও গতি আনা হবে, যেমন ই-গভর্নেন্স, ই-কমার্স, এবং ডিজিটাল শিক্ষা। উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের অর্থনীতি আধুনিকায়ন করা হবে।
- মহিলাদের ক্ষমতায়ন: মহিলাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি, এবং শিক্ষার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন করা হবে।
- বৈষম্য দূরীকরণ: সকল সম্প্রদায়ের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা হবে, বিশেষত দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগণের জন্য।
- সবুজ অর্থনীতি: পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার ও জ্বালানি সংরক্ষণ করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
- বিদেশি সহযোগিতা: আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হবে যাতে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পাওয়া যায়।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ২০২৫ সালের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে পৃথিবীজুড়ে পরিচিত হবে, যা দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান ও উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
0 মন্তব্যসমূহ