ত্রিশাল উপজেলা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা, যা ৩৩৮.৪৫ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এর উত্তরে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা, দক্ষিণে ভালুকা ও গফরগাঁও উপজেলা, পূর্বে ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল ও গফরগাঁও উপজেলা এবং পশ্চিমে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা অবস্থিত।
জনসংখ্যা: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ত্রিশালের জনসংখ্যা ৪,১৯,৩০৮ জন; এর মধ্যে পুরুষ ২,০৮,৬৬২ জন এবং মহিলা ২,১০,৬৪৬ জন। মুসলিম ৪,০৭,৬৯৫ জন, হিন্দু ১১,৩২৩ জন, বৌদ্ধ ৩ জন, খ্রিস্টান ৭১ জন এবং অন্যান্য ২১৬ জন।
প্রশাসনিক বিভাগ: ত্রিশাল উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে। পৌরসভাটি ৯টি ওয়ার্ড ও ১২টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। ইউনিয়নগুলো হলো: আমিরাবাড়ী, কাঁঠাল, কানিহারী, ত্রিশাল, ধানীখোলা, বালিপাড়া, বৈলর, মঠবাড়ী, মোক্ষপুর, রামপুর, সাখুয়া ও হরিরামপুর।
শিক্ষা: ত্রিশালে শিক্ষার হার ৪০%। এখানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৫), নজরুল কলেজ (১৯৬৭), ত্রিশাল মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯০), দরিরামপুর হাইস্কুল (১৯১৩, বর্তমানে নজরুল একাডেমী) এবং ত্রিশাল আব্বাসিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৩১) সহ বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
অর্থনীতি: এ উপজেলার প্রধান আয়ের উৎস কৃষি (৬২.৬৯%)। প্রধান কৃষি ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট, গম, ডাল, আখ ও শাকসবজি। এছাড়া আম, জাম, কাঁঠাল, লেবু, কলা, আনারস, পেঁপে, কুল, জলপাই, নারিকেল ও সুপারি প্রধান ফল হিসেবে উৎপাদিত হয়।
যোগাযোগ: ত্রিশালে পাকা রাস্তা ১৬০ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৭৫৯ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ৫ কিমি এবং রেলপথ ১৫ কিমি রয়েছে। এছাড়া নৌপথের দৈর্ঘ্য ১৫ কিমি।
ঐতিহাসিক নিদর্শন: ত্রিশালে দরিরামপুর জামে মসজিদ (মুঘল আমলে নির্মিত) এবং মোক্ষপুর ইউনিয়নের সানকীভাঙ্গা গ্রামে রাজবাড়ির ইন্দিরা, প্রাচীর ও পুলের নিদর্শন রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রায়ের গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর লড়াইয়ে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৭ জুন কাটাখালী বাজারে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে প্রায় অর্ধশত পাকসেনা নিহত হয়। আগস্ট মাসে মঠবাড়ি ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি বাজারে লড়াইয়ে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ভাংনামারি চরে পাকসেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে আবদুর রহমান নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
ত্রিশাল উপজেলা তার ঐতিহ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
0 মন্তব্যসমূহ