ফুলপুর বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার একটি উপজেলা, যা ৩১১.৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এর উত্তরে হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা, দক্ষিণে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা, পূর্বে গৌরীপুর ও নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলা, এবং পশ্চিমে শেরপুর জেলার নকলা উপজেলা অবস্থিত।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ফুলপুর উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৩,১৫,২৭২ জন; এর মধ্যে পুরুষ ১,৫৫,৮০১ জন এবং মহিলা ১,৫৯,৪১৭ জন।
প্রশাসনিকভাবে ফুলপুর উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। ইউনিয়নগুলো হলো: ছনধরা, রামভদ্রপুর, ভাইটকান্দি, সিংহেশ্বর, ফুলপুর, পয়ারী, রহিমগঞ্জ, রূপসী, বালিয়া, এবং বওলা।
উপজেলাটিতে কংস, খাড়িয়া, দেয়ার, ভোগাই, বান্দসা, মালিঝি, ধলাই, কাকুড়িয়া, সোয়াইন, এবং দেওর নদী প্রবাহিত হয়েছে।
শিক্ষার ক্ষেত্রে, ফুলপুর উপজেলায় ৮টি কলেজ, ৫৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবং ১৭৫টি মাদ্রাসা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলপুর ডিগ্রি কলেজ, ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ, বওলা কলেজ, চান্দপুর কলেজ, ফুলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), তালদীঘি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), এবং মোজাহারদি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১)।
মুক্তিযুদ্ধের সময়, ফুলপুর উপজেলায় উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। পয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ দত্তসহ ৯ জন বাঙালিকে পাকসেনারা সরচাপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করার জন্য ধরে নিয়ে যায়। তবে প্রধান শিক্ষক গুলি করার পূর্বেই পানিতে ডুব দিয়ে পালিয়ে আসেন। এছাড়া, ছনধরা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামে পাকবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধে ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলায় ১টি বধ্যভূমি এবং সরচাপুরে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী মুজিবুর রহমান খান ফুলপুরী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল বাসার আকন্দ, চলচ্চিত্র পরিচালক জিল্লুর রহমান, ভাষা সৈনিক ও রাজনীতিবিদ মোঃ শামসুল হক, এবং অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার রকিবুল হাসান।
ফুলপুর উপজেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে সর্চাপুর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ, ঐতিহাসিক সরচাপুর গোদারাঘাট, নীলগঞ্জ বধ্যভূমি, এবং চরনিয়ামত বড় জামে মসজিদ।
0 মন্তব্যসমূহ