হজ্জ-ওমরা এর ফযীলত ও করার নিয়ম

হজ্জের ফযীলত

১। হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন হজ্জে মাকবুলের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়।(মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ৭০৫০) বুখারী শরীফ ৬/২০৬ (১৪৯৭) তিরমিযী ১/১৬৭ (৮১০), নেসায়ী শরীফ ২/১(২৬২১) ইবনে মাজাহ —২০৭ (২৮৮৮)

২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন যে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য হজ্জের সময় অশ্লীল কথা বললো না এবং কোন গোনাহ করলো না সে মায়ের পেট থেকে জন্ম গ্রহণের দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে।

বুখারী শরীফ—৬/২০৬ (১৪৯৯), নেসায়ী শরীফ ২/২(২৬২৬) ইবনে মাজাহ —২০৭ (২৮৮৯)

৩। ওমরার জন্য ও বড় সওয়াবের ওয়াদা রয়েছে। হাদীসে বর্ণিত আছে— হজ্জ এবং ওমরার উভয়ই অভাব ও গোনাহ্ সমূহকে এমন ভাবে দূর করে দেয়, যেমন আগুন লোহা, স্বর্ণ, রূপার মরিচাকে দূর করে দেয়।তিরমিযী শরীফ—১/১৬৭ (৮১০), নেসায়ী শরীফ—২/২ (২৬২৯)

২। হজ্জ না করার পরিণাম:—

হজ্জ ফরয হওয়ার পরও যে ব্যক্তি হজ্জ করে না, তার প্রতি হুশিয়ার উচ্চারণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো ব্যক্তি শরয়ী ওজর বা কঠিন রোগ অথবা অত্যাচারী শাসক কতৃর্ক বাঁধা প্রাপ্ত হওয়া ব্যতীত হজ্জ আদায় করা থেকে বিরত রইল সে ইয়াহুদী বা নাসারা হয়ে মারা যাক আমার কোনো আফসোস নেই।[দারেমী হাদীস নং—১৮৩৯, তিরমিযী শরীফ—১/১৬৭ (৮১২)]

৩। হজ্জ কার উপর ফরয হজ্জ ফরয হওয়ার শর্তাবলী:

হজ্জ ফরয হওয়া সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর ঘোষণা হলো—

উদ্ধিৃ আয়াতের ইসতাত্বা’আ শব্দটির ব্যাখ্যা করে তাফসীর ও ফিকহ শাস্ত্রবিদগণ বলেন, নিম্নোক্ত শর্তাবলি যার মাঝে বিদ্যামান থাকবে তার ওপর হজ্জ ফরয। যেমন—

১. আল্ ইসলামু: মুসলমান হওয়া। কেননা অমুসলিমের ওপর ইসলামী বিধি প্রযোজ্য নয়। যেমন আল্লাহর বাণী—

২. আল্ হুররিইয়াতু: স্বাধীন হওয়া। কেননা কোনো দাসদাসীর ওপর হজ্জ ফরয নয়। যেমন আল্লাহর বাণী—

৩. মুকাল্লাফু বিশশরয়ী: প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। কেননা নাবালেগের ওপর শরয়ী বিধান প্রযোজ্য নয়। যেমন হাদীসের বাণী—

৪. আস্ছিহ্হাতু: সুস্থ হওয়া। স্বাস্থ্যগতভাবে পূর্ণ সুস্থ না হলে তার ওপর হজ্জ ফরয নয়। যেমন আল্লাহর বাণী—

৫. আল্ বাসারাতু: দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন হওয়া। কেননা অন্ধ ব্যক্তির ওপর হজ্জ ফরয নয়। যেমন আল্লাহর বাণী—

৬. আয্যারু: পথ খরচ থাকা। আর সম্পদের পরিমাণ কতটুকু হতে হবে। যাতে আসা যাওয়ার সমস্ত খরচের পর বাড়ি ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবার পরিজনের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ বহন করতে পারে। যেমন আল্লাহর বাণী—

৭. আম্নুত ত্বরীকি: হজ্জে আসা যাওয়ার পথ নিরাপদ হওয়া। শত্রুমুক্ত হওয়া এবং রাষ্ট্রীয় কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকা।

৮. আয্যাজু আবিল মোহরিমু লিল মারআতি: মহিলার সাথে স্বামী বা মুহরিম পুরুষ থাকা। যেমন মহানবী (স:)—এর বাণী

৯. রাহিলাতু: যানবাহনের সুবিধা থাকা।

১০. আল্ আকিলু: জ্ঞানবান হওয়া। কেননা পাগলের ওপর হজ্জ ফরয নয়।

হজ্জ তাৎক্ষণিক না বিলম্বে: অবকাশের সাথে ফরয:মহান আল্লাহর ঘোষণানুযায়ী সকল আলেম ও ফকীহ ঐকমত্য পোষণ যে, সমর্থবান ব্যক্তির ওপর জীবনে একবার হজ্জ ফরয, কিন্তু কারো ওপর হজ্জ ফরয হওয়ার পর তা আদায় করা কি ঐ বছরই ফরয, নাকি বিলম্বের অবকাশ রয়েছে, এ ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। যেমন:-

১। আবু হানীফা, শাফেয়ী ও মুহাম্মদের অভিমত:ইমাম আবু হানিফা, শাফেয়ী ও মুহাম্মদ (র:)—এর মাতে হজ্জ আলাত তারাখী তথা বিলম্বে অবকাশসহ ফরয।

দলীল: ক. যেসব শব্দ দ্বারা ফরয হয়েছে। যেমন— আতিমুল হাজ্জাইলাআখের এবং ফাহাজ্জু আল হাদিস এগুলো আম্রু মত্বলক যা তাৎক্ষণিক পালন করা ফরয নয়।

খ. হজ্জ যষ্ঠ বা নবম হিজরীতে ফরয হয়েছে, আর রাসূল (স:) হজ্জ আাদয় করেছেন দশম হিজরীতে। আদায় যদি তাৎক্ষণিকভাবে হতো তাহলে রাসূল (স:) বিলম্বে করলেন কেন?

গ. সালাতকে যেমন শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্ব যায়, হজ্জকে তেমনি বিলম্ব করা যাবে।

২। মালেক, আহমদ ও আবু ইউসুফের অভিমত:ইমাম মালেক ও আহমদ ও আবু ইউসুফ (র:)—এর মতে হজ্জ আলাল ফউর তথা ফরয হওয়ার সাথে সাথে ঐ বছরই আদায় করা ফরয।

দলীল: ক. মহানবী (স:)—এর বাণী মান আরাদাল হাজ্জা ফাল ইউআজ্জিল অর্থাৎ যে ব্যক্তি হজ্জের ইচ্ছা করবে সে যেন তাড়াতাড়ি করে।

খ. জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই তাৎক্ষণিকভাবে হজ্জ আদায় করতে হবে।

প্রত্যুত্তর: ক. ইমাম আবু ইউসুফ (র:)—এর পেশকৃত হাদীসের জবাবে বলা হয়, এখানে আদেশসূচক ক্রিয়া (ফাল ইউআজ্জিল) টি উজুব এর জন্য নয়; বরং ইজতিহবাব এর জন্য। তাই তাড়াতাড়ি আদয় করা মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়।

খ. জীবনের অনিশ্চয়তার অজুহাত হজ্জকে তাৎক্ষণিক ফরয বলা যায় না; বরং উত্তম বলা যেতে পারে।

মাবনাল এখতেলাফ অর্থাৎ মতভেদের ভিত্তি: হজ্জ তাৎক্ষণিক ফরয, নাকি বিলম্বের অবকাশ সহ ফরয, এ নিয়ে ইমামদের মাঝে যে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে তার ভিত্তি হলো হজ্জ ফরযের ঘোষণা— আতিমূল হাজ্জা আয়াতের আতিমূ আমরটি নিয়ে। এখানে আমরটি হলো আম্রু মত্বলক আর আম্রু মত্বলক এর চাহিদা হলো তাৎক্ষণিক ও বিলম্ব উভয়টি। সুতরাং ইমাম মালেক, আহমদ, আবু ইউসুফ প্রমুখ তাৎক্ষণিক ও বিলম্ব উভয়টি। সুতরাং ইমাম মালেক, আহমদ, আবু ইউসুফ প্রমুখ তাৎক্ষণিক ফরয অর্থ বহন করেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানীফা, শাফেয়ী, মুহাম্মদ (র:) বিলম্বে ফরয অর্থ গ্রহণ করছেন। সুতরাং মতভেদের ভিত্তি হলো আম্রু মত্বলক এর চাহিদা নিয়ে।

তবে শরহে বেকায়া গ্রন্থকারের মতে, ওলামায়ে মুতাআখখিরীনের এ ধরণা ভুল। কেননা ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ (র:) উভয়ের মতেই আম্রু মত্বলক তাৎক্ষণিক পালনীয় নয়। ইমাম আবু ইউসুফ (র:) তাৎক্ষণিক ফরয এজন্য বলেছেন যেন এটা আনাদায়ী থেকে না যায়। তার মতে কেউ যদি তাৎক্ষণিক আদায় না করে পরবর্তীতে আদায় করে তাহলেও আদায় হয়ে যাবে, কাযা হবে না। তবে এজন্য সে গুনাহগার হবে। আর ইমাম মুহাম্মদ (র:) —এর মতে, অনাদায়ী থাকার আশাঙ্কা না থাকলে বিলম্বে আদায় করলে কোনো গুনাহ হবে না।

মতভেদের ফলাফল: উপরিউক্ত মতভেদের ফলাফল হলো—

১. বিলম্বে হজ্জ আদায় করলে ইমাম আবু ইউসুফ (র:)—এর মতে, গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে শাফেয়ী ও মুহাম্মদ (র:)—এর মতে গুনাহগার হবে না।

২. হজ্জ আদায় না করে মারা গেলে সকল ইমামের ঐক্যমতে গুনাহগার হবে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, হজ্জ আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম সেতু বন্ধন। এটা বিলম্বের অবকাশসহ ফরয, তবে তাড়াতাড়ি আদায় করাই ঈমানের একান্ত দাবি। কেননা জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর অনদায়ী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে গুনাহগার হতে হবে।

উমরা

উমরা শব্দের আভিধানিক অর্থ: উমরা আরবী শব্দ, অর্থ যিয়ারত করা, ভ্রমন করা।

উমরা শব্দের পারিভাষিক অর্থ:হজ্জের নির্দিষ্ট দিনগুলো তথা ৮ই যিলহজ্জ থেকে ১৩ই যিলহজ্জ ব্যতীত শরীয়ত নির্ধারিত পন্থায় কা’বা শরীফ তাওয়াফ ও সাফা— মারওয়ায় সায়ী করাকে উমরা বলা হয়। সক্ষম হলে সারা জীবনে একবার তা আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।

উমরার ফরয দু’টি:১। ইহ্রাম ২। তাওয়াফ ওয়াজিব দু’টি: ১। সায়ী ২। মাথা মুন্ডন বা চুল ছাটা।

এক নজরে উমরার জন্য করণীয় কাজ

ইহ্রাম বাঁধার পূর্বে:ইহ্রাম পূর্বে গেঁাফ, চুল, নাক, নখ, বগল ও নাভীর নীচে যথারীতি ক্ষৌরকর্ম সমাপনের পর গোসল করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ইহ্রামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। গোসল সম্ভব না হলে অন্তত ভালভাবে ওযু করে নেয়া দরকার।

 আতর জাতীয় সুগন্ধি সংগে থাকলে ব্যবহার করা ভাল: সেন্ট ব্যবহার করা উচিত নয়। [আবু দাউদ ১/২৪৪ (১৭৫৪)]

 মীকাত অর্থাৎ ইহ্রাম বাঁধার নির্ধারিত স্থান হতে উমরার নিয়্যতে ইহ্রাম বাঁধতে হয়।

 সেলাইবিহীন কাপড়, চাদর ও লুঙ্গীর ন্যায় পরতে হয়। এই কাপড়ের রং সাদা হওয়া উত্তম।

 ইহ্রাম বাঁধতে কাপড় পরিধান করার পর সময় থাকলে এবং মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে দুূ’রাকাআত সুন্নাতুল ইহ্রাম নামায পড়া উত্তম। [বুখারী শরীফ ৬/২০৭ (১৫১)]

 হজ্জ বা উমরা উভয়ের নিয়্যত করার সাথে সাথে তালবিয়া পড়া সুন্নাত অর্থাৎ—

উচ্চারণ: লাব্বায়কা আল্লাহুম্মা লাব্বায়ক, লাব্বায়কা লা শারীকা লাকা লাব্বায়ক; ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নিয়¥াতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারীকা লাক্ । [বুখারী শরীফ ৬/২১০ (১৫২৫), মুসলিম শরীফ ১/৩৭৫ (১১৮৪), তিরমিযী শরীফ ১/১৬৯ (৮২৫)]

অর্থ: আমি হাযির, হে আল্লাহ! আমি হাযির, আমি হাযির, কোন শরীক নাই তোমার, আমি হাযির, নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই, আর সকল স¤্রাজ্যও তোমার, কোন শরীক নাই তোমার।

এ দু’আ পাঠ করতে হবে। পুরষগণ জোরে জোরে [নেসায়ী শরীফ ২/১৪(২৭৫২)] ও মহিলাগণ আস্তে আস্তে পড়বেন [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, পৃ: ১২৯]। বাবুস্ সালাম দিয়ে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করা সুন্নাত। তবে উহা বাধ্যতামূলক নয়।

কা’বা শরীফের তাওয়াফ বা এর চতুর্দিকে সাতবার চক্কর দিতে হবে। [ফরজ (প্রথম তিনবার রমল করবে), বুখারী শরীফ—৬/২১৯ (১৫৯২), ইবনে মাজা, পৃ: ২১১, হাদীস—২৯৫০]

তাওয়াফ হজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে আবার হজরে আসওয়াদের নিকট গিয়ে শেষ করতে হবে। সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করবে। আর সম্ভব না হলে ইশারা করে হাতে চুম্বন করবে। [তিরমিযী শরীফ ১/১৭৪ (৮৫৬)]

তাওয়াফের জন্য কোন নির্ধারিত দু’আ নেই, তবে প্রত্যেক চক্করের শেষে— আল্লাহ তা’আলার বাণী

উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়াকিনা আযাবান নার। [সূরা বাকারা আয়াত—২০১]

অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! দাও আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ আর আখিরাতে কল্যাণ এবং রক্ষা কর আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে। এই দু’আ পড়ার কথা হাদীসে বর্ণিত আছে। [আবু দাউদ১/২৬০ (১৮৯২)]

তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহীমে বা এর পিছন বরাবর কিছু দূরে, এখানে সম্ভব না হলে মসজিদে হারামের যেকোন স্থানে দু’রাকাআত ওয়াজিবুত তাওয়াফ নামায পড়তে হবে [বুখারী শরীফ ৬/২২০ (১৬০১)]। প্রথম রাকাতে সূরায় ফাতেহার পর সূরায়ে কাফিরূন দ্বিতীয় রাকাতে সূরায়ে ফাতেহার পর সূরায়ে এখলাস পড়া ভালো [তিরমিযী শরীফ ১/১৭৫ (৮৬৯), নেসায়ী শরীফ ২/১৪ (২৭৫৩)]। অতঃপর কিব্লামুখী হয়ে দাড়িয়ে তিন চুমুকে—প্রতি চুমুকে “বিসমিল্লাহি ওয়ালিল্লাহিল হামদ্” বলে যমযমের পানি পান করতে হবে।[বুখারী শরীফ ৬/২২১ (১৬১০), নেসায়ী শরীফ ২/৩২ (২৯৬৫)]

অতঃপর সাতবার সাফা মারওয়ায় সায়ী অর্থাৎ দৌড়াতে হবে (ইহা ওয়াজিব) [বুখারী শরীফ ৬/২২১ (১৬১৫)]। সাফা মারওয়ার মাঝ পথে দুই সবুজ চিহ্নের মধ্যবর্তী স্থানে পুরুষদের জোরে দৌড়াতে হবে।[আবু দাউদ ১/২৬২ (১৯০৫)]

সায়ীর জন্যও নির্ধারিত কোন দু’আ নেই, তবে কা’বার দিকে হয়ে তিনবার তাকবীর বলবে অর্থাৎ আল্লাহুআকবার এরপর এই দু’আ পরবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, পৃ: ১৪৫, আবু দাউদ শরীফ ১/২৬২ (১৯০৫)]

সায়ী সমাপ্ত করে পুরুষগণ মাথা মুন্ডন বা মাথার চুল ছোট করে ছেটে নিতে হবে [ তিরমিযী শরীফ ১/১৮১ (৯১৩)] মহিলাগণ মাথা মুন্ডানু মাকরুহ [ তিরমিযী শরীফ ১/১৮২ ৯১৪)] তা’হলে উমরা সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং ইহ্রামের পরে যা হারাম ছিল তা হালাল হয়ে যাবে।

[আবু দাউদ ১/২৬১ (১৯০৩)]
মীকাত বা এহরাম বাঁধার স্থান
মীকাত বা এহরাম বাঁধার স্থান

নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহরামের জন্য ৫টি মীকাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন ।

[ মুসলিম শরীফ ১/৩৭৫ (১১৮৩), নেসায়ী শরীফ ২/৪ (২৬৫৫)]।

হজ্জ ও উমরাহের নিয়তে যারা এসকল মীকাত অতিক্রম করবে তাঁদের উপর ওয়াজিব হল এই জায়গাগুলো থেকে ইহ্রামের নিয়ত করা এবং তালবিয়া পড়া ও দুই’রাকাত নামায পড়া। [বুখারী শরীফ ৬/২০৭ (১৫২০)] । আর যে ব্যক্তি ইহরামের নিয়ত ছাড়াই ইচ্ছাকৃতভাবে এই স্থানগুলো অতিক্রম করবে তার জন্য মীকাতে ফিরে এসে সেখান থেকে ইহরাম করা জরুরী, অন্যথায় তাকে দম দিতে হবে। দম হল একটি কোরবানি যা সে মক্কায় যবেহ করবে এবং মক্কাবাসী ফকিরদের মধ্যে এই গোশত বণ্টন করবে।

মক্কাবাসীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকেই হজ্জের ইহরাম করবে তবে উমরাহের জন্য তারা হারাম এর সীমানার বাইরে (যেমন তান’ইম) গিয়ে ইহরাম করে আসবে। এক বলা হয় হিল, [বুখারী শরীফ ৬/২০৭ (১৫০৮,৯)]

যারা মীকাতের অভ্যন্তরে অবস্থান করবে যেমন জেদ্দাবাসী, তারা যখন হজ্জ বা উমরাহের নিয়ত করবে, তখন নিজ নিজ ঘরে কিংবা অবস্থান থেকে ইহরাম করবে। তখনকার অবস্থান থেকেও সে ইহরাম করতে পারবে। [মুসলিম শরীফ ১/৩৭৪ (১১৮১)]

ঢাকার হজ ক্যাম্প


 হজ ক্যাম্প যত দিন অবস্থনা করবেন, নিজের শরীর ও মালপত্রের প্রতি খেয়াল রাখবেন।

 কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন নেওয়া বাকি থাকলে অবশ্যই তা নিয়ে নিন।

 বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে নিন।

ব্যাগের নিয়মকানুন

 বিমানে উড্ডয়নকালে হাতব্যাগে ছুরি, কাঁচি, দড়ি নেওয়া যাবে না।

 হজযাত্রীর লাগেজ নিজের নাম, পাসপের্ট নম্বর, হজ এজেন্সির নাম—ঠিকানা ইংরেজিতে লেখা প্রয়োজন।

ঢাকা বিমানবন্দর

 উড্ডয়নের সময় অনুযায়ী বিমানবন্দরে পেঁৗছান।

 আপনার ব্যাগ বা স্যুটকেসে কোনো পচনশীল খাবার রাখবেন না। বিমানের লাগেজে যে মালপত্র দেবেন, তা ঠিকমতো বাঁধা হয়েছে কি না, দেখে নেবেন। বিমানের কাউন্টারে মাল রাখার পর টোকেন দিলে তার যত্ন করে রাখবেন। কারণ, জেদ্দা বিমানবন্দরে ওই টোকেন দেখলে নির্দিষ্ট ব্যাগটি ফেরত পেয়ে যাবেন। ইমিগ্রেশনে চেকিংয়ের পর নিজ মালপত্র যত্নে রাখুন।

 বাংলাদেশ সরকারে দেওয়া পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট, টিকা দেওয়ার কার্ড, অন্য কাগজপত্র, টাকা, বিমানে পড়ার জন্য ধর্মীয় বই ইত্যাদি গলায় ঝোলানোর ব্যাগে যত্ন করে রাখুন।
জেদ্দা বিমানবন্দর

জেদ্দা বিমানবন্দর

বিমান থেকে নামা পর দেখবেন, একটি হলঘরে বসার ব্যবস্থা করা আছে। অবতরণ কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদি কাগজপত্র বের করুন। এই হলঘরের পাশেই ইমিগ্রেশন কাউন্টার। ইমিগ্রেশন পুলিশ ভিসা দেখে (ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে) পাসপোর্টের নির্দিষ্ট পাতায় সিল দেবে। বিমানের বেল্ট মালামাল খুঁজে নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য মালামাল দিন। তারপর মোয়াল্লেমের কাউন্টার। সৌদি আরবে বিমানবন্দরে নামার পর থেকে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে হাজিদের মক্কা—মদিনায় পেঁৗছানো, মক্কা—মদিনায় আবাসন, মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতে থাকা—খাওয়া, যাতায়াতসহ সর্বকিছুর ব্যবস্থা যাঁরা করেন, তাঁদের বলা হয় মোয়াল্লেম। প্রত্যেক মোয়াল্লেমের নির্দিষ্ট নম্বর আছে। মোয়াল্লেমের কাউন্টার থেকে মিলিয়ে নেবেন তাঁর অধীনে কোন কোন হাজি সৌদি আরবে এসে পেঁৗছেছেন। লাল—সবুজ পতাকা অনুসরণ করে ‘বাংলাদেশ প্লাজায়’ পেঁৗছাবেন। হজ টার্মিনাল হজযাত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। হজ টার্মিনালের চারদিক খোলা। ঐতিহ্যবাহী তাঁবুর নকশা করা ছাদ। হজ টার্মিনালের স্থাপিত কিন্তু বাংলাদেশি।

হজ টার্মিনাল

হজ টার্মিনাল

হজ টার্মিনালের ‘বাংলাদেশ প্লাজায়’ গিয়ে অপেক্ষা করুন। অপেক্ষা দীর্ঘ হতে পারে, ধৈর্য হারাবেন না। সেখানে অজু ও নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। বসার জন্য চেয়ারও রয়েছে। প্রতি ৪৫ জনের জন্য একটি বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। গাড়ি আপনাকে জেদ্দা থেকে মক্কায় যে বাড়িতে থাকবেন, সেখানে নামিয়ে দেবে। মোয়াল্লেমের নম্বর লেখা (আরবিতে) কবজি বেল্ট দেওয়া হবে। আপনাকে তা হাতে পরে নেবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র (যাতে পিলগ্রিম নম্বর, নাম, হজ এজেন্সির নাম ইত্যাদি থাকবে) গলায় ঝোলাবেন। জেদ্দা থেকে মক্কায় পেঁৗছাতে দুই ঘন্টা সময় লাগবে। চলার পথে তালবিয়া পড়–ন ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্-ক, লা শারিকা লাক’।

মক্কায় পৌছানোরপর

 মক্কায় পেঁৗছে আপনার থাকার জায়গায় মালপত্র রেখে ক্লান্ত থাকলে বিশ্রাম করুন। আর যদি নামাজের ওয়াক্ত হয়, নামাজ আদায় করুন। বিশ্রাম শেষে দলবদ্ধ হয়ে ওমরাহর নিয়ত করে থাকলে ওমরাহ পালন করুন।

মসজিদুল হারাম (কা’বা শরিফ)

 কা’বা শরিফে প্রবেশের সময় বিসমিল্লাহ ও দরুদ শরিফ পড়ার পর ‘আল্লাহুম্মাফতাহলি আব্ওয়াবা রহমতিকা’ পরবেন।

 মসজিদুল হারামে কোনো নারীর পাশে অথবা অথবা তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ আদয় করা উচিত নয়।

 দরজার সামনে নামাজ পড়া ঠিক নয়, এতে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।

 মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফ) অনেক প্রবেশপথ আছে। সবকটি দেখতে একই রকম। কিন্তু প্রতিটি প্রবেশপথে আরবি ও ইংরেজিতে ১, ২, ৩ নম্বর ও প্রবেশপথের নাম আছে, যেমন: ‘বাদশা আবদুল আজিজ প্রবেশপথ’। আপনি আগে থেকে ঠিক করবেন, কোন প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকবেন বা বের হেবন্ সফরসঙ্গীকেও স্থান চিনিয়ে দিন। তিনি যদি হারিয়ে যান, তাহলে নির্দিষ্ট নম্বরের গেটের সামনে থাকবেন। এতে ভেতরে ভিড়ে হারিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট স্থানে এসে সঙ্গীকে খুঁজে পাবেন।

 কাবা শরিফে জুতা—স্যান্ডেল রাখার ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকবেন, নির্দিষ্ট স্থানে জুতা রাখার জায়গায় রাখুন। যেখানে—সেখঅনে জুতা রাখলে পরে খুঁজে পাওয়া কঠিন। চইলে জুতা বহন করার ব্যাগ সঙ্গে রাখতে পারবেন।

হজ্জের নিষিদ্ধ কাজসমূহ

নিম্নোক্ত কাজগুলো ইহরাম বাঁধা ব্যক্তির জন্য জায়েয নেই। হজ্জটি যেন অসম্পূর্ণ বা নষ্ট না হয়ে যায় সেজন্য এগুলো থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। (১) সঙ্গম করা বা সঙ্গমের প্রতি আকৃষ্ট করে এমন কাজ করা। (২) হারাম কর্মে লিপ্ত হওয়া। (৩) ঝগড়া—বিবাদ করা। (৪) সুগন্ধি ব্যবহার করা। (৫) নখ কাটা। (৬) পুরুষের জন্য সেলাই করা কাপড় পরিধান করা। যেমন, জামা, পায়জামা, জুব্বা, মোজা ইত্যাদি পরিধান করা। (৭) যে কোন পর্দা দিয়ে মাথা বা চেহারা ঢাকা। (৮) মহিলার মুখ ও হাত ঢাকা। (৯) মাথা, দাড়ি বা বোগলের নিচের লোম ও নাভির নিচের লোম উঠানো। (১০) শরীর বা চুলে তেল লাগানো। (১১) হারাম শরীফের বৃক্ষকর্তন করা বা গাছ উপড়িয়ে ফেলা। (১২) স্থলভাগের হিং¯্রপ্রাণী হত্যা করা ভক্ষণযোগ্য হোক বা না হোক।
হজ্জ আদায়ের পদ্ধতি

হজ্জ আদায়ের পদ্ধতি

যে ব্যক্তি হজ্জের ইচ্ছা করে সে যেন হজ্জের মাসগুলোতে মক্কায় যায়। যখন মীকাতে পৌঁছবে বা মীকাত বরাবর হবে তখন গোসল করবে অথবা অযু করবে এবং সেলাইকৃত কাপড় খুলে ফেলবে। ইযার এবং চাদর পরবে এবং দুই রাকাআত নামায পড়বে। হজ্জের নিয়ত করবে এবং এই শব্দগুলো বলে তালবিয়া পাঠ করবে:

এভাবে তালবিয়া পাঠ করলে ইহরাম বাঁধা হয়ে যায়। সুতরাং এখন হজ্জের সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে সংযত থাকা আবশ্যক। আর প্রত্যেক সালাতের পর বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ করবে যখনই উঁচু স্থানে আরোহণ করবের বা নিম্ন ভূমিতে অবতরণ করবে অথবা কোন কাফেলা দেখবে অথবা ঘুম থেকে জাগ্রত হবে তখন বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে। আর যখন মক্কাতে পেঁৗছবে প্রথমে মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে। যখন মসিজিদে হারাম দেখবে তখন “আল্লাহু আকবার” তাকবীর বলবে এবং “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করবে। অথঃপর তাকবীর ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদের অভিমূখী হবে। এবং যদি সক্ষম হয় তাহলে তাতে চুমু খাবে। আর যদি সক্ষম না হয় তাহলে কোন কিছু দ্বারা পাথরটিকে ইশারা দ্বারা চুমু খাবে। অতঃপর হাজরে আসওয়াদের ডান দিক দিয়ে তাওয়াফ শুরু করবে এবং সাত চক্কর দিয়ে বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করবে। প্রথম তিন চক্করে রমল করবে। বাকী চক্কর গুলো ধীরস্থিরভাবে করবে। আর হাতীমে কা’বার বাইরের অংশকে শামিল করে তাওয়াফ করবে। যখনই হাজরে আসওয়াদের পার্শ্বদিয়ে অতিক্রম করবে তখনই হাজরে আসওয়াদে চুমু খাবে। আর চুমু খেয়েই তাওয়াফ সমাপ্ত করবে। অতঃপর সাফা পাহাড়ে যাবে এবং তার উপর উঠবে। অতঃপর কিবলামূখী হয়ে তাকবীর ও যিকির করতে থাকবে এবং দুরূদ শরীফ পড়বে এবং আল্লাহ তাআলার নিকট দু’আ করবে। অতঃপর সাফা থেকে অবতরণ করে মারওয়া পর্বতের দিকে রওয়ানা হবে এবং মারওয়া পর্বতে আরোহণ করবে। তারপর সাফাতে যেরূপ করেছে মারওয়াতে তদ্রুপ করবে। এভাবে এক চক্কর শেষ হবে। অতঃপর সাফার দিকে ফিরে যাবে। সেখান থেকে মারওয়ার দিকে এমনিভাবে সাত চক্কর পূর্ণ করবে। সাত চক্করের প্রতিটি চক্করে যখন সমতল ভূমিতে পেঁৗছবে তখন সবুজ খুঁটি দুইটির মধ্যবর্তী স্থলে সজোরে দেঁৗড়াবে। হজ্জের প্রথম দিন:— (সুন্নাত) ইহরাম বাধা অবস্থায় যিলহজ্জের ৮ তারিখে মক্কায় ফজরের নামায আদায় করে মিনার উদ্দেশ্য রওয়ানা হবে তারপর সেখানে অবস্থান করে ঐ রাত্রিটি সেখানে অতিবাহিত করবে। হজ্জের দ্বিতীয় দিন:— উকুফে আবাফাহ (ফরজ) যিলহজ্জের ৯ তারিখ তথা আরাফার দিন সূর্য উদয়ের পর মিনা হতে আরাফার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। সেখানে অবস্থান করে “আল্লাহু আকবার” ও “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” যিকির ও হুজুর (সা:)—এর অধিক পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। নিজের জন্য দু’আ করবে। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পর ইমাম যোহরের ওয়াক্তে এক আযান ও দুই ইকামতের মাধ্যমে যোহর ও আসরের নামায পড়বে। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতেই অবস্থান করবে। অতঃপর মক্কায় ফিরে আসবে এবং মুযদালিফায় অবতরণ করববে। কুরবানীর রাতটি সেখানে কাটাবে্ অতঃপর ইমাম এক আযান ও এক ইকামতে ইশার ওয়াক্তে মাগরিব ও ইশার নাময পড়াবে। তারপর যিলহজ্জের ১০ তারিখে যখন সূর্য উদিত হবে অর্থাৎ কুরবানীর দিন ফজরের ওয়াক্তের শুরু ভাগেই ইমাম লোকজনকে নিয়ে ফজরের নামায পড়বেন। অতঃপর তিনি ও তার সাথের লোকজন সেখানে অবস্থান করে দোয়া করবে। তারপর সূর্যোদয়ের পূর্বে ফিরে আসবে। অতঃপর যখন জামরাতুল আকাবা অর্থাৎ পাথর নিক্ষেপ করার তৃতীয় স্থানে যাবে তখন সাতটি পাথর নিক্ষেপ করবে। প্রথম পাথরটি নিক্ষেপ করার সময় তালবিয়া পড়বে। অতঃপর যখন ইচ্ছে যবেহ করবে। তারপর মাথার চুল মুন্ডাবে বা চুলের আগা ছাটবে। তারপর কুরবানীল তিন দিনের ভিতরে ভিতরে মক্কায় যাবে যাতে তাওয়াফে যিয়ারত করতে পারে। এরপর মিনায় ফিরে যাবে এবং সেখানে অবস্থান করবে। ১১ তারিখের সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পর তিনটি পাথর নিক্ষেপ করবে। মসজিদুল খাইফের নিকটস্থ পাথর নিক্ষের স্থানটি থেকে পাথর নিক্ষেপ করবে। সেখানে সাতটি নিক্ষেপ করবে। প্রতিটি পাথর নিক্ষেপ করার সময় তাকবীল বলবে। এরপর সেখানে অবস্থান করবে এবং দু’আ করবে। অতঃপর মধ্যম আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করবে এবং সেখানে অবস্থান করবে। তারপর সর্বশেষ পাথর নিক্ষেপের স্থানে পাথর নিক্ষেপ করবে। কিন্তু সেখঅনে দাঁড়াবে না । এরপর ১২ তারিখে যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়বে তখন পাথর নিক্ষেপের তিনটি স্থানেই পূর্বানুরূপে পাথর নিক্ষেপ করবে। পাথর নিক্ষেপের দিনটি মিনাতে রাত্রি যাপন করবে। অতঃপর মক্কার দিকে রওয়ানা হবে এব মুহাসসাব সায়ী ব্যতিত সাত চক্কর তাওয়াফ করবে । এ তাওয়াফের নাম তাওয়াফে বিদা’। একটাকে তাওয়াফে সদরও বলা হয়। তাওয়অফের পর দুই রাকাত নামায পড়বে। তারপর যমযমের নিকট যাবে এবং দাঁড়িয়ে যমযমের পানি পান করবে। তারপর মূলতাযামে ৬৯ যাবে এবং আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করবে। ইচ্ছামত দু’আ করবে। এরপর যখন নিজের পরিবার পরিজনের প্রতি ফিরে আসাতে ইচছা করবে তখন বাইতুল্লাহর বিচ্ছেদ কান্নাকাটি ও আফসোস প্রকাশ করে ফিরবে।

হজরে আসওয়াদ ও বাইতুল্লাহ শরীফের দাওয়াজার মধ্যবর্তী স্থানকে মূলতাযাম বলা হয়। উল্লেখ্য যে, মক্কা শরীফে যে সমস্ত জায়গায় দু’আ কবুল হয় তন্মধ্যে মুলতাযাম অন্যতম। (ইবনে মাজাহ ২১২/২৯৬২)

১। কিরান হজ্জ

কিরান শব্দের আভিধানিক অর্থ: দুইটি বস্তু একত্রিত করা। কিরান—এর পারিভাষিক অর্থ মীকাত থেকে একত্রে হজ্জ ও উমরার উহ্রাম বাঁধা। হানাফী মাযহাব মতে, কিরান হজ্জ তামুত্তু হজ্জ থেকে উত্তম। আর তামাত্তু হজ্জ ইফরাদ হজ্জ হতে উত্তম। ইহরাম বাঁধার সময় কিরান হজ্জজ আদয়কারীর জন্য এই শব্দগুলো বলা সুন্নাত:

এরপর তালবিয়া পাঠ করবে। তারপর কিরান হজ্জ আদায়কারী যখন মক্কাতে প্রবেশ করবে, তখন প্রথমে সাত চক্কর তাওয়াফে উমরা পালন করবে। এই তাওয়াফের কেবল প্রথম তিনটি চক্করে রমল করবে। এরপর দুই রাকাআত তাওয়াফের নামায পড়বে। তারপর সাফা ও মারওয়া পর্বতে সায়ী করবে এবং সবুজ দু’টি খুটির মাঝে সায়ী করবে এবং সাত চক্কর পূর্ণ করবে। এসক হল উমরার কাজ। তারপর হজ্জের কাজ শুরু করবে। সুতরাং প্রথমে হজ্জের জন্য তাওয়াফে কুদুম করবে। তারপর হজ্জের কাজ শুরু করবে। সুতরাং প্রথমে হজ্জের জন্য তাওয়াফে কুদুম করবে। তারপর হজ্জের যাবতীয় কাজ পুরোপুরিভাবে পালন করবে। যেমনটি ইতোপূর্বে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। কুরবানীর দিন পাথর নিক্ষেপের তৃথীয় স্থানে পাথর নিক্ষেপের পর বকরী যবেহ করা অথবা উটের এক সপ্তামাংশের কুরবানী দেওয়া কিরান হজ্জ পালনকারীর জন্য ওয়াজিব। কেউ যবেহের জন্তু না পেলে বা সমর্থ্য না থাকলে সে কুরবানীর দিবসের পূর্বে তিনটি রোযা রাখবে এবং হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে অবসর হওয়ার পর সাতটি রোযা রাখবে। যদি চায় তাহলে তাশরীকের দিনগুলোর পর মক্কাতে রোযা রাখবে অথবা নিজের পরিবারের নিকট ফিরে এসে রোযা রাখবে।

২। তামাত্তু হজ্জ

হজ্জে তামাত্তু করার নিয়ম হচ্ছে এই যে, হজ্জ পালনেচ্ছু ব্যক্তি মীকাত থেকে কেবল উমরার ইহরাম বাঁধবে এবং ইহরামের উদ্দেশ্য দুই রাকাআত নামায পড়ার পর বলবে—

অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি উমরা পালন করার ইচ্ছা করছি, সুতরাং আপনি আমার জন্য উমরা পালন সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন।” তারপর তালবিয়া পড়বে। এরপর মক্কায় পেঁৗছবে এবং উমরার উদ্দেশ্য তাওয়াফ করবে। তাওয়াফের প্রথম চক্করে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবে এবংউমরার উদ্দেশ্যে তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করবে। তারপর দুই রাকাত তাওয়াফের নাময পড়বে। তারপর সাফা ও মারওয়া পর্বতে সাত চক্কর সায়ী করবে। এরপর মাথা মুন্ডাবে বা চুল ছাটবে এবং ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে। এ নিয়ম তখন যখন সাথে কুরবানীর কোন জন্তু নিয়ে না যাবে। যদি কুরবানীর জন্তু নিয়ে থাকে তাহলে উমরা থেকে হালঅল হতে পারবে না। এরপর যখন যিলহজ্জের ৮ তারিখ হবে তখন হারাম শরীফ থেকে হজ্জের কাজগুলো পূর্ণ করবে। কুরবানীর দিবসে পাথর নিক্ষেপের তৃতীয় স্থানে পাথর নিক্ষেপের পর বকরী অথবা উটের এক সপ্তমাংশ কুরবানী করা আবশ্যক। যদি বকরী বা উটের এক সপ্তমাংশ কুরবানী করতে সামর্থ না থাকে তাহলে কুরবানীর দিনের পূর্বে তিন দিন এবং হজ্জের কার্য সম্পাদনের পর সাত দিন রোযা রাখবে। কিন্তু যদি এমন হয় যে, কুরনানী দিবস এসে গেল অথচ রোযা তিনটি রাখেনি। তবে তার জন্য কুরবানী ছাড়া কোন গতি নেই। অর্থাৎ এর পরিবর্তে রোযা রাখা বা সদকা প্রদান করলে চলবে না।

তাওয়াফের প্রথম চক্করের দু’আ

سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَۤا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ اَكْبَرُ, وَلَاحَوْلَ وَلَاقُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْمِ ـ وَالصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِه وَسَلَّمَ ـ اللّٰهُمَّ اِيْمَانًا بِكَ وَتَصْدِيْقًاۢ بِكِتَابِكَ وَوَ فَآءًۢبعَهْدِكَ وَاتِّبَاعًالِّسُنَّةِ نَبِيِّكَ وَحَبِيْبِكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ـ اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَسْئَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ وَالْمُعَافَاةَ الدَّآئِمَةَ فِىْ الدِّيْنِ وَالدُّنْيَا وَالْاٰ خِرَةِ, وَالْفَوْزَ بِالْجَنَّةِ , وَالنَّجَاةَ مِنَ النَّارِ

উচ্চারণ:সুব্হানাল্লাহি ওয়াল্হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম। ওয়াস্ সালাতু ওয়াস্সাল্লামু আলা রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহুম্মা ঈমানাম বিকা ওয়া তাসদীকাম বিকিতাবিবা ওয়া—ওয়াফাআম বিআ’হ্দিকা ওয়া ইত্তিবাআ’ল লিসুন্নাতি নাবিয়্যিকা ওয়া হাবীবিকা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল আ’ফ্ওয়া ওয়াল আ’ফিয়াতা ওয়াল মুয়াফাতাদ্ দা—ইমাতা ফিদ্দীনি ওয়াদ্দুন্ইয়া ওয়াল্ আখিরাতি, ওয়াল ফাওযা বিল্জান্নাতি ওয়া নাজাতা মিনান্ নার।

অর্থ:আল্লাহ্ পাক—পবিত্র এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্রই জন্য; আল্লাহ্ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই। আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ। মহামহিম আল্লাহ্র অনুগ্রহ ছাড়া ভাল কাজ করারও কোন ক্ষমতা নেই এবং মন্দ থেকে বেঁচে থাকারও কোন উপায় নেই। আর দুরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর প্রতি এবং তাঁর আল—ওয়ালাদের প্রতি। হে আল্লাহ! আমি তোমাকেই মা’বুদ স্বাীকার করছি এবং তোমাকেই সত্য জেনেছি এবং তোমার কিতাবকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি এবং তোমার নবী ও প্রিয় হাবীব আমাদের নেতা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম— এর সুন্নাতের অনুসরণ করে তোমার নিকট দু’আ ওয়াদা পালন করেছি। হে আল্লাহ! তোমার ক্ষমার দরজা আমার জন্যসব সময় খোলা রাখ এবং দুনিয়া ও আখিরাতে আমাকে মঙ্গল দান কর। জান্নাত দান করে আমাকে সাফল্য প্রদান কর এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাকে রক্ষা কর।

প্রত্যেক চক্করে রুকনে ইয়ামানী থেকে হাজরে আসাওয়াদ পর্যন্ত যেতে নিম্নোক্ত দু’আ পড়–ন (সুন্নাত)।

رَبَّنَۤا اٰتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةًوَّفِى الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ , وَاَدْخِلْنَا الْجَنَّةَ مَعَ الْاَ بْرَارِ, يَا عَزِيْزُ يَاغَفَّارُ يَارَبَّ الْعَالَمِيْنَ ـ

উচ্চরণ:রাব্বনা আতিনা ফিদ্ দুন্ইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবান্নার, ওয়া আদ্খিলনাল জান্নাত মাআল আব্রার। ইয়া আযীযু, ইয়া গাফ্ফারু, ইয়া রাব্বাল আলামীন।

অর্থ:হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দাও এবং আখেরাতেও কল্যাণ দাও। আর আমাদেরকে দোজখের আজাব থেকে রক্ষা কর এবং নেক লোকদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করাও। হে মহাপরাক্রমশালী! হে ক্ষমাশীল। হে বিশ্ব প্রতিপালক!

তাওয়াফের দ্বিতীয় চক্করের দু’আ

اَللّٰهُمَّ اِنَّ هٰذَا الْبَيْتَ بَيْتُكَ, وَالْحَرَمَ حَرَمُكَ, وَالْاَمْنَ اَمْنُكَ, وَالْعَبْدَ عَبْدُكَ , وَاَنَا عَبْدُكَ وَاِبْنُ عَبْدِكَ, وَهٰذَا مَقَامُ الْعَآئِذِبِكَ مِنَ النَّارِ, فَحَرِّمْ لُحُوْمَنَا وَبَشَرَتَنَا عَلَى النَّار ـ

(اَللّٰهُمَّ حَبِّبْ اِلَيْنَا الْاِيْمَانَ وَزَيِّنْهُ فِىْ قُلُوْبِنَا, وَكَرِّهْ اِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَ وَاجْعَلْنَا مِنَ الرَّاشِدِيْنَ ـ اَللّٰهُمَّ قِنِىْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ ـ

اَللّٰهُمَّ ارْزُقْنِى الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ ـ )

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না হাযাল্ বাইতা বাইতুকা, ওয়াল্ হারামা হারামুকা, ওয়াল্ আম্না আম্নুকা, ওয়াল আব্দা আব্দুকা, ওয়া আনা আব্দুকা ওয়াব্নু আবদিকা, ওয়া হাযা মাকামূল আয়িজিবিকা মিনান্নার। ফাহার্রিম লুহুমানা বাশারাতানা আ’লান্ নার। আল্লাহুম্মা হাব্বিব্ ইলাইনাল্ ঈমান ওয়া যায়্যিন্হু ফী কুলূবিনা, ওয়া কাররিহ্ ইলাইনাল কুফ্রা ওয়াল ফুসূক্বা ওয়াল ইস্ইয়ানা, ওয়ায্আলনা মিনার রাশিদীন। আল্লাহুম্মা কিনী আজাবাকা ইয়াওমা তাবআসু ইবাদাকা—আল্লাহুম্মার যুকনিল জান্নাতা বিগাইরি হিসাব।

অর্থ:হে আল্লাহ! এই ঘর তোমারই ঘর। এ হারাম তোমারই হারাম। এর নিরাপত্তা তোমারই প্রদত্ত নিরাপত্তা। এখানের বাসিন্দাগণ তোমারই বান্দা।আমিও তোমারই বান্দা এবং তোমারই বান্দার সন্তান। দোজখের আগুন হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাওয়ার এটাই যে প্রকৃষ্ট স্থান। অতএব, তুমি আমাদের দেহের গোশ্ত ও চর্মকে দোজখের আগুন থেকে হারাম করে দাও। হে আল্লাহ্! ঈমানকে আমাদের নিকট প্রিয়তর করে দাও এবং আমাদের অন্তরসমূহে একে আকর্ষণীয় করে তোল। কুফরী, অবাধ্যতা ও অপরাধ প্রবণতার প্রতি আমাদের অন্তরসমূহে ঘৃণার সঞ্চার কর এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত লোকদের অন্তর্ভূক্ত করে দাও। হে আল্লাহ! যেদিন তুমি তোমার বান্দাগণকে বিচারের জন্য সববেত করবে, সেদিনের শাস্তি হতে আমাকে রক্ষা কর। হে আল্লাহ! আমাকে বিনা হিসাবে বেহেশ্ত নসিব কর।

তাওয়াফের তৃতীয় চক্করের দু’আ

اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الشَّكِّ وَالشِّرْكِ وَالشِّقَاقِ وَالنِّفَاقِ وَسُوْٓءِ الْاَخْلَاقِ وَسُوْٓءِ الْمَنْظَرِ وَالْمُنْقَلَبِ فِى الْمَالِ وَالْاهْلِ وَالْوَلَدِـ اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَسْئَلُكَ رِضَاكَ وَالْجَنَّةَ وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ سَخَطِكَ وَالنَّارِ ـ (اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَعُوْذُبِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَاوَالْمَمَاتِ ـ )

উচ্চারণ:আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাশ্ শাক্কি ওয়াশ্ শিরকি ওয়াশ্ শিক্বাক্বি ওয়ান নিফাকি ওয়া সূ—ইল আখলাক্বি, ওয়াসূ—ইল মান্যারি ওয়াল্ মুনক্বালাবি ফিল মালি, ওয়াল আহ্লি, ওয়াল ওয়ালাদ্। আল্লাহুম্মা ইন্নি আছআলুকা রিদাকা ওয়াল জান্নাতা ওয়া আউজুবিকা ছাখাত্বিকা ওয়ান্নার। আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন্ ফিত্নাতিল ক্বাবরি ওয়া আউযুবিকা মিন ফিত্নাতিল্ মাহ্ইয়া ওয়াল্ মামাত।

অর্থ:হে আল্লাহ্! আমি আমার ঈমানের মধ্যে সংশয়—সন্দেহ, শির্কী, বিভেদ—বিচ্ছিন্নতা, চরিত্রভ্রষ্টতা, কুদৃষ্টি ও মন্দ দৃশ্য দর্শন এবং বাড়ী ফিরে আমার ধন—সম্পদ ও পরিবার—পরিজন, সন্তানাদির বিনাশ দর্শন হতে তোমার দরবারে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আল্লাহ্! তোমার সন্তুষ্টি এবং বেহশ্তই তোমার কাছে কাম্য। তোমার অসন্তুষ্টি এবং জাহান্নামের আগুন হতে তোমার দরবারে আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ্। কবরের মহাপরীক্ষা এবং জীবন ও মৃত্যুর যাবতীয় বিপর্যয় হতে তোমার দরবারে আশ্রয় চাচ্ছি।

চতুর্থ চক্করের দু’আ

اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ حَجًّا مَّبْرُوْرًا وَّسَعْيًا مَّشْكُوْرًا, وَذَنْۢبًا مَّغْفُوْرًا, وَعَمَلًاصَالِحًامَّقْبُوْلًا, وَتِجَارَةًلَّنْ تَبُوْرَ ـ يَاعَالِمَ مَافِى الصُّدُوْرِ اَخْرِجْنِىْ يَا اللهُ مِنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ ـ( اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَسْئَلُكَ مُوْجِبَاتِ رَحْمَتِكَ وَعَزّٓائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَالسَّلَامَةَ مِنْ كُلِّ اِثْمٍ وَّالْغَنِيْمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ, وَالْفَوْزَبِالْجَنَّةِ وَالنَّجَاةَ مِنَ النَّارِ ـ رَبِّ قَنِّعْنِىْ بِمَا رَزَقْتَنِىْ, وَبَارِكْ لِىْ فِيْمَا اَعْطَيْتَنِىْ , وَاخْلُفْ عَلٰى كَلِّ غَٓائِبَةٍ لِّىْ مِنْكَ بِخَيْرٍ ـ )

উচ্চারণ:আল্লাহুম্মাজ্আল্হু হাজ্জাম্ মাবরূরাঁও ওয়া সা’ইয়াম মাশকূরান, ওয়া যাম্বাম মাগফূরান, ওয়া আমালান্ সালিহান মাকবুলান, ওয়া তিজারাতাল্ লান্তাবূর। ইয়া আ’লিমা মা ফিস্সুদূরি, আখ্রিজ্নী ইয়া আল্লাহু মিনাজ্জুলুমাতি ইলান্ নূর। আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মুজিবাতি রাহ্মাতিকা ওয়া আযা—ইমা মাগ্ফিরাতিকা ওয়াস্—সালামাতা মিন্ কুল্লি ইসমিন ওয়াল গানীমাতা মিন কুল্লি বিররিন ওয়াল ফাওযা বিল্জান্নাতি ওয়ান নাজাতা মিনান্নার। রাব্বি ক্বান্নি’নী বিমা রাযাক্—তানী, ওয়া বারিক্লী ফিমা আ’ত্বাইতানী, ওয়াখ্লুফ্ আ’লা কুল্লি গা—ইবাতিল্ লী মিন্কা বিখায়ের।

অর্থ:হে আল্লাহ্! আমার এ হজ্জকে মাকবুল হজ্জ বানিয়ে দাও। আমার এ প্রচেষ্টাকে গ্রহণযোগ্য করে নাও। আমার গুনাহ্রাশি মাফ করে দাও। সৎকর্মসমূহ কবূল করে নাও এবং আমার ব্যবসাকে ক্ষতিহীন ব্যবসাতে পরিণত কর। হে অন্তর্যামী! হে আল্লাহ! আমাকে ওমরাহীর অন্ধকার হতে বের করে হিদায়েতের আলোকে আলোকোজ্জ্বল কর। হে আল্লাহ্! আমি তোমার দরবারে রহমত ও মাগফিরাতের উপকরণ চাচ্ছি। সকল প্রকার গুনাহ্ হতে বাঁচার এবং সর্বপ্রকার নেকি হতে উপকৃত হওয়ার তাওফীক আমি তোমার দরবারে চাচ্ছি। জান্নাত লাভে সাফল্য এবং দোজখ হতে মুক্তির দরখাস্ত পেশ করছি। হে পরওয়ারদিগার!তুমি যে রিযিক আমাকে দান করেছ, তাতেই আমকে তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট রাখ এবং তোমার প্রদত্ত নিয়ামতরাজিতে আমাকে বরকত দাও। আমার সব অপূর্ণতাকে মঙ্গল দ্বারা পূর্ণ করে দাও।

তাওয়াফের পঞ্চম চক্করের দু’আ

اَللّٰهُمَّ اَظِلَّنِىْ تَحْتَ ظِلِّ عَرْشِكَ يَوْمَ لَاظِلَّ اِلَّا ظِلُّكَ, وَلَا بَاقِىَ اِلَّا وَجْهُكَ, وَاسْقِنِىْ مِنْ حَوْضِ نَبِيِّكَ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَرْبَةً هَنِيْئَةً مَّرِيْئَةً لَّا اَظْمَاءُ بَعْدَهَۤا اَبَدًا ـ

(اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَسْئَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَئَلَكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ سَيِّدُنَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا اسْتَعَاذَكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ سَيِّدُنَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ـ اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَسْئَلُكَ الْجَنَّةَ وَنَعِيْمَهَا وَمَا يُقَرِّبُنِىْۤ اِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ اَوْفِعْلٍ اَوْعَمَلٍ ـ وَاَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ وَمَا يُقَرِّبُنِىْۤ اِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ اَوْفِعْلٍ اَوْعَمَلٍ ـ)

উচ্চারণ:আল্লাহুম্মা আযিল্লানী তাহ্তা যিল্লি আরশিকা, ইয়াওমা লা যিল্লা ইল্লা য়িল্লুকা, ওয়া লা বাক্বিয়া ইল্লা ওয়াজ্হুকা, ওয়াস্ক্বিনী মিন্ হাওদ্বি নাবিয়্যিকা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা শারবাতান্ হানী আতাম্১। মারীআতাল লা নায্মাউ বা’দাহা আবাদা। আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্ আলুকা মিন্ খায়রি মা সাআলাকা মিন্হু নাবিয়্যুকা সায়্যিদুনা মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ওয়া আউযুবিকা মিন্ শার্রি মাস্তায়াকা মিন্হু নাবিয়্যুকা সায়্যিদুনা মুহাম্মাদুন্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল্ জান্নাতা ওয়া না’ঈমাহা ওয়ামা ইউকার্রিবুনী ইলাইহা মিন ক্বাওলিন আও ফি’লিন আও আ’মালিনা ওয়া আউজুবিকা মিনান্নার, ওয়া মা ইউক্বার্রিবুনী ইলাইহা মিন্ ক্বাওলিন্ আও ফি’লিন আও আ’মাল।

অর্থ:হে আল্লাহ! আমাকে ঐ দিন তোমার আরশের নিচে ছায়া দান করো, যে দিন তোমার আরশের ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না এবং তুমি ছাড়া কেউ টিকে থাকতে পারবে না। আমাকে তোমার নবী, আমাদের নেতা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর হাউজে কাউসার থেকে সেই পানীয় প্রদান করো, যে পানীয় পান করার পর আর কখনো পিপাসা লাগবে না। হেআল্লাহ্! তোমার নবী, আমাদের নেতা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার কাছে যেসব কল্যাণ ও মঙ্গল চেয়েছিলেন সেগুলো আমিও তোমার নিকট চাচ্ছি এবং যে অকল্যাণ হতে তোমার নবী (স.) । আশ্রয় চেয়েছিলেন সেগুলো হতে আমিও তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে বেহেশ্ত ও তার নিয়ামতসমূহ এবং বেহেশ্তের নিকটবর্তী করতে পারে এমন কথা কাজ ও আমালের তাওফীক চাচ্ছি এবং আমি তোমার কাছে দোজখ হতে এবং এমন কাজ, কথা ওআমল হতে আশ্রয় চাই যা আমাকে দোজখের নিকটবর্তী করবে।

তাওয়াফের ষষ্ঠ চক্করের দু’আ

اَللّٰهُمَّ اِنَّ لَكَ عَلَىَّ حُقُوْقًا كَثِيْرَةً فِيْمَا بَيْنِىْ وَبَيْنَكَ, وَحُقُوْقًا كَثِيْرَةً فِيْمَا بَيْنِىْ وَبَيْنَ خَلْقِكَ ـ اَللّٰهُمَّ مَاكَانَ لَكَ مِنْهَا فَاغْفِرْهُ لِىْ وَمَا كَانَ لِخَلْقِكَ فَتَحَمَّلْهُ عَنِّىْ وَاَغْنِنِىْ بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَبِطَا عَتِكَ عَنْ مَّعْصِيَتِكَ ,وَبِفَضْلِكَ عَنْ مَّنْ سِوَاكَ, يَاوَاسِعَ الْمَغْفِرَةِ ـ (اَللّٰهُمَّ اِنَّ بَيْتَكَ عَظِيْمٌ, وَوَجْهَكَ كَرِيْمٌ, وَاَنْتَ يَا اَللهُ حَلِيْمٌ كَرِيْمٌ عَظِيْمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّىْ ـ )

উচ্চারণ:আল্লাহুম্মা ইন্না লাকা আলাইয়্যা হুকূক্বান কাসীরাতান ফীমা বাইনী ওয়া বাইনাকা, ওয়া হুকূক্বান কাসীরাতান ফীমা বাইনী ওয়া বাইনা খলক্বিক। আল্লাহুম্মা মা কানা লাকা মিন্হা ফাগ্—ফিরহু লী ওয়ামা কানা লি খালক্বিকা ফাতাহাম্মাল্হু আ’ন্নী, ওয়া আগ্—নিনী বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া বিতাআতিকা আম্ মা’সিয়্যাতিকা ওয়া বিফাদলিকা আ’ম্মান্ সিওয়াকা, ইয়া ওয়াসিআল্ মাগফিরাহ্। আল্লাহুম্মা ইন্না বাইতাকা আযীম, ওয়া ওয়াজ্হাকা কারীম্ ওয়া আন্তা ইয়া আল্লাহু্ হালীমুন কারীমুন আযীমুন, তুহিব্বুল আফ্ওয়া ফা’য়ফু ‘আ’ন্নী।

অর্থ:হে আল্লাহ্! আমার প্রতি তোমার অর্পিত অনেক দায়—দায়িত্ব আছে, যা কেবল তোমার আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং আরো অনেক দায়—দায়িত্ব আমার ওপর রয়েছে, যা তোমার সৃষ্টি ও আমার মাঝে সীমাবদ্ধ। হে আল্লাহ্! আমার উপর তোমার যে হক আছে, তা ক্ষমা করে দাও এবং তোমার সৃষ্টির হকগুলো আদায়ের দায়িত্ব তুমিই গ্রহণ কর। তোমার হালাল দ্বারা তোমার হারাম হতে আমাকে মুক্ত রাখ তোমার আনুগত্যের মাধ্যমে আমাকে তোমার নাফরমানী হতে বাঁচাও। হে মহাক্ষমাশীল! তোমার অনুগ্রহ দ্বারা অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে আমাকে বাঁচাও। হে আল্লাহ্! নিশ্চয় তোমার ঘর অতিশয় মযার্দাবান এবং তুমি মহান ও দয়ালু। হে আল্লাহ! তুমি অতিশয় দয়ালু, সহনশীল ও মহান। তুমি তো ক্ষমা পছন্দ কর, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও।

তাওয়াফের সপ্তম চক্করের দু’আ

اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَسْئَلُكَ اِيْمَانًا كَامِلًا, وَيَقِيْنًا صَادِقًا, وَرِزْقًا وَاسِعًا, وَقَلْبًاخًاشِعًا, وَلِسًانًا ذَاكِرًا, وَرِزْقًا حَلٰلًا طَيِّبًا, وَتَوْبَةًنَّصُوْحًا, وَتَوْبَةً قَبْلَ الْمَوْتِ وَرَاحَةً عِنْدَ الْمَوْتِ, وَمَغْفِرَةً وَرَحْمَةً بَعْدَ الْمَوْتِ, وَالْعَفْوَ عِنْدَ الْحِسَابِ, وَالْفَوْزَ بِالْجَنَّةِ, وَالنَّجَاةَ مِنَ النَّارِ بِرَحْمَتِكَ يَا عَزِيْزُ يَا غَفَّارُ, رَبِّ زِدْنِىْ عِلْمًا وَّاَلْحِقْنِىْ بِالصَّالِحِيْنَ ـ

উচ্চারণ:আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ঈমানান্ কামিলান ওয়া ইয়াক্বীনান্ সাদিক্বান্ ওয়া রিযকান ওয়াসিআ’ন ওয়া কাল্বান্ খাশিআন, ওয়া লিসানান্ যা—কিরান্ ওয়া রিযকান হালালান্ তায়্যিবান, ওয়া তাওবাতান্ নাসূহান্ ওয়া তাওবাতান ক্বাবলাল মাওতি, ওয়া রাহাতান ইন্দাল্ মাওতি ওয়া মাগ্ফিরাতান ওয়া রাহ্মাতান বা’দাল মাউত, ওয়াল্ আফ্ওয়া ইনদাল্ হিসাবি, ওয়াল্ ফাওযা বিল্জান্নাতি ওয়ান্নাজাতা মিনান্ নার। বিরহ্মাতিকা ইয়া আযীযু, ইয়া গাফ্ফারু, রাব্বি যিদ্নী ইল্মাঁও ওয়া আল্হিক্বনী বিস্সালিহীন।

অর্থ:হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট পরিপূর্ণ ঈমান, সত্যিকারের বিশ্বাস, ভীত হৃদয়, যিকিরে নিমগ্ন জিহ্বা, সচ্ছল জীবিকা, পবিত্র ও হালাল রোজগার, সত্যিকারের তাওবা, মৃত্যুর পূর্বে তাওবা, মৃত্যুর সময়ে শান্তি, মৃত্যুর পরে ক্ষমা ও দয়া, বিচারের সময়ে মার্জনা, বেহশ্ত লাভের মাধ্যমে সাফল্য ও দোজখ হতে পরিত্রাণ চাচ্ছি। হে মহাপরাক্রমশীল ও ক্ষমাশীল! তোমার দয়ায় আমার দু’আ কবুল কর। হে আমার প্রতিপালক! আমার ই’ল্ম বাড়িয়ে দাও এবং সৎকর্মশীলগণের দলে আমাকে শামীল কর।

(এই সাত চক্করে এক তাওয়াফ হল। এরপর সম্ভব হলে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে, সম্ভব না হলে মসজিদে হারামের যে কোন স্থানে দু’রাকাত নামাজ পড়–ন এবং দোয়া করুন।)

প্রথম সায়ীর দু’আ (সাফা থেকে মারওয়া)

اَللّٰهُ اَكْبَرُ, اَللّٰهُ اَكْبَرُ, اَللّٰهُ اَكْبَرُ, اَللّٰهُ اَكْبَرُ كَبِيْرًا, وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ كَثِيْرًا, وَسُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ وَبِحَمْدِهِ الْكَرِيْمُ بُكْرَةًوَّ اَصِيْلًا, وَمِنَ اللَّيْلِ فَاسْجُدْلَه وَسَبِّحْهُ لَيْلًا طَوِيْلًا ـ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَه اَنْجَزَ وَعْدَه وَنَصَرَ عَبْدَه, وَهَزَمَ الْاَحْزَابَ وَحْدَه ـ لَاشَـْئَ قَبْلَه وَلَابَعْدَه , يُحْيِىْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ حَىُّ دَٓائِمٌ لَايَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا ـ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ ـ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَـْئٍ قَدِيْرٌ ـ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ , وَاعْفُ وَتَكَرَّمْ وَتَجَاوَزْ عَمَّا تَعْلَمُ, اِنَّكَ تَعْلَمُ مَالَا نَعْلَمُ اِنَّكَ اَنْتَ اللهُ الْاَعَزُّ الْاكْرَمُ, (رَبَّنَا نَجِّنَا مِنَ النَّارِ سَالِمِيْنَ غَانِمِيْنَ فَرِحِيْنَ مُسْتَبْشِرِيْنَ مَعَ عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَٓاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا, ذٰلِكَ الْفَضْلُ مِنَ اللهِ وَكَفٰى بِاللهِ عَلِيْمًا لَۤا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ حَقَّا حَقًّا لَۤا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ تَعَبُّدًا وَّرِقًا, لّۤا اِلٰهَ اِلَّا للهُ وَلَا نَعْبُدُ اِلَّۤا اِيَّاهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْكَرِهَ الْكٰفِرُوْنَ ـ

اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ ـ )

উচ্চারণ:আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার কাবীরাঁও ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাসিরাঁও ওয়া সুবহানাল্লাহিল আ’জীমি, ওয়া বিহামদিহিল কারীমু, বুকরাতাঁও ওয়া আসীলা, ওয়া মিনাল্লাইলি ফাস্জুদ্লা হু ওয়া ছাব্বিহ্হু লাইলান তাবীলা, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়া’দাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহ্যাবা ওয়াহদাহু—লা—শাইয়া ক্বাবলাহু ওয়া—লা বা’য়দাহু ইউহ্য়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুয়া হায়্যূন দায়িমান লাইয়ামূতু ওয়ালা ইয়ামূতু আবাদান, বি ইয়াদিহিল খায়রু, ওয়া ইলাইহিল মাছীরু, ওয়া হুওয়া আ’লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীরু, রাব্বিগফির ওয়ার্হাম ওয়া’ফু ওয়া তাকার্রাম ওযা তাজাওয়ায্ আম্মা তা’লামু। ইন্নাকা তা’লামু মা—লা, না’লামু ইন্নাকা আনতাল্লাহু আআ’যযুল আকরাম, রাব্বানা নাজ্জিনা মিনান্নারি সালিমীনা গানিমীনা ফারিহীনা মুসতাবশিরীনা মা’আ ইবাদিকাছ ছালিহীন মা’আল্লাজীনা আনআ’মাল্লাহু আ’লাইহিম মিনান্ নাবিয়্যীনাওয়াস সিদ্দীকীনা ওয়াশ শুহাদায়ি ওয়াস সালিহীনা। ওয়া হাসুনা উলা—য়িকা রাফীক্বা। জালিকাল ফাদ্বলু মিনাল্লাহি, ওয়া কাফা বিল্লাহি আ’লীমা। লাইলাহা ইল্লাল্লাহু হাক্কান হাক্কা, লাইলাহা ইল্লস্নাল্লাহু তা’আব্বুদাঁও ওয়া রিক্বান, লা—ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা, ওয়া লাও কারিহাল কাফিরূন।

ইন্নাস সাফা ওয়াল্ মার্ওয়াতা মিন শা’আয়িরিল্লাহি ফামান্ হাজ্জাল বাইতা আবি’তামারা ফালা জুনাহা ‘আলাইহি আঁই ইয়াত্তাউওয়াফা বি হিমা, ওয়া মান্ তাত্বাউওয়াআ’ খায়রান ফা ইন্নাল্লাহা শাকিরুন আ’লীম।

অর্থ:“আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ,আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই জন্যে। আল্লাহ্ মহান ও সীমাহীন প্রশংসা তাঁরই জন্যে। মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি দয়ালু আল্লাহর প্রশংসা বর্ণনার সাহায্যে সন্ধ্যা ও সকালে। রাতের কোন এক সময়ে উঠে তাঁর দরবারে সিজ্দা কর। আর দীর্ঘ রাত ধরে তাঁর পবিত্রতা বয়ান কর। আল্লাহ্ ছাড়া উপাস্য আর কেউ নেই। তিনি অদ্বিতীয়। তিনি ওয়াদা পালন করেছেন, তাঁর বান্দা (মুহাম্মদ সা:)—কে একাই তিনি সাহায্য করেছেন, আর পারাজিত করেছেন কাফির দলগুলোকে। তিনি অনাদি—অনন্ত। তিনিই জীবন দেন এবং মৃত্যু দেন। তিনি চিরজিব, অক্ষয়—অমর, তিনি কল্যাণময়, ফিরে যেতে হবে তাঁরই নিকট সকলকে আর সবকিছুর উপর তাঁর ক্ষমতা অপ্রতিহত। হেআমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর, রহম কর, মেহরবানী কর এবং সম্মানিত কর। আর আমাদের (গুনাহ) ক্ষমা করে দাও, নিশ্চয়ই তুমি জান, যা আমরা জানি না। নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশীল, মহা—সম্মানী। হে আমার প্রতিপালক! দোজখ হতে আমাদেরকে বাঁচাও। আমাকে নিরাপদ সফলকাম ও সানন্দে রেখ। তোমার সৎ বান্দাদের সঙ্গে যারা তোমার ইনআ’ম পেয়েছেন, অর্থাৎ নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও অন্যান্য নেক বান্দাদের সঙ্গে আমাদেরকেও রাখ। কারণ, তাঁরাই হচ্ছে উত্তম বন্ধু। এ কেবল আল্লাহর অনুগ্রহ; আল্লাহ্ খুব ভালভাবেই জানেন। সত্য মনে বলছি, উপাস্য আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই, একমাত্র আল্লাহ্ই আমাদের বন্দেগী আর গোলামী পাওয়ার যোগ্য। (স্বীকার করছি) আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করি না, সত্যিকার আনুগত্য শুধু তাঁরই জন্য যদিও কাফিররা তা পছন্দ করে না।

নিশ্চয়ই ‘সাফা’ ও মারওয়া’ আল্লাহতায়ালারনির্দেশনগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্জ বা উমরাহ্ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটির মধ্যে সায়ী করলে কোন দোষ নেই। আর কেউ স্বতঃস্ফুর্তভাবে নেকির কাজ করলে আল্লাহ্ তো পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।”

দ্বিতীয় সায়ীর দু’আ (মারওয়া থেকে সাফা)

اَللهُ اكْبَرُ, اَللهُ اكْبَرُ, اَللهُ اكْبَرُ, وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ لَۤا اِلٰهَ اِلَّا للهُ الْوَاحِدُ الْاَحَدُ الْفَرْدُ الصَّمَدُ الَّذِىْ لَمْ يَتَّخِذْ صَاحِبَةًوَّلَا وَلَدًاوَّلَمْ يَكُنْ لَّه شَرِيْكٌ فِى الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَّه وَلِىٌّ مِّنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيْرًا, اَللّٰهُمَّ اِنَّكَ قُلْتَ فِىْ كِتَابِكَ الْمُنَزَّلِ اُدْ عُوْ نِىْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ, دَعَوْنَاكَ رَبَّنَا فَاغْفِرْلَنَاكَمَۤا وَعَدْتَّنَا اِنَّكَ لَاتُخْلِفُ الْمِيْعَادَ,( رَبَّنَۤا اِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًايُّنَادِىْ لِلْايْمَانِ اَنْ اٰمِنُوْا بِرَبِّكُمْ فَاٰمَنَّا, رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَاذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْعَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْابْرَارِـ رَبَّنَا وَاٰبِنَا مَاوَعَدْتَّنَاعَلٰى رُسُلِكَ وَلَاتُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ, اِنَّكَ لَاتُخْلِفُ الْمِيْعَادَ ـ رَبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَاِلَيْكَ اَنَبْنَا وَاِلَيْكَ الْمَصِيْرُ ـ رَبَّنَا اغْفِرْلَنَا وَلِاِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَابِالْاِيْمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فَىْ قُلُوْ بِنَاغِلًّالِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَا اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ ـ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ, وَاعْفُ وَتَكَرَّمْ, وَتَحَاوَزْ عَمَّا تَعْلَمُ, اِنّكَ تَعْلَمُ مَا لَا نَعْلَمُ اِنَّكَ اَنْتَ الْاَعَزُّ الْاكْرَمُ ـ اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَاجُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ ـ )

উচ্চারণ:আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদু, লা—ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহিদাল ফারদুস সামাদুল্লাজী লাম ইয়াত্তখিয সাহিবাতাঁও ওয়ালা ওয়ালাদাঁও ওয়া লাম ইয়া কুল্লাহু শারীকুন ফিল মুলকি ওয়া লাম ইয়া ক্কুল্লাহু ওয়ালিয়্যূম মিনাজ জুল্লি ওয়া কাব্বিরহু তাকবীরা। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ক্বুলতা ফী কিতাবিকাল মানায্যালি উদ্’উনী আস্তাজিবলাকুম। দা’আওনাকা রাব্বানা ফাগরিলানা কামা আমারতানা, ইন্নাকা লা—তুখ্লিফুল মী’আদ। রাব্বানা ইন্নানা সামি’না মুনাদিয়াঁই ইউনাদী লিল ঈমানি আন আমিনু বিরাব্বিকুম ফা—আমান্না, রাব্বানা ফাগ্ফির্লানা জুনুবানা ওয়া কাফফির ‘আন্না সায়্যি আতিনা ওয়া অতাওয়াফ্ফানা মাআ’ল আবরার। রাব্বানা ওয়া আতিনা মা ওয়া আ’ত্তানা আ’লা রুসুলিকা ওয়ালা তুখযিনা ইয়াওমাল ক্বিয়ামতি ইন্নকা লা তুখলিফুল মী’আদ। রাব্বানা আলাইকা তাওয়াক্কালনা ওয়া ইলাইকা আনাবনা ওয়া ইলাইকার মাসীর। রাব্বানাগ ফির্লানা ওয়ালি ইখ্ওয়ানিনাল্লাজীনা সাবাক্বনা বিল ঈমান, ওয়াল তাজ’আল ফী ক্বলূবিনা গিল্লাল লিল্লাজীনা আমানূ, রাব্বানা ইন্নাকা রাউফুর রাহীম। রাব্বিগ ফির ওয়ারহাম, ওয়া’ফু ওয়া তাকার্রাম, ওয়া তাজাওয়ায্ আ’ম্মা তা’লামু ইন্নাকা তা’লামু মা লা না’লামু ইন্নাকা আন্তাল আয়া’য্যুল আকরাম।

ইন্নাস সাফা ওয়াল্ মারওযাতা মিন শা’আয়িরিল্লাহি ফামান্ হাজ্জাল বাইতা আবি’তামার ফালা জুনাহা ‘আলাইহি আই ইয়াত্তাউওয়াফা বি হিমা, ওযা মান্ তাতাউওয়া’আ খায়রান ফা ইন্নাল্লাহা শাকিরুন ‘আলীম।

অর্থ:“আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই জন্যে। মা’বুদ একমাত্র আল্লাহ! যিনি এক ও অদ্বিতীয়, একক ও স্বয়ং সম্পূর্ণ, যিনি কাউকে পত্নীও বানাননি, পুত্রও বানাননি। বিশ্ব পরিচালনায় তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর কোন দুর্বলতা নেই, যার জন্য সাহায্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে। তুমি তাঁর মহাত্ম ভাল করে বর্ণনা কর। হে আল্লাহ্! তোমার প্রেরিত কিতাবে তুমি বলেছ, “আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব”। আমরা তোমাকে ডাকছি। হে আল্লাহ! আমাদের গুনাহ্ মাফ কর, আর তুমি তো ওয়াদা খিলাফ কর না। হে আমাদের প্রতি পালক! আমরা একজন ঘোষণাকারীকে ঈমানের আহ্বান করে বলতে শুনেছি, “তোমাদের প্রভুর ওপর ঈমান আন”। তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের গুনাহ্ মাফ কর, আমাদের সব অন্যায়—অনাচার মোচন করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও সৎ লোকদের সঙ্গে, আর তা—ই আমাদেরকে দান কর—যার ওয়াদা করেছ তুমি তোমার নবী—রাসূলগণের নিকট, আর লজ্জিত করো না আমাদেরকে কিয়ামতের দিনে; নিশ্চয় তুমি ওয়াদা ভঙ্গ কর না। হে আমাদের প্রতিপালক! ভরসা করছি শুধু তোমারই ওপর, আর এসেছি তোমারই কাছে এবং তোমার কাছেই ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! ক্ষমা কর আমাদেরকে আর আমাদেরকে সেই ভাইদেরকে যারা ঈমানের ব্যাপারে আমাদের অগ্রবর্তী! বিদ্বেষ দিও না আমাদের অন্তেরে তাদের প্রতি, যারা ঈমান এনেছে। হে আল্লাহ! তুমি সত্যই বড় দয়ালু, করুণাময়। হে আমার প্রতিপালক। আমাকে ক্ষমা কর, রহম কর, মেহেরবানী কর এবং সম্মানিত কর। আর তুমি আমাদের (গুনাহ) ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি জান, যা আমরা জানি না। নিশ্চয়ই তুমি মহাপরাক্রমশালী মহা—সম্মানী।”

“নিশ্চয়ই ‘সাফা ও মারওয়া’ আল্লাহতায়ালার নিদর্শনগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্জ বা উমরা পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটির মধ্যে সায়ী করলে কোন দোষ নেই। আর কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেকির কাজ করলে আল্লাহ্ তো পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।”

তৃতীয় সায়ীর দু’আ(সাফা থেকে মারওয়া)

اَللهُ اكْبَرُ, اَللهُ اكْبَرُ, اَللهُ اكْبَرُ, وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ, رَبَّنَۤا اَ تْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا وَاغْفِرْلَنَا اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَــْئٍ قَدِيْرٌ ـ اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْۤ اَسْئَلُكَ الْخَيْرَ كُـلَّه عَاجِلَه وَاٰ جِلَه وَاَسْتَغْفِرُكَ لِذَنۢبِـىْ وَاَسْئَلُكَ رَحْمَتَكَ يَۤا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ, رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَاعْفُ وَتَكَرَّمْ وَتَجَاوَزْ عَمَّاتَعْلَمُ اِنَّكَ تَعْلَمُ مَا لَا نَعْلَمُ اِنَّكَ اَنْتَ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُ ,رَبِّ زِدْنَىْ عِلْمًا وَّ لَاتُزِغْ قَلْبِىْ بَعْدَ اِذْهَدَ يْتَنِىْ وَهَبْ لِىْ مَنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً اِنَّكَ اَنْتَ الْوَ هَّابُ ـ( اَللّٰهُمَّ عَافِنِىْ فِىْ سَمْعِىْ وَبَصَرِىْ لَۤااِلٰهَ اِلَّۤا اَنْتَ ـ اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لَۤا اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّىْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ ـ اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْۤ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ ـ اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْۤ اَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوْبَتِكَ وَاَعُوْذُبِكَ لَۤا اُحْصِىْ ثَنَۤاءً عَلَيْكَ اَنْتَ كَمَۤا اَثْنَيْتَ عَلٰـى نَفْسِكَ فَلَكَ الْحَمْدُ حَتّٰـى تَرْضٰـى ـ اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِاعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ ـ)

উচ্চারণ:আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদু, রাব্বনা আত্মিম লানা নূরানা ওয়াগ্ফির্লানা। ইন্নকা ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল খাইড়া কুল্লাহু ’আজিলাহু ওয়া আজিলাহু ওয়া আসতাগফিরুকা লি জাম্বী ওয়া আসআলুকা রাহমাতাকা ইয়া আরহামার রাহিমীন। রাব্বিগ্ফির ওয়ারহাম ওয়া’ফু ওয়া তাকার্রাম ওয়া তাজাওয়ায ‘আম্মা তা’লামু ইন্নাকা তা’লামু মা লা না’লামু ইন্নাকা আন্তাল আ’আয্যুল আকরাম। রাব্বি যিদ্নী ‘ইল্মান ওযালাতুযিগ ক্বালবী বা’দা ইজ হাদাইতানী, ওয়াহাব্লী মিল্লাদুনকা রহ্মাতান। ইন্নাকা আন্তাল্১। ওয়াহাব্ আল্লাহুম্মা ‘আ’ফিনী ফী সাময়ী ওয়া বাসারী লাইলাহা ইন্না আনতা আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযবিকা মিল আজাবিল ক্বাবরি লাইলাহা ইন্না আন্তা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ জোয়ালেমীন, আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজুবিকা মিনাল কুফ্রি ওয়াল ফাকরি, আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজু বিল রিদ্বাকা মিন সাখাত্বিকা ওয়া বি মু’আফাতিকা মিন ‘উক্বোবাতিকা। ওয়া আ’উযুবিকা মিনকা লা—উহ্সী সানাআন আলাইকা আন্তা কামা আছনাইতা ‘আলা নাফসিকা। ফালাকাল্ হামদু হাত্তা তার্দ্বা।

ইন্নাস সাফা ওয়াল্ মার্ওয়াতা মিন শা’আয়িরিল্লাহি ফামান্ হাজ্জাল বাইতা আবি’তামারা ফালা জুনাহা ‘আলাইহি অঁাই ইয়াত্তাউওয়াফা বি হিমা, ওয়া মান্ তাতাউওয়া’আ খায়রান ফা ইন্নাল্লাহা শাকিরুন ‘আলীম।

অর্থ:“আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ,আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ,আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই জন্যে। হে আল্লাহ! আমদের (ঈমানে) নূরকে পরিপূর্ণ কর আর ক্ষমা কর আমাদেরকে, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশক্তিমান। হে আল্লাহ্! তোমার নিকট পার্থনা করছি সব রকম কল্যাণের জন্য, যা তাড়াতাড়ি আসে তাও, যা দেরিতে আসে তাও। মার্জনা চাচ্ছি আমার গুণাহের, আর ভিক্ষা চাচ্ছি তোমার রহমতের। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর, রহম কর, মেহেরবানী কর এবং সম্মানিত কর। আর আমাদের (গুনাহ্) ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি জান, যা আমরা জানি না। নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহ মহাপরাক্রমশীল, মাহ—সম্মানী। হে আল্লাহ্! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দাও। বিভ্রান্ত করো না আমার অন্তরকে সত্য পথ দেখানোর পর, দান কর আমাকে তোমার খাস রহমত, নিশ্চয়ই তুমি মহান দাতা। হে আল্লাহ! নির্দোষ কর আমার কান আর চক্ষুকে। উপাস্য তুমি ব্যতীত আর কেউ নাই। হে আল্লাহ্! আমি আশ্রয় চাচ্ছি তোমার নিকট কবরের আজাব হতে, উপাস্য তুমি ব্যতীত আর কেউ নাই। পবিত্র তোমার সত্তা, নিশ্চয়ই আমি পাপী—তাপী। হে আল্লাহ! তোমার নিকট পানাহ্ চাচ্ছি কুফর আর দরিদ্রতা হতে । হে আল্লাহ্! আশ্রয় চাচ্ছি তোমার তুষ্টির দ্বারা তোমার রোষানল হতে, তোমার প্রার্থনা বখশিশের দ্বারা তোমার শাস্তি হতে আর তোমারই আশ্রয় প্রার্থনা করছি। শেষ করতে পারিনা তোমার প্রশংসা করে, তুমি ঠিক তেমনি, যেমনটি তুমি নিজে বর্ণনা করেছ। সব প্রশংসা তোমারই যতক্ষণ না তুমি খুশী হও।”

“নিশ্চয়ই ‘সাফা ও মারওয়া’ আল্লাহতায়ালার নিদর্শনগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্জ বা উমরা পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটির মধ্যে সায়ী করলে কোন দোষ নেই। আর কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেকির কাজ করলে আল্লাহ্ তো পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।

চতুর্থ সায়ীর দু’আ(মারওয়া থেকে সাফা)

اَللهُ اكْبَرُ, اَللهُ اكْبَرُ, اَللهُ اكْبَرُ, وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ, اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَسْئَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا تَعْلَمُ وَاَعُوْذُبِكَ مَنْ شَرِّ مَا تَعْلَمُ وَ اسْتَغْفِرُكَ مِنْ كُـلِّ مَا تَعْلَمُ اِنَّكَ اَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ ـ لَۤا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ الْمُبِيْنُ, مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ الصَّادِقُ الْوَعْدِ الْاَمِيْنُ ـ اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْۤ اَسْئَلُكَ كَمَا هَدَيْتَنِىْ لِلْاِسْلَامِ اَنْ لَّاتَنْزِعَه مِنِّـىْ حَتّٰـى تَتَوَ فَّانِـىْ وَ اَنَامُسْلِمٌ ـ اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ فِـىْ قَلْبِىْ نُوْرًا وَّفِـىْ سَمْعِـىْ نُوْرًا وَّفِـىْ بَصَرِىْ نُوْرًا ـ اَللّٰهُمَّ اشْرَحْ لِـىْ صَدْرِىْ وَيَسِّرْ لِـىْ اَمْرِىْ وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّ وَسَاوِسِ الصّدْرِوَشَتَات الْاَمْرِ وَفِتْنَةِ الْقَبْرِ ـ( اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْۤ اَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّ مَا يَلِجُ فِـى اللَّيْلِ وَشَرِّ مَايَلِجُ فِـى النَّهَارِ وَمِنْ شَرِّ مَاتَهُبُّ بِهِ الرِّ يَاحُ يَۤا اَرْحَمَ الرَّا حِمِيْنَ ـ سُبحَانَكَ مَا عَبَدْ نَاكَ حَقَّ عِبَادَتِكَ يَا اَللهُ ـ سُبْحَانَكَ مَاذَكَرْ نَاكَ حَقَّ ذِكْرِكَ يَا اَللهُ ـ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ, وَاعْفُ وَتَكَرَّمْ, وَتَجَاوَزْ عَمَّا تَعْلَمُ, اِنَّكَ تَعْلَمُ مَا لَا نَعْلَمُ اِنَّكَ اَنْتَ اللهُ الْاَعَزُّ الْاَ كْرَمُ ـ اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَۤائِرِ اللهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَاجُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّ فَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرُ عَلِيْمٌ ـ )

উচ্চারণ:আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,ওয়া লিল্লাহিল হামদু,আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন খায়রি মা তা’লামু ওয়া আ’উজুবিকা মিন শার্রি মা তা’লামু। ওয়া আস্তাগ্ফিরুকা মিন কুল্লি মা তা’লামু ইন্নাকা আন্তা ‘আল্লামূল গুইউবি, লা—ইলাহা ইল্লাল্লাহুল মালিকুল হাক্কুল মুবীন। মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহিস সাদিক্বুল ওয়া’দুল আমীন, আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা কামা হাদাইতানী লিল ইসলামি আল্লাতানযি আ’হু মিন্নী হাত্তা তাতাওয়াফ্ফানী ওয়ানা মুসলিম। আল্লাহুম্মাজ আ’ল ফি ক্বালবী নুরাও ওয়া ফী সাম্য়ী নূরাও ওয়া ফী বাসারী নুরা। আল্লাহুম্মাশ্ রাহলী সাদরী ওয়া ইয়াস্সিরলী আম্রি ওয়া আ’উজুবিকা মিন শার্রি ওয়াসাবিসীস সাদ্রি ওয়া শাতাতিল আম্রি ওয়া ফিতানাতির ক্বাব্রী। আল্লাহুমা ইন্নী আ’উজুবিকা মিন শার্রি মা ইয়ালিজু ফিল্লাইলি ওয়া শার্রি মা ইয়ালিজু ফিহান্নারি, ওয়া মিন শার্রি তাহুব্বু বিহির রিয়াহু ইয়া আর্হামার রাহিমীন। সুব্হানাকা মা ‘আবাদ্নাকা হাক্কা ইবাদাতিকা ইয়া আল্লাহ্ সুব্হানাকা মা জাকার্নাকা হাক্কা জিকরিকা ইয়া আল্লাহ্। রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া’ফু ওয়া তাকার্রাম, ওয়া তাজাওয়ায্ আম্মা তা’লামু ইন্নাকা তা’লামু মা না’লামু ইন্নাকা আন্তাল্লাহুল আ’আয্যুল আক্রাম্।

ইন্নাস সাফা ওয়াল্ মার্ওয়াতা মিন শা’আয়িরিল্লাহি ফামান্ হাজ্জাল বাইতা আবি’তামার ফালা জুনাহা ‘আলাইহি অঁাই ইয়াত্তাউওয়াফা বি হিমা, ওয়া মান্ তাতাউওয়া’আ খায়রান ফা ইন্নাল্লাহা শাকিরুন ‘আলীম।

অর্থ:“আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ,আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ,আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই জন্যে। হে আল্লাহ্! তোমার নিকট চাচ্ছি তোমার জানা সব জিনিসের মঙ্গল থেকে, আর পানাহ্ চাচ্ছি তোমার জানা সব জিনিসের অমঙ্গল থেকে, কেবল তুমিই তো গায়েব সম্পর্কে জান। নেই কোন উপাস্য আল্লাহ্ ব্যতীত—যিনি সবার স¤্রাট, ১। সত্য প্রকাশক। মুহাম্মদ (সা:) আল্লাহ্র রাসূল, প্রতিশ্রম্নতি রক্ষাকারী এবং বিশ্বাসী। ইয়া আল্লাহ! তোমার কাছে আমার প্রার্থনা, যেমন করে ইসলামের পথ আমাকে দেখিয়েছ, তেমনি আমার নিকট হতে তা ছিনিয়ে নিও না মরণ পর্যন্ত, আর মরণ যেন হয় আমার মুসলিম হিসবে। হে আল্লাহ্! আলো দাও আমার অন্তরে, শ্রবণে আর দৃষ্টিতে। হে আল্লাহ্! উন্মক্ত করে দাও আমার বক্ষ, সহজ করে দাও আমার কাজ আর পানাহ্ চাচ্ছি তোমার নিকট, মনের সন্দেহ বিকারের অনিষ্টত হতে, বিষয় কর্মের পেরেশানী হতে, আর কবরের ফিতনা হতে। হে আল্লাহ্! তোমার নিকট পানাহ্ চাচ্ছি সেই সব জিনিসের অনিষ্ট হতে— যা রাত্রে আসে আর দিনে আসে এবং বাতাস উড়িয়ে নিয়ে আসে। হে শ্রেষ্ঠতম দয়ালু! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তোমার উপযুক্ত বন্দেগী করতে পারিনি। হে আল্লাহ্! তুমি পাক—পবিত্র। স্মরণ করিনি তোমাকে তেমন করে, ঠিক যেমন করে করা উচিত ছিল। হে আল্লাহ্! হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর রহম কর, মেহেরবানী কর এবং সম্মানিত কর। আর তুমি আমাদের (গুনাহ) ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি জান, যা আমরা জানি না। নিশ্চয়ই তুমি মহাপরাক্রমশালী মাহা—সম্মানী”

“নিশ্চয়ই ‘সাফা ও মারওয়া’ আল্লাহতায়ালার নিদর্শনগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্জ বা উমরা পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটির মধ্যে সায়ী করলে কোন দোষ নেই। আর কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেকির কাজ করলে আল্লাহ্ তো পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।

পঞ্চম সায়ীর দু’আ(সাফা থেকে মারওয়া)

اَللهُ اكْبَرُ, اَللهُ اكْبَرُ, اَللهُ اكْبَرُ, وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ, سُبْحَا نَكَ مَا شَكَرْ نَاكَ حَقَّ شُكْرِكَ يَا اللهُ ـ اَللّٰهُمَّ حَبِّبْ اِلَيْنَا الْاِيْمَانَ وَزَيِّنْهُ فِىْ قُلُوْبِنَا وَكَرِّهْ اِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَ وَاجْعَلْنَا مِنَ الرَّاشِدِيْنَ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَاعْفُ وَتَكَرَّمْ وَتَحَاوَزْ عَمَّا تَعْلَمُ اِنَّكَ تَعْلَمُ مَالَا نَعْلَمُ اِنَّكَ اَنْتَ اللهُ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُ ,( اَللّٰهُمَّ قِنِـىْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ ـ اَللّٰهُمَّ اهْدِنِـىْ بِالْهُدٰى وَنَقِّنِىْ بِالتَّقْوٰى وَاغْفِرْ لِـىْ فِـى الْاٰخِرَةِ وَالْاُوْلٰـى ـ اَللّٰهُمَّ ابْسُطْ عَلَيْنَا مِنْ بَرَكَاتِكَ وَرَحْمَتِكَ وَفَضْلِكَ وَرِزْقِكَ ـ اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْۤ اَسْئَلُكَ النَّعِيْمَ الْمُقِيْمَ الَّذِىْ لَا يَحُوْلُ وَلَا يَزُوْلُ اَبَدًا, اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ فِـىْ قَلْبِـىْ نَوْرًا, وَفِـىْ سَمْعِـىْ نُوْرًا, وَفِـىْ بَصَرِىْ نَوْرًا, وَفِـىْ لِسَانِـىْ نُوْرًا, وَعَنْ يَمِيْنِـىْ نُوْرًا, وَمِنْ فَوْقِـىْ نُوْرًا, وَاجْعَلْ فِـىْ نَفْسِـىْ نُوْرًا, وعَظِّمْ لِـىْ نُوْرًا, رَبِّ اشْرَحْ لِـىْ صَدْرِىْ وَيَسِّرْلِـىْۤ اَمْرِىْ ـ اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَا, وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ ـ )


উচ্চারণ:আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবারওয়া লিল্লাহিল হামদু, সুব্হানাকা মা শাকারনাকা হাক্কা শুক্রিকা ইয়া আল্লাহু! আল্লাহুম্মা হাব্বিব ইলাইনাল ঈমানা ওয়া যায়্যিন্হু ফী ক্কুলূবিনা ওয়া কার্রিহ্ ইলাইনাল কুফ্রা ওয়াল ফুসূক্বা ওয়াল্ ‘ইসইয়ানা, ওয়াজ‘আল্না মিনার রাশিদীন। রাব্বিগ্ফির ওয়ার্হাম ওয়া’ফু ওয়া তাকার্রাম ওয়া তাজাওয়ায আ’ম্মা তা’লামু ইন্নাকা তা’লামু মা লা না’লামু ইন্নাকা আন্তাল্লাহুল আ’আয্যুল আক্রাম্, আল্লাহুম্মা ক্বিনী আজাবাকা ইয়াওমা তাব্আছু ই’বাদাকা। আল্লাহুম্মাহ্দিনী বিল্হুদা ওয়া নাক্বাক্বিনী বিত্তাক্ওয়া, ওয়াগ্ফিরলী ফিল আখিরাতি ওয়াল্উলা, আল্লাহুম্মাব্সুত ‘আলাইনা মিন বারাকাতিকা ওয়া রাহ্মাতিকা ওয়া ফাদ্ব্ালিকা ওয়া রিয্ক্বিকা। আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকান না ঈমাল মুক্বীমাল্লাজী লা—ইয়াহুলু ওয়ালা ইয়াযূল আবাদা। আল্লাহুম্মাজ আল ফী ক্বাল্বী নূরান ওয়া ফী সাময়ী নূরান ওয়া ফী বাসারী নূরান ওয়া ফী লিসানী নূরান ওয়া ‘আন্ ইয়ামীনী নূরান ওয়া মিন ফাউক্বী নুরান, ওয়াজআ’ল ফি নাফসী নুরান ওয়া আজজিম লী নূরা। রাব্বিশ রাহ্লী সাদ্রী ওয়া ইয়াস্সিরলী আমরী।

ইন্নাস সাফা ওয়াল্ মার্ওয়াতা মিন শা’আয়িরিল্লাহি ফামান্ হাজ্জাল বাইতা আবি’তামার ফালা জুনাহা ‘আলাইহি অঁাই ইয়াত্তাউওয়াফা বি হিমা, ওয়া মান্ তাতাউওয়া’আ খায়রান ফা ইন্নাল্লাহা শাকিরুন ‘আলীম।

অর্থ:“আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ,আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ,আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই জন্যে। হে আল্লাহ্! তুমি পাক—পবিত্র, তোমার শোকর আদায় তেমন করিনি— যেমনটি করা উচিত ছিল। হে আল্লাহ্! ঈমানকে আমদের নিকট প্রিয় করে দাও আর আমাদের অন্তরে একে সুশোভিত করে দাও এবং আমাদের নিকট ঘৃণ্য করে দাও কুফ্রকে, দুষ্কিৃতি আর অবাধ্যতাকে এবং আমাদেরকে শামিল কর তোমার নেক্কার বান্দাদের মধ্যে। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর, রহম কর, মেহেরবানী কর এবং সম্মানিত কর। আর আমাদের (গুনাহ) ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি জান, যা আমরা জানি না। নিশ্চয়ই তুমি মহাপরাক্রমশালী মাহা—সম্মানী।” হে আল্লাহ্! রক্ষা কর আমাদের তোমার আজাব হতে সে দিন , যেদিন তুমি পুনরায় জীবিত করবে তোমার বান্দাদেরকে। হে আল্লাহ্! দেখাও আমাকে সরল পথ, নিষ্পাপ কর আমাকে তাক্ওয়ার সাহায্যে। আমাকে মাগফিরাত কর দুনিয়া আর আখিরাতে। হে আল্লাহ! বিস্তার করে দাও আমাদের উপর তোমার বরকত, ফযল আর রিযিক। হে আল্লাহ! তোমার নিকট সেসব নিয়ামত চাচ্ছি, যা স্থায়ী হবে এবং হাতছাড়া কিংবা বিনাশ হবে না কখনও। হে আল্লাহ! আমার হৃদয়কে, আমার শ্রবণশক্তিকে, আমার দৃষ্টিশক্তিকে, আমার যবানকে, আমার ডান দিকে এবংওপরকে তোমার নূরের আলোকে আলোকিত করে দাও। হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রসারিত করে দাও এবং কর্মসমূহকে সহজ করে দাও।”

“নিশ্চয়ই ‘সাফা ও মারওয়া’ আল্লাহতায়ালার নিদর্শনগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্জ বা উমরা পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটির মধ্যে সায়ী করলে কোন দোষ নেই। আর কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেকির কাজ করলে আল্লাহ্ তো পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।”

ষষ্ঠ সায়ীর দু’আ (মারওয়া থেকে সাফা)

اَللهُ اكْبَرُ, اَللهُ اكْبَرُ, اَللهُ اكْبَرُ, وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ, لَۤا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَه صَدَقَ وَعْدَه وَنَصَرَ عَبْدَه وَهَزَمَ الْاحْزَابَ وَحْدَهُ لَۤا اِلٰهَ اِلَّا للهُ وَلَا نَعْبُدُ اِلَّۤا اِيَّاهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَا فِرُوْنَ , اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْۤ اَسْئَلُكَ الْهُدٰى وَالتُّقٰـى وَالْعَفَافَ وَالْغِنٰـى ـ اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَالَّذِىْ تَقُوْلُ وَخَيْرًا مِّمَّا نَقُوْلُ ـ اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْۤ اَسْئَلُكَ رِضَاكَ وَالْجَنَّةَ وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ سَخَطِكَ وَالنَّارَ, وَمَايُقَرِّبُنِـىْ اِلَيْهَا مَنْ قَوْلٍ اَوْفِعْلٍ اَوْعَمَلٍ ـ( اَللّٰهُمَّ بِنُوْرَكَ اهتَدَيْنَا وَبِفَضْلِكَ اسْتَغْنَيْنَا وَفِـىْ كُنْفِكَ وَاِنْعَامِكَ وَعَطَآئِكَ وَاِحْسَانِكَ اَصْبَحْنَا وَاَمْسَيْنَا ـ اَنْتَ الْاَوَّلُ فَلَاقَبْلَكَ شَـْئٌ وَّالْاٰخِرُ فَلَا بَعْدَكَ شَـْئٌ , وَالظَّاهِرُ فَلَا شَـْئَ فَوْقَكَ, وَالْبَاطِنُ فَلَا شَـْئَ دُوْنَكَ نَعُوْذُبِكَ مَنَ الْفَلْسِ وَالْكَسَلِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ وَفِتْنَةِ الْغِنٰـى وَنَسْئَلُكَ الْفَوْزَ بِالْجَنَّةِ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَاعْفُ وَتَكَرَّمْ وَتَجَاوَزْ عَمَّا تَعْلَمُ اِنَّكَ تَعْلَمُ مَالَا نَعْلَمُ اِنَّكَ اَنْتَ اللهُ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُ ـ

اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِاعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بَهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِ نَّ اللهِ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ ـ)

উচ্চারণ:আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবারওয়া লিল্লাহিল হামদু, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু, সাদাকা ওয়া’দাহু, ওয়া নাসারা ‘আব্দাহু, ওয়া হাযামাল আহ্যাবা ওয়াহ্দাহু, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু, মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা ওয়া লাও কারিহাল কাফিরূন্ আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল ‘আফাফা ওয়াল গিনা, আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু কাল্লাজী তাক্কূলু ওয়া খায়রাম মিম্মা নাক্কূলু, আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা রিদ্বাকা ওয়াল জান্নাতা, ওয়া আ’উজুবিকা মিন সাখাত্বিকা ওয়ান্নারা। ওয়া মা ইউক্বার্রিবুনী ইলাইহা মিন কাউলিন আও ফি’লিন আও ‘আমালিন্ আল্লাহুম্মা বিনূরি কাহ্ তাদাইনা ওয়া বি ফাদ্ব লিকাস্ তাগ নাইনা ওয়া ফী কুন্ফিকা ওয়া ইন্’আমিকা ওয়া ‘আতায়িকা ওয়া ইহ্সানিকা আসবাহ্না ওয়া আম্সাইনা। আন্তাল আউয়্যালু ফা লা ক্বাব্লাকা শাইউন। ওয়াল আখিরু, ফালা বা’দাকা শাইউন। ওয়াজ্জাহিরু, ফালা শাইয়া ফাওক্বাকা, ওয়াল্বাতিনু ফালা শাইয়া দুনাকা না’উজুবিকা মিনাল ফালসি ওয়াল কাসালি ওয়া আজাবিল ক্বাবরি, ওয়া ফিতনাতিল গিনা ওয়া নাসআলুকাল ফাওযা বিল জান্নাতি। রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া’ফু ওয়া তাকাররাম, ওয়া তাজাওয়ায আম্মা তা’লামু ইন্নকা তা’লামু মা লা না’লামু, ইন্নাকা আন্তাল্লাহুল আ’আয্যুল আক্রাম।

ইন্নাস সাফা ওয়াল্ মার্ওয়াতা মিন শা’আয়িরিল্লাহি ফামান্ হাজ্জাল বাইতা আবি’তামারাফালা জুনাহা আ’লাইহি অঁাই ইয়াত্বত্বাউওয়াফা বি হিমা, ওয়া মান্ তাতাউওয়া’আ খায়রান ফা ইন্নাল্লাহা শাকিরুন ‘আলীম।

অর্থ: “আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ,আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ,আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই জন্যে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তিনি ওয়াদা পালন করেছেন। তিনি তাঁর বান্দাকে (নবীকে) এককভাবে সাহায্য করেছেন, কাফিরদেরকে যুদ্ধে পরাস্ত করেছেন। তিনি এক এবং তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। আমরা একনিষ্ঠভাবে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করি, যদিও বিধর্মীগণ এই সত্য ধর্মকে অস্বীকার করে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট চাচ্ছি হিদায়াত, তাক্ওয়া শান্তি এবং ঐশ্বর্য। হে আল্লাহ্! নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা তোমারই জন্য, যেমনটি তুমি করেছ এবং যতটুকু আমরা করি, তা হতে তুমি অনেক উর্ধ্বে্ হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট তোমার সন্তুষ্টির এবং বেহেশত চাচ্ছি এবং আশ্রয় চাচ্ছি তোমার ক্রোধ ও দোযখ হতে এবং যে সমস্ত কথা ও কার্যক্রম দোযখের নিকটবর্তী করে ঐ সমস্ত কথা ও কার্য ক্রম হতে তোমার আশ্রয় চাচ্ছি। হে আল্লাহ্! তোমার নূরের আলোকে আমাদেরকে আলোকিত কর, তোমার রহমত দ্বারা আমাদেরকে পরিপূর্ণ কর। তোমারই নিয়ামতসমূহ এবং ইহ্সানের মধ্যে আমরা সকাল—বিকাল অতিবাহিত করি। তুমিই প্রথম, তোমার পূর্বে কেউ নেই এবং তুমিই শেষ, তোমার পরেও কেউ নেই , তুমিই জাহির এবং তুমিই বাত্বিন। আমরা তোমার নিকট দরিদ্রতা, অভাব—অনটন, কবরের আজাব এবং প্রাচুর্যের ফিত্না হতে আশ্রয় চাচ্ছি এবং তোমার নিকট বেহেশত লাভের সাফল্য কামনা করছি। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর, রহম কর, মেহেরবানী কর এবং সম্মানিত কর। আর আমাদের (গুনাহ) ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি জান, যা আমরা জানি না। নিশ্চয়ই তুমি মহাপরাক্রমশালী মাহা—সম্মানী।”

“নিশ্চয়ই ‘সাফা ও মারওয়া’ আল্লাহতায়ালার নিদর্শনগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্জ বা উমরা পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটির মধ্যে সায়ী করলে কোন দোষ নেই। আর কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেকির কাজ করলে আল্লাহ্ তো পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।”

সপ্তম সায়ীর দু’আ(সাফা থেকে মারওয়া)

اَللهُ اكْبَرُ, اَللهُ اكْبَرُ, اَللهُ اكْبَرُ كَبِيْرًا, وَالْحَمْدُ لِهِٰও كَثِيْرًا ـ

اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَسْئَلُكَ اِيْمَانًا كَامِلًا, وَيَقِيْنًاصَادِقًا, وَرِزْقًاوَّاسِعًا, وَقَلْبًاخَاشِعًا, اَللّٰهُمَّ حَبِّبْ اِلَىَّ الْاِيمَانَ وَزَيِّنْهُ فِىْ قَلْبِىْ وَكَرِّهْ اِلَـىَّ الْكُفْرَ وَ الْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَ وَاجْعَلْنِـىْ مِنَ الرَّا شِدِيْنَ, رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمء وَاعْفُ وَتَكَرَّمْ وَتَجَاوَزْ عَمَّا تَعْلَمُ اِنَّكَ تَعْلَمُ مَالَا نَعْلَمُ اِنَّكَ اَنْتَ اللهُ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُ, (اَللّٰهُمَّ اخْتِمْ بِالْخَيْرَاتِ اٰجَالَنَا وَحَقِّقْ بِفَضْلِكَ اٰمَالَنَا وَسَهِّلْ لِبُلُوْغِ رَضَاكَ سُبُلَنَا وَحَسِّنْ فِـىْ جَمِيْعِ الْاحْوَالِ اَعْمَالَنَايَامُنْقِذَ الْغَرْقٰـى, يَامُنْجِىَ الْهَلْكٰـى, يَاشَاهِدَ كُلِّ نَجْوٰى, يَامَنْتَهٰـى كُـلِّ شَكْوٰى, يَاقَدِيْمَ الْاِحْسَانِ يَادَآئِمَ الْمَعْرُوْفِ ـ يَامَنْ لَّاغَنِـىَّ بِشـْئٍ عَنْهُ وَلَابُدَّ لِكُلِّ شَـْئٍ مِّنْهُ, يَامَنْ رِّزْقُ كُـلِّ شَـْئٍ عَلَيْهِ وَمَصِيْرُ كُلِّ شَـْئٍ اِلَيْهِ, اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْ عَآئِذُبِكَ مَنْ شَرِّمَااَعْطَيْتَنَاوَمِنْ شَرِّ مَامَنَعْتَنَا اَللّٰهُمَّ تَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ وَاَلْحِقْنَا بِالصَّا لِحِيْنْ غَيْرَ خَزَايَاوَلَامَفْتُوْنِيْنَ, رَبِّ يَسِّرْ وَلَا تُعَسِّرْ, رَبِّ اَتْمِمْ بِالْخَيْرِ ـ

اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآ ئِرِ اللهِ فَمَنْ حَجَّ الْبيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ ـ )

উচ্চারণ:আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার কাবিরান, ওয়ালহামদু লিল্লাহি কাসীরা। আল্লাহুম্মা হাব্বিব ইলাইয়াল ঈমানাওয়া যাইয়িনহু ফী কালবী, ওয়া ক্বার্রিহ ইলাইয়াল কুফরা ওয়াল ফুসূক্বা ওয়াল ‘ইস্ইয়ান, ওয়াজ আ’লনী মিনার রাশিদীন। রাব্বিগফির ওয়ার্হাম ওয়া’ফু ওয়া তাকার্রামা ওয়া তাজাওয়ায আম্মা তা’লামু ইন্নাকা তা’লামু মা লা না’লামু ইন্নাকা আন্তাল্লাহুল আ’আয্যুল আক্রাম। আল্লাহুম্মাখতিম বিল খাইরাতি আজালানা ওয়া হাক্বক্বিক্ব বি ফাদ্বালিকা আমালানা, ওয়া সাহ্হিল লি—বুলূগি রিদ্বাকা সুবুলানা, ওয়া হাস্সিন ফী জামীয়ি’ল আহ্ওয়ালি আ’মালানা ইয়া মুনক্বিজাল গারক্বা, ইয়া মুনজিয়াল হালকা, ইয়া শাহিদা কুল্লি নাজওয়া, ইয়া মুনতাহা কুল্লি শাকওয়া, হালকা, ইয়া শাহিদা কুল্লি নাজওয়া, ইয়া মুনতাহা কুল্লি শাকওয়া, ইয়া ক্বাদীমাল ইহ্সানি। ইয়া দায়িমাল মা’রূফি, ইয়া মাল্লা গানিয়্যা বিশাইয়িন আনহু। ওয়ালাবুদ্দা লি কুল্লি শাইয়িম মিনহু্ ইয়া মান রিযক্বু কুল্লি শাইয়িন আলাইহি, ওয়া মাছীরু কুল্লি শাইয়িন ইলাইহি। আল্লাহুম্মা ইন্নী ‘আয়ুজুবিকাবিকা মিন শার্রি মা আ’ত্বাইতানা, ওয়া মিন শাররি মা মানা’তানা। আল্লাহুম্মা তাওয়াফ্ফানা মুসলিমীন, ওয়ালহিক্বনা বিস্সালিহীন গাইরা খাযাওয়া ওয়া লা মাফ্তূনীন, রাব্বি ইয়াস্সির ওয়া লা তু’আসসির, রাব্বি আতমিম বিল খাইরি।

ইন্নাস সাফা ওয়াল্ মার্ওয়াতা মিন শা’আয়িরিল্লাহি ফামান্ হাজ্জাল বাইতা আবি’তামার ফালা জুনাহা ‘আলাইহি অঁাই ইয়াত্বত্বাউওয়াফা বি হিমা, ওয়া মান্ ত্বাত্বাউওয়া’আ খায়রান ফা ইন্নাল্লাহা শাকিরুন ‘আলীম।অর্থ:“আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ,আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ,আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই জন্য। হে আল্লাহ! আমার মধ্যে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দাও। আমার অন্তরকে ঈমানের সৌন্দর্যে সুশোভিত কর এবং ঘৃণা সৃষ্টি করে দাও, কুফুর, পাপচার এবং গুনাহ্সমূহের প্রতি এবং আমাকে সুপথে পরিচালিত কর। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর, রহম কর মেহেরবানী কর এবং সম্মানিত কর। আর আমাদের (গুনাহ্) ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি জান, যা আমরা জানি না। নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহ্ মহা—পরাক্রমশীল মহা—সম্মানী। হে আল্লাহ্! আমাদের নির্ধারিত আয়ুষ্কাল ও আমাদের আশা—আকাঙ্খাকে তোমার দয়ায় পূর্ণ কর। তোমার সন্তুষ্টি লাভের পথকে সহজ করে দাও এবং কর্মের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৌন্দর্য দান কর। হে ডুবন্তকে উদ্ধারকারী! হে ধ্বংস এবং অনিষ্ট হতে রক্ষাকারী! হে প্রতিটি গোপন কথা নিরীক্ষাকারী। হে ফারিয়াদকারীর শেষ আশ্রয়স্থল! হে অনাদি অনুগ্রকারী। হে সর্বকালের মঙ্গলকারী! হে ঐ সত্তা—যাঁর দরজায় না যেয়ে কারো উপায় নেই। সমস্ত বস্তু তাঁরই নিকট হতে আসে। হে ঐ সত্তা—যাঁর উপর প্রতিটি প্রাণীর রিযিক নির্ভর করে। প্রত্যেক বস্তুর প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকটে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যা দান করেছ এবং যা দান করনি, সকল কিছুর অশুভ হতে তোমারই আশ্রয় গ্রহণ করছি। হে আল্লাহ! আমাদিগকে মুসলমান হিসেবে মৃত্যু দান করে নেক বান্দাদের সাথে আমাদের মিলন করে দাও। হে আমার প্রতিপালক! আমার সমস্ত কর্মকে সহজ করে দাও এবং কিছুই কঠিন করো না। হে আমার প্রতিপালক! আমার কর্মকে সুসম্পন্ন করে দাও।”

“নিশ্চয়ই ‘সাফা ও মারওয়া’ আল্লাহতায়ালার নিদর্শনগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্জ বা উমরা পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটির মধ্যে সায়ী করলে কোন দোষ নেই। আর কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেকির কাজ করলে আল্লাহ্ তো পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।”

যিয়ারতে মাদীনা মোনাওয়ারাহ্

সারওয়ারে কায়েনাত, তাজেদারে মাদীনা সাইয়্যিদুনা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রওজা শরীফ যিয়ারত বড়ই সাওযাবের কাজ। অতএব, বড়ই সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি, যে এই মোবারক যিয়ারতে—মদীনার তাওফীক্বলাভ করে।

নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন;

مَنْ حَجَّ فَزَارَ قَبْرِىْ بَعْدَ مَوْتِـىْ كَـانَ كَمَنْ زَارَنِـىْ فِـىْ حَيَاتِـىْ ـ (رواه البيهقـى فـى شعب الايمان, مشكوة)

“যে ব্যক্তি হজ্জ সম্পন্ন করলো এবং আমার মৃত্যুর পর আমার করব যিয়ারত করলো, সে যেন জীবদ্দশায়ই আমার যিয়ারত করলো।” (মিশকাত)

তিনি আরোও ইরশাদ করেন:

مَنْ زَارَ قَبْرِىْ وَجَبَتْ لَهٰ شَفَاعَتِـىْ (رواه الدار قطنـى, فتح القدير)

“যে ব্যক্তি আমার কবর যিয়ারত করলো, আমার উপর তার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।” ফাতলুল ক্বাদীর

এইসব রেওয়ায়োতে খোদ রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন যিয়ারতের প্রতি উম্মতকে উৎসাহ প্রদান করেছেন। এজন্য সঙ্গতিপূর্ণ প্রত্যেক মুসলমানের এই সৌভাগ্য অর্জন করা উচিত।

নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তখনই যথার্থ সম্মান দেখানো হবে, যখন আমরা জীবনের প্রতি মুহূর্তে তার আদর্শকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে চলব।

মদীনা সফরের আদব

মদীনার দিকে রওনার শুরু থেকেই দুরূদ শরীফ ও এস্তেগফার পড়া আরম্ভ করে দেওয়া দরকার। সম্পূর্ণ পথে দুরূদ ও এস্তেগফার অব্যাহত রাখুন। যখন মদীনা শহর দৃষ্টিগোচর হয়, তখন খুব বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পড়–ন।

মসজিদের নববীতে প্রবেশ

মদীনা শরীফে পেঁৗছে থাকার জায়গা ঠিক করুন, অতঃপর গোসল করুন। অসুবিধা থাকলে ওজু করুন। তারপর ভালো কাপড় (সাদা হলে ভাল) পরিধান করে আতর খুশবু ব্যবহার করে মসজিদে নববীর দিকে ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে রওনা দিন।

হযরত হাসান (রা.) নামাজের সময় উত্তম পোশাক পরিধানে অভ্যাস ছিলেন। তিনি বলতেন: আল্লাহতায়ালা সৌন্দর্য পছন্দ করেন, তাই আমি প্রতিপালকের সামনে সুন্দর পোশাক পরে হাজির হই।

মনে রাখা দরকার এটা সেই মহান দরবার, যেখানে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আসা—যাওয়া করতেন এবং অন্যান্য ফেরাস্তাগণও পূর্ণ আদবের সাথে হাজির হতেন।

মসজিদে নববীতে প্রবেশ করার সময় অত্যন্ত বিনয় ও ন¤্রতার সাথে প্রথমে ডান পা রাখুন এবং নিচের দু’আ পাঠ করুন। প্রবেশকালীন অল্পক্ষণের জন্যে হলেও তুতেকাফের নিয়ত করে নিন।

بِسْمِ اللهِ وَالصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلٰـى رَسُوْلِ اللهِ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِـىْ ذُنُوْبِـىْ وَافْتَحَ لِـىْ اَبْوَابَ رَحْمَتِكَ ـ

“ আল্লাহর নামে (এ মসজিদে প্রবেশ করছি) এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্র রাসূলের প্রতি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ্! আমার পাপ ক্ষমা কর এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।”

প্রবেশের পর সোজাসুজি রিয়াজুল জান্নাতে চলে আসুন। যদি সেখানে যাওয়া সম্ভব না হয় তবে যেখানে জায়গা পাওয়া যায়, সেখানেই দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ নামাজ পড়–ন। অতঃপর যিয়ারত কবুল হওয়ার জন্য দু’আ করে নিন।

রওযা—পাকে সালাম পেশ করার নিয়ম

নামাজ থেকে ফারগে হওয়ার পর অত্যন্ত আদবের সাথে রওযা শরীফের দিকে যান। জালির একদম কাছে যাবেন না এবং একবারে বেশি দূরেও সরে যাবেন না। অত্যন্ত ভক্তি ও আবেগের সাথে দুরূদ ও সালাম পোশ করুন:

اَلصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكَ يَارَسُوْلَ اللهِ

اَلصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكَ يَانَبِـىَّ اللهِ

اَلصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكَ يَاحَبِيْبَ اللهِ

اَلصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكَ يَاخَيْرَ خَلْقِ اللهُ

اَلصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا خَاتَمَ الْاَنْبِيَاءِ

اَلصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا سَيِّدَ الْاَۢ نْبِيَاءِ

وَالْمُرْسَلِيْنَ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُه

অর্থ:দুরূদ ও সালাম আপনার প্রতি হে আল্লাহ্র রাসূল,দুরূদ ও সালাম আপনার প্রতি হে আল্লাহ্র নবী,

দুরূদ ও সালাম আপনার প্রতি হে আল্লাহ্র হাবীব,দুরূদ ও সালাম আপনার প্রতি হে সৃষ্টির সেরা,

দুরূদ ও সালাম আপনার প্রতি হে শেষ নবী, দুরূদ ও সালাম আপনার প্রতি হে সরদারে নবী ও রাসূল

এবং আল্লাহ্র রহমত ও বরকত আপনার প্রতি।

যদি সময় সংকীর্ণ হওয়া কিংবা স্মরণ না থাকার কারণে কেউ এতটুকু পড়তে না পারে, তবে যতটুকু সম্ভব পড়বে। সালামের সর্বনিম্ন পরিমাণ হচ্ছে— ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া রসূলুল্লাহ’। এটাই বরাবার বলা যেতে পারে। (ফাতহুল—কাদীর)

কারও পক্ষ থেকে সালাম আরজ করার নিয়ম:

যদি কোন ব্যক্তি আপনাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে সালাম পেশ করার জন্য বলে থাকেন, তাহলে ঐ ব্যক্তির সালামও আপনার সালামের পর এভাবে নিবেদন করবেন:

আস্সালামু আলাইকুম মিন................. (ঐ ব্যক্তির নাম বলুন)। এরপর এক হাত সামনে অগ্রসর হয়ে হযরত আবু বকর (রা:)— এর উদ্দেশে সালাম পেশ করুন।

اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا سَيِّدَنَا اَبَا بَكْرِنِ الصِّدِّيْقَ (رض)

اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا خَلِيْفَةَ رَسُوْلِ اللهِ

اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا وَزِيْرَ رَسُوْلِ اللهِ

اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا خَلِيْفَةَ رَسُوْلِ اللهِ

فِـى الْغَارِوَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَـاتُه

অর্থ:“সালাম আপনার প্রতি হে আমাদের সরদার আবু বকর সিদ্দীক! সালাম ও আপনার প্রতি হে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর খলীফা, সালাম আপনার প্রতি হে গুহায় রাসূলুল্লাহ (সা:) এর সঙ্গী এবং আল্লাহ্র রহমত ও বরকত আপনার প্রতি।”

এরপর এক হাত সামনে অগ্রসর হয়ে হযরত ওমর (রা:) এর উদ্দেশে সালাম পেশ করুন।

اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ

اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا اَمِيْرَ الْمُؤ مِنِيْنَ

اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا عِزَّ الْاِسْلَامِ وَالْمُسْلِمِيْنَ

اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا اَبَا الْفُقَرَاۤ ءِ وَالضُّعَفَاۤءِ وَالْاۤرَامِ وَالْاَيْتَامِ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُه ـ

অর্থ:সালাম আপনার প্রতি হে ওমরাবনাল খাত্তাব, সালাম আপনার প্রতি হে আমীরুল মু’মিনীন, সালাম আপনার প্রতি হে ইসলাম ও মুসলমানদের গৌরব, সালাম আপনার প্রতি হে দরিদ্র, অসহায়, বিধবা ও এতিমদের সুহৃদয় এবং আল্লাহ্র রহমত ও বরকত আপনার প্রতি।

উপরোল্লিখিত সালাম পাঠ করার শব্দ বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে। কিন্তু পূর্ববর্তী সালেহীনদের অভ্যাস ছিল সংক্ষিপ্তভাবে সালাম প্রদান করা। তাঁর সংক্ষিপ্তভাবে সালাম প্রদান করাকেই মুস্তাহ্সান মনে করতেন। সালামের মধ্যে এমন কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে না যার দ্বারা নৈকট্যজনিত মান— অভিমান প্রকাশ পেতে পারে। এটিও এক প্রকার বে—আদবী। যদি ওই শব্দসমূহ মুখস্ত না থাকে অথবা যদি প্রচন্ডু ভির থাকে, তবে যতটুকু মনে থাকে বা যতটুকু বলতে পারেন, ততটুকুই বলুন।

আসহাবে সুফ্ফার চত্বর

বাবে জিবরাইল দিয়ে প্রবেশ করলে ডান দিকে হলো ঐতিহাসিক আসহাবে সুফফার চত্বর, যেখানে এমন তিন/চারশত সাহাবায়ে কেরাম (রিজওয়ানুল্লাহি তায়া’লা আজমাঈন) বিভিন্ন সময়ে তাশরীফ রাখতেন, যারা এলেম শিক্ষা ও ইসলাম প্রচারে নিজেদেরকে ওয়াক্ফ করে দিয়েছিলেন, তাঁদের সংখ্যা ৭০ জন (বুখারী, মিশকাত পৃ:৪৪৭) যাদের অন্যতম হলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হযরত আবুজর গিফারী ও হযরত বেলাল হাবশী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম প্রমুখ। হযরত আকু হুরায়রা (রা.) ছিলেন তাঁদের সর্দার। তিনি তাঁদের সুবিধা—অসুবিধার খেঁাজ—খবর নিতেন, কুরআন সুফফাবাসীদের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে।

রিয়াদ্বুল জান্নাত

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানসমূহ থেকে একটি বাগান”। (মুসলিম)

তাই মসজিদে নববীর পুরোটাই খায়র ও বরকতের খাযানা হওয়া সত্ত্বেও এই বিশেষ অংশটুকু বিশেষ বরকতময়। এই অংশের সীমা নির্ধারণের জন্যে সাদা স্তম্ভ তৈরী হয়েছে এবং তাতে সবুজ নক্শা করা গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। এই মোবারক অংশে সাতটি স্তম্ভ বিশেষ বিষয়ে বৈশিষ্ঠ্যমন্ডিুত ও প্রসদ্ধি। এখানে নফল আদয়কারীদের খুবই ভিড় হয়।

রহমতের স্তম্ভসমূহ

রওযায়ে জান্নাতের অংশে সাতটি স্তম্ভ রয়েছে। এগুলোকে রহমতের স্তম্ভ বলা হয়। মর্মর পাথর চড়ানো এই স্তম্ভসপ্তের গায়ে নাম অঙ্কিত রয়েছে। মাকরূহ ওয়াক্ত বা কাউকে কষ্ট দিয়ে না হলে এগুলোর পার্শ্বে নফল নামাজ পড়–ন।

উস্তুওয়ানা (বা স্তম্ভ)

১। উস্তুওয়ানা হান্নানা: মিম্বারে—নববীর ডান পার্শ্বেঅবস্থিত খেজুর বৃক্ষের গুঁড়ির স্থানে নির্মিত স্তম্ভটি। এর নাম উন্তÍয়ানা হান্নানা যে গুঁড়িটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম এর মিম্বার স্থানন্তরের সময় উচ্চঃস্বরে ক্রন্দন করেছিল।

২। উস্তওয়ানা সারীর: এখানে রাসূলুল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতেকাফ করতেন এবং রাতে বিশ্রামের জন্য তাঁর বিছানা এখানে স্থাপন করা হতো। এ স্তম্ভটি হুজরা শরীফের পশ্চিম পার্শ্বে জালি মোবারকের সাথে রয়েছে।

৩। উস্তওয়ানা উফুদ: বাহির থেকে আগত প্রতিনিধি দল এখানে বসে রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম —এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করতেন এবং তাদের সাথে এখানেই বসে কথা বলতেন। এ স্তম্ভটি ও জালি মোবারকের সাথে রয়েছে।

৪। উস্তওয়ানা হারস: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হুজরা শরীফ তাশরীফ নিয়ে যেতেন, তখন কোন না কোন সাহাবী পাহারার জন্য এখানে বসতেন। এ স্তম্ভটিও জালি মোবারক ঘেঁষে রয়েছে।

৫। উস্তওয়ানা আয়েশা (রা:) : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার মসজিদে এমন একটি জায়গা রয়েছে লোকজন যদি সেখানে নামাজ পড়ার ফজীলত জানতো, তবে সেখানে স্থান পাওয়ার জন্য লটারীর প্রয়োজন দেখা দিত। স্থানটি চিহ্নিত করার জন্য সাহাবায়ে কেরাম চেষ্টা করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর ইন্তেকালের পর হযরত আয়েশা (রা:) তাঁর ভাগ্নে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:) কে সেই জায়গাটি চিনিয়ে দেন। এটিই সেই স্তম্ভ। এই স্তম্ভটি উস্তুওয়ানা উফুদের পশ্চিমপার্শ্বে রওজায়ে জান্নাতের ভেরত অবস্থিত।

৬। উস্তওয়ানা আবু লুবাবা (রা:) : হযরত আবু লুবাবা (রা:) থেকে একটি ভুল সংঘটিত হওয়ার পর তিনি নিজেকে এই স্তম্ভের সাথে বেঁধে বলেছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে না খুলে দেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এর সাথে বাঁধা থাকবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বলেছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে আল্লাহ তা’লা আদেশ না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত বাঁধন খলবো না । এভাবে দীর্ঘ ৫০ দিন পর হযরত আবু লুবাবা (রা:) এর তওবা কবুল হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে তাঁর বাঁধন খুলে দিলেন। এটি উস্তুওয়ানা উফুদের পশ্চিম পার্শ্বে রওযায়ে জান্নাতের ভেতরে অবস্থিত।

৭। উস্তওয়ানা জিবরাঈল (আ:) :হযরত জিবরাঈল (আ:) যখনই হযরত দেহ্ইয় কালবী (রা:) এর আকৃতি ধারণ করে ওহী নিয়ে আসতেন, তখন অধিকাংশ সময় তাঁকে এখানেই উপবিষ্ট দেখা যেতো।

মসজিদে নববীতে জামাতে নামাজ

কোন অবস্থাতেই যেন মসজিদে নববীতে আপনার জামাতের নামাজ ছুটে না যায়। মসজিদে নববীতে এক নামাজের সওয়াব বুখারী ও মুসলিম শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী এক হাজারের অপেক্ষাও বেশি। ইবনে মাজাহ শরীফের এক রেওয়ায়েতে পঞ্চাশ হাজার নামাজের সমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণনা করেছেন, নবী করীমসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার মসজিদে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদয করবে এবং একটি নামাজও বাদ দিবে না, তার জন্য দোজখ থেকে মুক্তির ছাড়পত্র লিখে দেওয়া হবে; আর আজাব ও নেফাক মুক্তি লিখে দেওয়া হবে। এজন্য মসজিদে নববীতে জামাতে নামাজ পড়ার বিশেষ চেষ্টা রাখতে হবে।

মদীনার মিসকীন, প্রতিবেশী এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখুন। সাধ্যনুযায়ী হাদিয়া—তোহফা ও দান—খয়রাত করুন। সেখান থেকে ক্রয়—বিক্রয়ের সময়ও তাদের সাহায্যের নিয়ত করুন; এতে সওয়াব পাবেন।

জান্নাতুল বাকী

মসজিদের নববীর পূর্ব দিকে “জান্নাতুল বাকী” কবরস্থান। সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন, আহলে বায়াত, আয্ওয়াজে মুতাহ্হারাত, শোহাদা, আম্বিয়ায়ে কেরাম ও আওয়ালিয়ায়ে কিরাম এই কবরস্থানে সমাদিস্থ রয়েছেন।

আমীরুল মোমেনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা ও হযরত মায়মুনা রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা ব্যতীত অন্যান্য প্রায় সকল উম্মুল মো’মেনীন, তিন ছাহেবজাদী ও ছাহবজাদা হযরত ইব্রাহিম রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম আজমাঈন এবং হযরত আব্বাস (রা:), হযরত ইমাম হাসান (রা:), হযরত আক্কীল ইবনে তালিব (রা:), হযরত হালিমাতুস সা’দীয়া (রা:) ওহুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফুফুগণের মাজার এই বাক্বী’র মধ্যেই বিদ্যামান রয়েছে।

তাছাড়া হযরত উছমান ইবনে মাজউন, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে মাসউদ, হযরত খুনাইস ইবনে ওয়াক্কাস, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ, হযরত খুনাইস ইবনে হুজাফা, হযরত আসাদ ইবনে যুরারাহ্ প্রমুখ হাযারাত রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম আজমাঈন এখানে সমাহিত আছেন।

আরো সমাহিত আছেন শায়খুল ক্বোররা হযরত ইমাম নাফে’ এবং হযরত ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা। এছাড়া শোহাদায়ে ওহুদ থেকে সেই সকল ছাহাবাগণের মাজারও এখানে বিদ্যমান, যারা ওহুদের যুদ্ধে আহত হয়ে মদীনায় এসে শাহাদত বরণ করেছিলেন।

যখন জান্নতুল বাক্বীতে প্রবেশ করবেন অথবা এর পাশ দিয়ে যাবেন, তখন বলুন:

اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمِ الْمُؤْ مِنِيْنَ وَاِنَّاۤ اِنْ شَاۤءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُوْنَ ـ اَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالْاَثْرِ ـ يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ ـ اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِاَهْلِ الْبَقِيْعِ الْغَرْقَدِ ـ

হযরত উসমান (রা:)—এর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ার দু’আ

অর্থ: সালাম তোমার উপর, হে আমাদের সরদার আফ্ফানের পুত্র উসমান! সালাম তোমার উপর যাকে আল্লাহর ফেরেশ্তাগণও সমীহ করেছেন। সালাম তোমার উপর, যার তিলাওয়াত কুরআনকে অলঙ্কৃত করেছে, যার ইমামত মেহরাবকে আলোকিত করেছে, আর যে বেহশ্তে হয়েছে আল্লাহ্র প্রদীপ। সালাম তোমার উপর, হে খুলাফায়ে রাশিদিনের তৃতীয় জন! আল্লাহ্ তোমাকে রাজী আর খুশী করেছেন চমৎকারভাবে, জান্নাতকে করেছেন তোমার গন্তব্যস্থল, আবাস আর আশ্রয়। বর্ষিত হোক তোমার উপর শান্তি এবং আল্লাহ্র করুণা আর বরকত। সম্ভব হলে জান্নাতুল বাকীর অন্যান্য মাজারেও ফাতিহা আর সালাম পড়–ন।

اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا سَيِّدِنَا عُثُمَانَ بْنِ عَفَّانَ, اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا مَنْ اِسْتَحْيَتْ مِنْكَ مَلَاۤئِكَةُ الرَّحْمٰنِ , اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا مَنْ زَيِّنَ الْقُرْاٰنَ بِتِلَاوَتِه وَنَوَّرَ الْمِحْرَابَ بِاِمَامَتِه وَسِرَاجَ اللهِ تَعَالٰـى فِـى الْجَنَّةِ, اَلسَّلاَمُ عَلِيْكَ يَاثَالِثَ الخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ رَضِـىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْكَ وَارْضَاكَ اَحْسَنَ الرِّضَا وَجَعَلَ الْجَنَّةَ مَنْزِلَكَ وَمَسْكَنَكَ وَمَحَلَّكَ وَمَاْوَكَ , اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُه ـ

শোহাদায়ে ওহুদ

মসজিদে নবীর উত্তরে প্রায় ৩ মাইল দুরে ওহুদ পর্বতের পাদদেশে ওহুদ মায়দান অবস্থিত। এইখানে ওহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী প্রায় ৭০ জন শহীদ সাহাবায়ে কেরামের কবর আছে। তাঁদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চাচা হামজা (রা:) অন্যতম।

ওহুদ প্রান্তের শহীদানের উদ্দেশ্য সালাম ও দোয়া

اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا سَيِّدِنَا حَمْزَةَ ـ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا عَمَّ رَسُوْلِ اللهِ ـ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا عَمَّ نَبِىِّ اللهِ ـ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا عَمَّ حَبِيْبِ اللهِ ـ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا عَمَّ الْمُصْطَفٰـى ـ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا سَيِّدَ الشُّهَدَاۤءِ ـ وَيَااَسَدَ اللهِ وَاَسَدَ رَسُوْلِه ـ اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا سُعَدَاۤءُ يَا نُجَبَاۤءُ يَا نُقَبَاۤءُ يَااَهْلَ الصِّدْقِ وَالْوَفَاۤءِ ـ اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَامُجَاهِدِيْنَ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ حَقَّ جِهَادِهِ ـ سَلَامُ عَلَيْكُمْ بِمَاصَبَرْتُمْ فِنِعْمَ عُقُبَـى الدَّارِ ـ اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا شُهَدَاۤءَ اُحُدٍ كَـاۤفَّةً عَاۤمَّةً وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُه ـ

মসজিদ সমূহের যিয়ারত

মসজিদে নববী ছাড়াও অনেক মসজিদ রয়েছে, যেখানে হুজুর (সা:) এবং সাহাবায়ে কেরাম নামাজ পড়েছেন্ এসব মসজিদের যিয়ারত কারাও মোস্তাহাব। কয়েকটি মসজিদের উল্লেখ করা হলো:

মসজিদে কোবা

এই মসজিদ মুসলমানদের সর্বপ্রথম মসজিদ, হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কা মোকাররমা থেকে হিজরত করে মদিনা মোনাওয়ারায় তাশরীফ আনেন, তখন বনি আউফ গোত্রে অবতরন করেন এবং এই কোবা পল্লীতে ১৪ দিন অবস্থান করেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামদেরকে নিয়ে নিজ মোবারক হাতে এই মসজিদের বুনিয়াদ রাখেন, এই মসজিদ মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসার পর গোটা দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মসজিদ। (বুখারী শরীফ)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ সময় এই মসজিদে কুবায় তাশরীফ নিতেন, এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, মসজিদে কুবায় দু’রাকাত নামাজের সওয়াব একটি উমরাহ্র সমতুল্য।

মসজিদে কিবলাতাইন

এটি মদীনা মোনাওয়ারার উত্তর পশ্চিম “ওয়াদীয়ে আক্বীক্বে”র সন্নিকটে উঁচুতে অবস্থিত। এর একটি দেয়ালে বায়তুল মোবাদ্দসমুখী মেহরাবের চিহ্ন খচিত আছে, আর একটি দেয়ালে কা’বামুখী মেহরাবের তৈরি আছে । বলা হয যে, ক্বেবলা পরিবর্তনের হুকুম নামাজরত অবস্থায় এই মসজিদেই নাজিল হয়েছিল। এ জন্যেই একে মসজিদ ক্বিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ বলা হয়।

কেবলা পরিবর্তন সম্পর্কে আল্লাহতায়ালার বাণী:

قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ ۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا ۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ

“আকাশের দিকে তোমার বারংবার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করেছি। সুতরাং তোমাকে অবশ্যই এমন ক্বিবলার দিকে ফিরাইয়া দিতেছি যাহা তুমি পছন্দ কর। অতএব তুমি মসজিদে হারামের (কা’বার) দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক না কেন উহার দিকে মুখ ফিরাও। (সূরা বাকারা: আয়াত ১৪৪)

মসজিদে ফাতাহ

খন্দকের যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীগণ যে সকল স্থানে বসে নামাজ পড়েছিলেন এবং দু’আ করেছিলেন যেখানে পরবর্তীতে পাঁচটি মসজিদ তৈরি করা হয়। যথা:

(ক) মসজিদে ফাতাহ: এই মসজিদের স্থানে বসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খন্দকের যুদ্ধে মুসলমানদের জয়ের জন্য দু’আ করেছিলেন বলে একে মসজিদে ফাতাহ বা জয়ের মসজিদ বলা হয়। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে সোম, মঙ্গল, বুধ তিনদিন দু’আ করেছিলেন। আর আল্লাহতায়ালা বৃহস্পতিবার দিন দু’আ কবুল করেছিলেন এবং বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছিলেন।

(খ) মসজিদে সালমান ফারসী (রা:)

(গ) মসজিদে আবু বকর সিদ্দিক (রা:)

(ঘ) মসজিদে ওমর (রা:)

(ঙ) মসজিদে উসমান (রা:)

(চ) মসজিদে আলী (রা:)

মসজিদ পাঁচটি কাছাকাছি ছোট ছোট পাহাড়ে অবস্থিত। এই এক সাথে পাঁচটি মসজিদকে “মসজিদে সিত্তা” বলে।

মসজিদে গামামাহ

এই মসজিদকে মুসাল্লাও বলা হয়। এটি সেই জায়গা যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামপ্রথম ঈদের নামাজ ও শেষ জীবনের ঈদের নামজ আদায় করতেন এবং এখানেই “সালাতুল ইস্তেস্কার”র নামাজও আদায় করেছিলেন। এটি মসজিদের নববীর দক্ষিন—পশ্চিম কোনে অবস্থিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ