সুন্নতের ফযীলত সমূহ

হযরত আনাস (রাযি.) হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন আমার প্রিয় নবীজী সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মহব্বত করল মূলত সে ব্যক্তি আমাকেই মহব্বত করল, আর যে আমাকে মহব্বত কলল সে আমারই সাথে বেহেশতে অবস্থান করবে। 

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুস্মরণ করলো। (সুরা নিসা, আয়াত—৮০) 

আমি (আল্লাহ) একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রাসুল প্রেরণ করেছি, যাতে (আমি) আল্লাহর নির্দেশে তার অনুস্মরণ করে। (সূরা নিসা আয়াত—৬৪) 

রাসুলুল্লাহ সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন— যে আমার সুন্নতের উপর আমল করবে তাকে আল্লাহ তায়ালা চারটি সম্মানী বস্তু দান করবেন। ১. নেককারদের অন্তরে ভালোবাসা দান করবেন। ২. বদকাদের অন্তরে ভয় পয়দা করে দিবেন। ৩. তার রুজীতে বরকত দান করবেন। ৪. দ্বীনের উপর চলার জন্য তাকে মেহনত করার সুযোগ করে দিনেব। হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেছেন রাসুলুল্লাহ সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— সুন্নত মোতাবেক অল্প আমল বিদআত এর সাথে অনেক আমলের চেয়ে উত্তম আর যে আমার সুন্নতের উপর আমল করলো সে আমার আদর্শ উত্তম, আর সে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো সে আমার উম্মত নয়। 

তাই প্রতিটি কাজ সুন্নত মোতাবেক করতে পারলেই শরীয়তের উপর পরিপূর্ব আমল হয়। সন্নতের বরখেলাফ হিমালয় পাহাড় পরিমান আমলের চেয়েও সুন্নত মোতাবেক সরিষা দানা পরিমান আমল অনেক উত্তম। হযরত আব্দুল্লাহ—ইবনে মাসউদ (রাযি.) বলেছেন— সুন্নত মোতাবেক সাধারণ আমল বিদআতের কষ্ঠকর আমল থেকেও উত্তম। 

হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন— রাসুলুল্লাহ সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন— এমন ২ শ্রেণির মানুষ রয়েছে যাদের আল্লাহ তায়ালা লানত করেছেন— প্রত্যেক নবীও তাদের লানত করেছেন। তাদের মধ্যে এক শ্রেণি হলো যে আমার সুন্নতকে ছেড়ে দেয়। 

রাসুলুল্লাহ সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন “যদি তোমার (নবী) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত ছেড়ে দাও, তাহলে কিন্তু অবশ্যই তোমরা গোমরাহ হয়ে যাবে। 

হযরত রাসুলুল্লাহ সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন— যে আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হয় সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য নয়। 

রাসুলুল্লাহ সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন— তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নত এবং হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নত অনুকরন করে চলবে আর মাড়ির দাত দিয়ে শক্তভাবে অঁাকড়ে ধরবে। নতুন সৃষ্ট (মনগড়া) বিষয়াবলী থেকে নিজেদের দূরে রাখবে। কারণ এগুলো হলো বিদআত, আর একটি সুন্নত পালন করলে ১০০ শহীদের নেকীলাভ হয়। 

সুন্নতের ভিতরেই হেদায়াত নাজাত, মাগফেরাত। রাসুলুল্লাহ সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন— বিদআতীরা হলো জাহান্নামের কুকুর। 

নবীজী সাইয়িদিন্যা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন— আল্লাহ তায়ালা সমস্ত বিদআতীর জন্য তওবার দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। 

হযরত আবু হাইয়ান আল বসরী (রহ.) বলেন—আমি হাসান বসরী (রহ.) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন Ñ কোন কথা আমল ছাড়া সঠিক হয় না। আর কোন কথা ও কাজ নিয়ত ছাড়া সঠিক হয়না। আর কথা ও কাজ নিয়ত ও সুন্নত মোতাবেক না হলে সঠিক হয়না। (সুতরাং কোন আমল সুন্নত মোতাবেক না হলে সঠিক হবেনা।) 

** খাবারের সুন্নত সমূহঃ **

খানা খাওয়ার আগে ৪টি বিষয় মনে রাখা জরুরী:— 

(১) আল্লাহ তায়ালার হুকুম মনে করে খানা খাওয়া। আল্লাহ তায়ালা আদেশ করেছেন যে, তোমরা খাও এবং পান কর” শধু ক্ষুধা নিবারনের জন্য নয়। (তারগীব ও তাহরীব)

(২) খানা খাওয়ার মাধ্যমে যে শক্তি হবে তা দ্বারা ইবাদতের নিয়ত করা। 

(৩) খানার নিজস্ব কোন শক্তি নেই এ বিশাসের সহিত খানা খাওয়া। খানার যদি কোন শক্তি থাকতো তবে এই পরিবারে একই খানা খাওয়ার পর তাদের একজন যুবক ও শক্তিশলী আর আরেকজন দূর্বল হতো না

(৪) খানার খেঁাজ খবর নিয়ে খানা খাওয়া। 

(৫) খানা খাওয়ার সময় অধিক পরিমানে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। 

খানা খাওয়ার সুন্নত তরীকা

১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খানার পূর্বে দুই হাত ধৌত করতেন। বর্তমান আমার এক হাত ধৌত করি এটা সুন্নতের পরিপন্থি। 

২. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন তরীকার এক তরীকায় বসতেন। (সাওয়াহেবে লাদুনিয়াহ) 

** প্রথম তিনি লোকমা মুখে নেয়ার সময় بِسْمِ اللهِ বিসমিল্লাহ বলতেন। খাবার সামনে এলে আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি মা রঝাকতানা ওয়াক্বিনা আজাবান্নার বলা। 

আরবী: ‏اللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْمَا رَزَقْتَنَا، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

অর্থ:হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যে জীবিকা দান করেছেন, তাতে বরকত দিন এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচান।

৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো চেয়ার টেবিলে বসে খানা খান নাই। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং—৪৩২৮৩)

৪. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খানার জন্য সব সময় ডান হাত ব্যবহার করতেন। (আবু দাউদ, হাদীস নং—৩২৮৩) 

৫. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা দস্তরখানা বিছিয়ে খানা খেতেন। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং—৪৯৬৮)। 

৬. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক লোক নিয়ে খানা খেতেন এবং বলতেন যত হাত তত বরকত। (মুসনাদে আহমদ)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো একা খেতেননা, একাধিক লোক নিয়ে খাবার খেতেন। (মুসনাদে আহমদ)।

৭. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কোন খাবারের প্রশংসা বা নিন্দা করতেন না। কারন প্রশংসায় লোখ এসে যায়। আর নিন্দা করতেন না। কেননা খানা আল্লাহ তায়ালার একটা নেয়ামত। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং—৩২৯৯)। 

৮. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম লোকমা গ্রহনের সময় এ দোয়া পড়তেন ইয়া ওয়াছিয়াল মাগফিরাহ (يَاوَسِعَالْمَغْفِرِةِ) বা বিসমিল্লাহ ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ  بِسْمِ اللهِ وَ عَلٰي بَرِكَةِ اللهِ। “প্রথম তিন লোকমায় মুখে নেয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলতেন। 

৯. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খানার শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং শেষে আলহামদুলিল্লাহ পড়তেন। এ দোয়া পড়তেন আর বলতেন যে নেয়ামতের শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা হয় সে নেযামতের হিসাব নেওয়া হয়না। 

১০. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খানার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে গেলে এ দোয়া পড়তেন-    بِسْمِ اللهِ اَوَّلَه وَاٰخِرَهٗ “বিসমিল্লাহি আউয়ালুহু ওয়া আখিরুহু”। অর্থ : ‘খাবারের শুরুতে আল্লাহর নাম শেষেও আল্লাহর নাম।’

১১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামনের দিক থেকে খানা শুরু করতেন এবং খানার মাঝে হাত দেওয়া থেকে নিষেদ করতেন। আর বলতেন খানার মাঝে বরকত থাকে। (ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং—৩২৬৪)।

১২. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝে মাঝে আঙ্গুল চেটে খেনেত এবং এরশাদ করতেন, আঙ্গুল চেটে খাও, কেননা জানা নেই খানার কোন অংশে বরকত আছে। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং—৩৭৯৫)। 

১৩. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো তিন আঙ্গুলে (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং—৩৭৮১) কখনো চার আঙ্গুলে (আদাবুন নবী) এবং কখনো পাঁচ আঙ্গুল দ্বারা খানা খেতেন। পক্ষান্তরে দুই আঙ্গুল দ্বারা আহার করাকে শয়তানের আহার পদ্ধতি বরে আখ্যা দিয়েছেন। (দারা কুতনী)। আঙ্গুল চেটে খাওয়ার সুন্নত তরীকা— প্রথমে মধ্যমা, অতঃপর শাহাদত, বৃদ্ধা, অনামিকা, শেষে কনিষ্ঠা। 

১৪. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দস্তরখানা অথবা পেয়ালা থেকে পড়ে যাওয়া খানা তুলে খেতেন এবং বলতেন পড়ে যাওয়া লোকমা শয়তানের জন্য ছেড়ে দিওনা। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং—৩৭৯৩)। 

১৫. অন্য এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি দস্তার খানা থেকে পড়ে যাওয়া খানা তুলে খাবে আল্লাহ— তায়ালা তাকে অভাব অনটন, ধবল, কুষ্ঠরোগ থেকে রক্ষা করবেন। তার সন্তনদের নেককার বানাবেন। তাকে নিবুর্দ্ধিতা থেকে হেফাজত করবেন এবং তাকে সকল বালা মসিবত থেকে মুক্তি দান করবেন। (মাদারিজুন নবুওয়াহ)। পড়ে যাওয়া লোকমা পেটে থাকা অবস্থায় মারা গেলে যে জান্নাতে যাবে ইনশাল্লাহ। 

১৬. মজলিসে উপস্থিত মুরব্বিকে দিয়ে খানা খাওয়ানো শুরু করানো সুন্নাত। (মুসলিম শরীফ)। 

১৭. খানার মাঝে মাঝে এ দোয়া পড়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন এক লোকমা খায় বা পান করে এবং এ দোয়া পাঠ করে তখন আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত খুশি হন। (শামায়েল)

দোয়াটি — আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু ওয়া লাকাশ শুকরু লা উহ্ছী ছানা—আন আলাইকা।”

اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ لَا اُحْصِيْ ثَنَآءً عَلِيْكَ

১৮. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে বা হাতে ভর দিয়ে খাইনা। সুতরাং তোমরাও হেলান দিয়ে খানা খেওনা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং —৪৯৮৯) ভর দেয়া তিন ধরনের হতে পারে। (১) কোন জিনিসে ঠেস লাগিয়ে খাওয়া। (২) হাটুতে ভড় দিয়ে খাওয়। (৩) এক হাতে ভর দিয়ে খাওয়া। 

১৯. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা খানা খেতেন না। (দারেমী)। 

২০. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুতা পরিহিত ব্যাক্তিকে জুতা খুলে খানা খেতে নির্দেশ দিতেন। (ইবনে মাজাহ শরীফ)। 

২১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খানা খেয়েই শুয়ে পড়তে নিষেধ করেছেন। (বাদুল মায়াদ)।

২২. রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো চেয়ার টেবিলে বসে আহার করেননি। কখনো এমনটি হয়নি যে তিনি নিচে বছেছেন কিন্তু খাবার উপরে ছিল। 

২৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাওয়ার সময় সাধারণ বৃদ্ধাঙ্গুলি, শাহাদত ও মধ্যমে আঙ্গুলি এ তিন আঙ্গুলের সাহেয্যেই খার খেতেন। মাঝে মধ্যে তরল খাবার খেতেন অনামিকা আঙ্গুলটি কজে লাগেতেন। 

২৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম মিষ্টি জাতীয় খাবার মধু, সিরকা, খেজুর, খরবুজা, কাকরী, লাউ, খেজুর আর রুটি, খরবুজা আর খেজুর, কাকী, খেজুর আর যায়তুন তেল এগুলো এক সঙ্গে মিলিয়ে খেতেন। এবং এগুলো খুব পছন্দ করতেন। 

২৫. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কাঁচা পিয়াজ ও রসুন খেতেননা। চাপাতি রুটি ও খাননি। কোনো খাবার অপছন্দ হলে কিছু না বলে চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকতেন। 

২৬. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো খাবার শুকতেননা। এমন করাকে অপছন্দ করতেন। রান্না গোস্ত চাকু দিয়ে কেটে কেটে খেতেন। 

২৭. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো মজলিসে খাবাবিতরনের সময় ডান দিকে থেকে দেয়া শুরু করতেন। যদি বাম দিকে সম্মানিত কেউ থাকে তাঁকে দেয়া জরুরী মনে কররে ডান পাশের সাথীর অনুমতি সাপেক্ষে বাম দিকের লোককে দিতেন। 

২৮. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাবারের পাত্র সবসময ঢেকে রাখার তাগিদ দিতেন। ঢাকার মতো কিছু না থাকলে পাত্রে মুখে একটি কাঠি হলেও রেখে দেয়ার নির্দেশ দিতেন। 

২৯. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তরকারি নিচের অংশ যা পাতিল বা পেয়ালার তলায় লেগে থাকে সেটা মুছে খেতে পছন্দ করতেন। মাঝে মধ্যে চিনি দিয়ে খরবুজা খেতেন। শশা লবন দিয়ে খেতেন। খেজুর খেলে বাম হাতে বিটি রাখতেন। অচেনা কোনো খাবার দেখলে নাম জেনে নিয়ে তা হাতে তুলে নিতেন। 

৩০. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বসে খেতেন। ফল জাতীয় জিনিস কখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বা হেঁটে হেঁটে ও খেতেন। তিনি খিচুড়ী পছন্দ করতেন। গোসতের মাঝে ভিজানো রুটি প্রিয় খাদ্য ছিল। 

৩১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন খানা শেষে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করলে তার অতীত ও ভবিষ্যতের গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দিবেন ইনশাল্লাহ। দোয়াটি— আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আত্আমানি হাযা ওয়া রঝাক্বিনী মিন গইরি হাউলিন মিন্নী ওয়ালাকুয়্যাতা। বা নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে -

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ اَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ

আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আত্আমানী ওয়া ছাক্বানা ওয়াজা আলনা মিনাল মুসলিমীন। 

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ اَطْعَمَنِيْ هَذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّىْ وَلَا قُوَّةٍ . 

খানা শেষে দুহাত কব্জি পর্যন্ত ধুতেন ও কুলি করতে। আর ভিজা হাতটি হাত মুখ ও মাথায় মছতেন। 

৩২. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দস্তরখানা উঠানোর সময় এ দোয়া পড়তেন 

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ اَطْعَمَنِيْ هَذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ  مِنِّيْ وَلَا قُوَّةٍ

আলহামদুলিল্লাজী হামদান কাছীরান তোয়াবান মুবারাকান ফিহী গইরা মাকফিইন ওয়ালা মুওয়াদ্দাইন ওয়ালা মুছতাগনিন আনহু রব্বানা। Ñ (বুখারী শরীফ, হাদীস নং—৫০৩৭) (সুন্নতী জিন্দেগী)। 

৩৩. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত খাওয়া শেষে এ দোয়া পড়তেন- 

اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيْمَا رَزَقْتَهُمْ وَاغْفِرْ لَهُمْ وَارْحَمْهُمْ

اَللّٰهُمَّ اَطْعِمْ مَّنْ اَطْعَمَنِيْ وَاسْقِ مَنْ سَقَانِيْ

“আল্লাহুম্মা বারিকলাহুম ফিমা মা রঝাকতাহুম ওয়াগফিরলাহুম ওয়ারহামহুম। 

৩৪. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেহমানের খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত (বিশেষ প্রয়োজন না হলে) উঠতেন না, সে নেয়ামতের শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা হয়, সে নেয়ামতের হিসাব নেয়া হবেনা। (বুখারী শরীফ)। 

বি:দ্র: ৪নং পয়েন্ট যুক্ত হবে প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাউকে বিসমিল্লাহ না বলে খাবার শুরু করলে তার হাত চেপে ধরতেন এবং বিসমিল্লাহ বলা তাগিদ দিতেন এবং বাম হাতে কেতে দেখলে এতো জোরে চাপ দিতেন যে, তার হাত থেকে লোকমা পড়ে যেত। এরপর বলতে খানা ডান হাতে খেতে হয়। 

ওজুর সুন্নাত তরীকা

১. ওজুর শুরতে ও বার দরুদ শরীফ পড়া। অতঃপর আউজুবিল্লাহী মিনাশ শয়তোয়ানির রজিম ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়া। 

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

অতৎপর নিয়ত করা “হে আল্লাহ আমি পাক পবিত্রতা অর্জনের জন্য ওজু করিতেছি। বলা এর পর ৩ বার দুরুদ শরীফ পড়া। ১ বার কালেমা তাইয়্যিবা পড়া এবং বিসমিল্লাহি ওয়াল হামদুল্লিাহী বলা। বিসমিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম ওয়াল হামদুলিল্লাহী আলা দ্বিনিল ইসলাম বলে ওজু শুর করা বিসমিল্লাহী ওয়াল হামদু লিল্লাহী বরে ওজু করলে ঐ ওজ যতখন থাকবে ফেরেস্তারা তার জন্য সওয়াব লিখতে থাকবে। (অর্থাৎ যদি তিনি বিষেষ কোন এবাদতে মশগুল নাও থাকে।) 

২. ওজুর অংগগুলো ডানদিক তেকে ধোয়াশুরু করা। 

৩. উভয় হাত পৃথক ভাবে কবজিসহ তিনবার ধোয়া। হাত পায়ের আঙ্গুলি সমূহ খেলাল করা। 

৪.  মেসওয়াক করা। মিসওয়াককের দোয়া — আল্লাহুম্মা বারিকলী ফিহী। মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুলি দ্বারা দাঁত মেজে নেওয়া। 

৫. গড়গড়াসহ তিনবার কুলি করা। (আবু দাউদ শরীফ)। 

৬. নাকের নরম জায়গায় তিনবার পানি পৌঁছানো। প্রতিবার নাক ঝাড়া। (আবু দাউদ) 

মাসআলা Ñ রোজদান না হলে গড়গড়া করে কুলি করা এবং নাকের নরম জায়গায় পনি পৌছানে উত্তম। কিন্তু রোজাদার হলে হালকাভাবে কুলি করতে হবে এবং নাকে পানি দিতে হবে। 

৭. বাম হাত দিয়ে নাক সাফ করা। 

৮. সমস্ত মুখ তিনবার ধোয়া। (বুখারী শরীফ)। মাসআলা মুখ ধোয়ার সময় দই হাত ব্যবহার করা মুস্তাহাব। চেহারায় জোরে পানি ব্যবহার করা মাকরুহ। 

৯. মুখ ধোয়ার সময় আঙ্গুল দিয়ে দাঁড়ি খেলাল করা সুন্নত। (আবু দাউদ শরীফ)। 

১০. দুই হাত তিনবার ধোয়া সুন্নত তরীকা। (বুখারী শরীফ) প্রথমে ডান হাতের তালুতে পানি নিয়ে কনুই এর দিকে পানি বহিয়ে দিবে হাতে এরূপ তিনবার করা। তদ্রুপ বাম হাতের তালুতে পানি নিয়ে কনুই এর দিকে পানি ছেড়ে দিতে হবে। এরূপ তিন বার করা। এভাবে করল সুন্নত মোতাবেক হাত ধোয়া হবে। (কনুই থেকে আঙ্গুলের দিকে পানি দেয়া সুন্নত তরীকা নয়। 

১১. হাতের আঙ্গুল খিলালের সময় এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিবে।

১২. একবার পূনমাথা মাসেহ করা সুন্নত। 

১৩. মাথা মাছেহ করার সুন্নত তরীকাঃ— 

ক. প্রথম: উভয় হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল ও শাহাদাত আঙ্গুলকে আলাদা করে বাকী তিন আঙ্গুলের পেট দ্বারা মাথার উপরের অংশে সামনের দিক থেকে পিছনের দিকে টেনে আনতে হবে। 

খ. তারপর দুই হাতের তালা মাথার পিছনের দিক থেকে সামনের দিকে দুই পাশ দিয়ে টেনে আনতে হবে। 

গ. মাথার সামনের দিক তেকে মাসেহ শুর করা। 

ঘ. এরপর কনিষ্ঠা আঙ্গুল দুই কানের মূল ছিদ্রে এবং শাহাদত আঙ্গুল দ্বার দুই কানের ভাজে ভাজে মাসেহ করবে। দুই বৃদ্ধা আঙ্গুলের পেট দ্বার কানের পিছন দিকে মাসেহ করবে। 

১৪. দুই হাতের পূর্ব পিঠ দ্বারা গর্দান বা ঘাড় মাসেহ করা। গলা মাসেহ করা যাবেনা। গলা মাসেহ করা বিদআত। 

১৫. পা তিন তিনবার ধৌত করা সুন্নত। পা ধোয়ার সময় বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দ্বারা ডান পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাম পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল পর্যন্ত খেলাল শেষ করা্ (আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)। 

১৬. ওজুর সমস্ত আঙ্গুলগুরো ডলে ডলে ধৌত করা সুন্নত। (যাদুল মায়াদ) 

১৭. তারতীবের সাথে ওজু করা সুন্নত, অর্থাৎ এক অঙ্গ ধোয়ার পর আরেক অঙ্গ ধুতে দেরী না করা। কোরআন হাদীসে সেভাবে বর্নীত আছে সে ভাবে ওজু করা সুন্নত। 

১৮. ওজর প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধৌত করা সুন্নত। 

১৯. ওজুর মাঝে এই দুআ পাঠ করা সুন্নত 

اَللّٰهُمَّ اِغْفِرْلِيْ ذَنْبِيْ وَوَسِّعْ لِيْ فِيْ دَارِيْ وَبَارِكْ لِيْ فِيْ رِزْقِيْ

অর্থÑ হে আল্লাহ আমার গুনাহ মাফ করুন এবং আমার ঘরকে প্রশস্ত করে দিন এবং আমার রিজিকে বরকত দান করুন। (মুসান্নাফে  ইবনে আবী শায়বা ৭/৬২) উচ্চারণÑআল্লাহুম্মা মাগফিলী যাম্বী ওয়া ওয়াসিয় লি ফিদারী ওয়া তিলাওয়াতিল কুরআনি ওয়া যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া বারিকলী ফি রিজকী।”

উচ্চারণÑআল্লাহুম্মা মাগফিলী যাম্বী ওয়া ওয়াসিয় লি ফিদারী ওয়া বারিকলী ফি রিজকী।”

তবে শীত বা অন্য কারনে ওজ করতে ইচ্ছা হয়না তখন ওজর আঙ্গগুলো উত্তমরূপে ধুয়ে ওজ করা। (তিরমিযী শরীফ) এত মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। 

২০. অজু শেষ করার পর কলেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা সুন্নত। (তিরমিযী শরীফ)। তারপর এ দোআ পড়বে এ দোআ পড়বে-

اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّا بِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مَنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ

আল্লাহুম্মাজ আলনী মিনাত তাওয়াবীনা, ওয়াজ আলনী মিনাল মুতাত্বহিরীন। (তিরমিযী শরীফ)। 

ফযিলতঃÑ হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাযি. বলেন আসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বরেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি পরিপূর্ণভাবে ওযু করবে, তারপর কলেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য বেহেশতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। সে যে কোন দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিযী শরীফ)। 

*** ওজুর অবশিষ্ঠ পানি দাঁড়িয়ে পান করা মুস্তাহাব এবং রোগের শেফা। 

২১. ওজুর পরে যে এ দোআ পাঠ করবে তা মহর করে আকাসে নিয়ে যাওয়া হবে। কিয়ামতের দিন তা সামনে আনা হবে। ওজুর পরে যে সুরা ক্বদর পাঠ ১ বার কররে ৫০ বছরের গোনাহ মাফ হবে।

১। ওজুর করার জন্য উঁচু জায়গায় বসা। ২। কেবলা মুখী হয়ে বসা। ৩। অন্যের সাহায্য না নেয়া। ৪। ওজুর মাঝে দুনিয়াবী কথা না বলা। ৫। ওজর মধ্যে হাদীসে বর্ণিত দোয়া পাঠ করা। ৬। অন্তরে নিয়ত করার সাথে মুখে নিয়ত করা। ৭। প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময়  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পাঠ করা। بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْم

“সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আংতা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতুবু এলায়েক।” মুস্তাহাবঃÑ ওজুর সুন্নতের খেলাফ কাজ/মাকরুহসমূহঃ

১। পানি অপচয় করা, ২। যথেষ্ট পরিমান না করা বা কম ব্যবহার করা। তা মুখ ধোয়ার সময় জোরে পাপি মুখে নিক্ষেপ করা। ৪। দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা। ৫। বিনা প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নেয়া। ৬। মথা মাসেহ করা জন্য তিনবার নতুন পানি নেয়া। 

গোসলের সুন্নত তরীকাঃ

১. গোসল ৪ প্রকারঃ ১। ফরজ গোসল। ২। ওয়াজিব গোসল। ৩। সুন্নত গোসল, ৪। মুস্তাহাব গোসল। 

গোসল ফরজ হয় ৫টি কারনেঃ-

১। যদি কামভাবের সহিত বীর্যপাত হয়। ২। সহবাস করলে, যদি ও বীর্যপাত না হয়। ৩। স্বপ্ন দোষ হয়ে যদি বীর্যপাত হয়। ৪। মহিলাদের হায়েজ বা মাসিক শেষ হলে। ৫। মহিলারা নেফাজ থেকে পাক হলে। 

২.  গোসর ওয়াজিব হওয়ার কারণ সমূহঃ 

১। মৃত ব্যাক্তিকে গোসল দিলে। ২। বিধমী নতুন মসলমান হলে। 

৩. সুন্নত গোসল ৪ প্রকারঃ 

১। জুমার নামজের জন্য গোসল। ২। দুই ঈদের নামাযের গোসল। ৩। ইহরামের পূর্বে গোসল। ৪। আরাফার ময়দানে অবস্থানের আগে গোসল করা।

** গোসলের সুন্নত তরীকাঃ-

১। গোসলের পূর্বে পেশাব পায়খানা প্রয়োজন হলে সেরে নেয়া। ২। গোসলের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়া। ৩। গোসলের নিয়ত করা। অর্থাৎ পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করিতেছি নিয়ত করা। ৪। গোসলের শুরুতে উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধোয়া। ৫। শরীরে নাপাক থাকলে নাপাক স্থান তিনবার ধুয়ে ফেলা। লজ্জাস্থান বাম হাত দিয়ে তিনবার ধুতে হবে। ৬। অতঃপর মাথায় পানি ঢালা এবং সমস্ত চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো। ৭। অতঃপর ডান কাধে পানি ঢালা। ৮। অতঃপর বাম কাঘে পানি ঢালা। ৯। নাভীর ভিতর পানি পৌঁছানো। ১০। সমস্ত শরীরে পানি পেঁৗছানো। ১১। সবশেষে গোসলের জায়গায় যদি পানি জমে থাকে তাহলে সেখান থেকে সরে দুই পা ধোয়া। আর গোসলের জায়গায় পানি না জমলে সেখানে পা ধোয়া। ১২। গোসল সেরে রুমাল ব্যবহার করা বা না করা। উভয়টিই প্রমানিত আছে। সুতরাং যার যেটা সুবিধা সে সেটা করবে। 

সুন্নত মোতাবেক ফরজ গোসলঃ-

গোসল ফরজ হলে প্রথমে বাথরুমে প্রবেশ করে বসে লজ্জাস্থান বাম হাত দিয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে নিবে, যেন বিতরে কোন নাপাকী না থাকে। অতঃপর সমস্ত শরীর ডলে ডলে খুবই উত্তমরূপে ধুয়ে নিতে হবে। শরীরের প্রত্যেকটি পশরে গোড়ায় গোড়ায় পানি পৌছাবে। অর্থাৎ নাকের ভিতর প্রত্যেকটি পশমের গোড়ায় নাভীর ভিতর, চোখের কোনে, চুলের গোড়ায় অর্থাৎ মাথা হতে পা পর্যন্ত উত্তমরূপে পানি পৌঁছাবে। অতঃপর পবিত্র কাপড় দ্বারা মাথা হতে হাটুর নিচ পর্যন্ত ঢেকে নেওয়া ফরজ। এরপর তিনবার দরুদ শরীফ পড়বে। পূনর্ভাবে আউজুবিল্লাহী মিনাশ শাইতোনির রাজিম। বিসমিল্লাহির রাহমানি রাহিম এভাবে “হে আল্লাহ আমি পৃথিবীর সমস্ত গুরুতর নাপাকী হতে পাক ও পবিত্র হওয়ার জন্য আপনার সুন্তুষ্টির জন্য ফরজ গোসল করিতেছি। আরবী নাওয়াইতুআন গোসরা লিরয়াফিল জানাবাতী। অতঃপর তিনবার দুরুদ শরীফ পড়বে ১ বার কলেমা তাইয়্যিবা, ১ বা বিসমিল্লাহী ওয়ালহামদু লিল্লাহী পড়বে। এরপর দুই তাহ তিনবার কজি¦ পর্যন্ত ধুয়ে। এরপর মিসওয়াক করবেÑ মিসওয়াকের দোয়াÑ আল্লাহুম্মা বারিক লি ফিহী। তিনবার গড়গড়া সহ কুলি করবে, তিনবার নাকে পানি দিবে এভাবে ডানহাতের আঙ্গুলিতে পানি নিয়ে নাকের ভিতর টানতে হবে। এতে মাথা জ¦লে যাবে। নো হলে ফরজ গোসল হবেনা) এবং বাম হাত দিয়ে প্রতিবার নাক ঝাড়বে। বৃদ্ধ আঙ্গুল ও কনিষ্ট আঙ্গুল দ্বারা নাকে ঢুকিয়ে মাসেহ করবে। দুই হাত পানি নিয়ে কপালে চুলের গোড়া থেকে কানের লতির পিছন পর্যন্ত ভিজাতে হবে। অতঃপর ডান হাতে পানি বহারে এবং বামহাত দিয়ে ডলে ডলে তিনবার ধৌত করবে। আসকাজ ও আনুরূপ তিনবার ধৌত করবে। কনুই থেকে চার আঙ্গুল বেশি। অতঃপর মাথা মাসেহ করবে বৃদ্ধ ও শাহাদত আঙ্গুল দিয়ে কপাল হতে মাথার পিছন পর্যন্ত মুছে নিবে এবং দুই পাশে পিছন হতে সামনে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। অতঃপর কনিষ্ঠ আঙ্গুল কানের মূল ছিদ্রতে এবং শাহাদত আঙ্গুল কানের ভাজে ভাজে মাসেহ করবে, বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা কানের উল্টা পিঠে মাসেহ করবে। উল্লেখ্য যে নাকের এবং কানের ছিদ্রতে ভালোভাবে পানি পেঁাছাতে হবে। যদি নাকে ও কানে কোন ভূল না থাকে তাহলে কাঠি ভিজিয়ে পানি প্রবেশ করাবে। অতঃপর হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে গাড় মাসেহ করবে। গলা মাসেহ করবেনা এটি বিদআত তারপর দুই হাতের পানি পূর্ণ বিসমিল্লাহ রহিম বলতে হবে, তিন বার ঢান কাঁধে, তিনবার বাম কাঁধে পানি দিবে এবং প্রতিবার বিসমিল্লাহ পূর্ণভাবে পড়বে। এটি সুন্নত। এরপর বসে মেয়েদের লজ্জা স্থানে কাপড়ের উপর দিয়ে হালকাভাবে পানি পেঁৗছাবে সরাসরি হাত দিয়ে পানি পেঁৗছালে ফরজ গোসল ভেঙ্গে যাবে। এরপর ডানপা এবং বামপা তিনবার ধৌত করা সুন্নত। বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দ্বারা ডান পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল থেকে আস পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল পর্যন্ত সিরিয়ালী খিলাল করবে এবং পায়ের নিচের চামড়া অনেক মোটা। এজন্য ডলে ডলে ধুতে হবে। এক চুল পরিমান জায়গা শুকনা থাকলে ফরজ গোসল হবেনা। অর্থাৎ সমস্ত জীবনের এবাদত ব্যর্থ হবে। গোসলের প্রথমে তিনবার দরুদ শরীফ এবং শেষে তিনবার দরুদ শরীফ এবং ১ বার কলেমায়ে শাহাদত পড়তে হবে। তাহরে জান্নাতের আট দরজা খুলে যাবে ইনশাল্লাহ দরুদ শরীফ এবং আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পাঠ এবং নিয়ত না করলে ওজু এবং ফরজ গোসল কবুল হয়না। 

ঘুম হতে জাগ্রত হওয়ার সুন্নত তরীকা:

১। ঘুম হতে জাগ্রত হবার পর দুই হাতের তালুদ্বারা চেহারা ও চোখ ভালোভাবে ডলে নেওয়া, যাতে ঘুমের ভাব দূর হয়ে যায়। (শামায়েলে তিরমিযী শরীফ)। ২। ঘুম থেকে উঠার পর তিনবার আলহামদুলিল্লাহ বলা এবং ১ বার কালেমা তাইয়্যেবা লাÑইলাহা ইল্লাল্লাহ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ পড়ে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করা আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আহইয়ানা বা‘আদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহন নুশুর। আরবী: (বুখারা শরীফ)। 

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْ اَحْيَانَا بَعْدَ مَاۤ اَمَاتَنَا وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ

৩। নিম্নের দোআ পাঠ কররে দোআ কবুল হয়। অজু  সেরে নামায পড়লে কবুল হয়। 

দোয়াটি হলÑ 

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰي شَيْئٍ قَدِيْرٌ، وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَ اللهُ اَكْبَرْ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ 

উচ্চারণ: লাÑ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্ দাহু লা শারিকাল্লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদির। ওয়া সুবহানাল্লাহী ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবারু, ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ। 

৪। সুরা আল ইমরানের আয়াত ১৯০ থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করা। ৫। ঘুম থেকে উঠার পর দুই তাহ কবজি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া। ৬। ঘুম তেকে উঠেই মিসওয়াক করা সুন্নত। [তবে ওজুর সময় আবার মিসওয়াক করা ভিন্ন আরেকটি সুন্নত।] ৭। ঘুম থেকে উঠে নাকে তিনবার নাক ঝাড়া। কেননা নাকের ছিদ্রে শয়তান রাত যাপন করে থাকে। ৮। ঘুম থেকে উঠে তনিবার নাকে পানি দেয়া সুন্নত। ৯। যখনই ঘুম থেকে উঠবে মিসওয়াক করা সুন্নত (আবু দাউদ শরীফ)। 

পেশাব। পায়খানার সুন্নত তরীকাঃ-

১. রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদাই মাথা ঢেকে এবং জুতা পরিধান করে পায়খানায় বা টয়লেঠে প্রবেশ করবেন। 

بِسْمِ اللهِ اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ

২. পেশাব পায়খানার বেগ অবস্থায় সালাত পড়া নিষেধ। 

৩. কোন আংটি বা তাবীজে আল্লাহ এবং নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামের নাম দৃষ্টিগোচর হয় বা কোরআনের আয়াত লিখা থাকলে তা খুলে রেখে যেতে হবে। 

৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়খানায় প্রবেশের পূর্বে বিসমিল্লাহ সহ পাঠ করতেনÑ বিসমিল্লাহীÑ আল্লাহুমমা ইন্নি আউজুবিকা মিনালা খুবুছি ওয়াল খবাইছ। 

৫. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়খানাই যেতে প্রথমে বাম পা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে যদি বাম পা দিয়ে প্রবেশ করে প্রথমে ডান পা দিয়ে জুতা পরিধান করবে। অতঃপর কমোডে ডান পা দিতে হবে এবং নামার সময় বাম দিয়ে নামতে হবে। এবং পায়খানা হতে বের হবার সময় বাম পায়ের জুতা আগে আগে খুলে অতঃপর ডান পা দিয়ে বের হতে হবে।

৬. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে পেশাব পায়খানা করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করছেন। সর্বদা বসে পেশাব করতে বলেছেন। (তিরমিজী শরীফ)। 

৭. বসার কাছাকাছি গিয়ে কাপড় উঠানো সুন্নত। (প্রয়োজনাতিরিক্ত কাপড় উঠানো যোদ্বারাসতর খুলে যায় তা) হারাম। 

৮. নরম মাটিতে পেশাব করা সুন্নত। যাতে পেশাবের ছিনা না আসে। বরং মাটি তা চুষে নেয়া বা গাড়িয়ে যায়। (তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ)। 

৯. পেশাবের ছিটা থেকে খুব খুব সতর্কতার সহি বেচে থাকবে কেননা অধিকাংশ কবরের আযাব পেশাবের ছিটা থেকে না বাঁচার কারনে হয়ে থাকে। (বোখারী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)। 

১০. ইস্তিঞ্জা করার সময় কিবলা দিকে মুখ করে বা পিঠ করে বসবেনা। (তিরমিযী শরীফ)। 

১১. পেশাব পায়খানার সময় দুই উরুর মাঝখানে যথেষ্ঠ ব্যবস্থান রাখবে।

১২. ইস্তেঞ্জা করার সময বিশেষ অবেগ ডান হাত কখনো লাগাবেনা বরং বাম হাত ব্যবহার করা সুন্নত। 

১৩. হাঁচি আসলে মনে মনে আলহামদুল্লিল্লাহ বলবে। 

১৪. পেশাব পায়খানার পানি খরচ করার পূর্বে ঢিলা কুলুখ ও পানি দুইটাই ব্যবহার করা। তিনটি অথবা পাঁচটি টিলা ব্যবহার করা মোস্তাহাব এবং পানি ও তিন বার ব্যবহার করে লজ্জাস্থান ধৌত করবে। 

১৫. গুপ্তাঙ্গের এবং মলের দিকে অধিক তাকাবেনা। (রওজাতুত্ত্বলিবীন ১ম খন্ড)। 

১৬. নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়খানা করার সময় বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে ও ডান বা খাড়া করে বসার জন্য শিক্ষা দিয়েছেন। 

১৭. এস্তেঞ্জার সময় কারো সাথে কথা না বলা এতে আল্লাহ তায়ালা ভীষণ অসন্তুষ্ট হন। 

১৮. পায়খানা হতে বের হবার সময় ডানপাদিয়ে বের হওয়া সুন্নত। 

১৯. বাইরে এসে এই দুআ পাঠ করতে হবে গুফরানাকা আলহামদুলিল্লাহ হিল্লাযী আযহাবা আন্নিল আযা ওয়া আফাÑনী। 

غُفْرَانَكَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ اَذْهَبَ عَنِّيْ الْاَذٰى وَعَافَانِيْ

২০. ঘরে বা বিছানায় মসজিদের আঙ্গিনায় বা ঈদগাহে এবং শক্ত স্থানে, মানুষের চলাচলের রাস্তায়, ছাদাদার ফলদার গাছের নিচে, ওজু গোসলের স্থানে আবদ্ধ পানিতে প্রবাহমান নদীতে প্রশাব বা পায়খানা করা নিষেধ। 

২১. পেশাব পায়খানার সময় ৮টি কাজ করা নিষেধ: ১। কথা বলা। ২। জবানে জিকির করা। ৩। কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা। ৪। সালাম দেওয়া। ৫। সালামের উত্তর দেয়া। ৬। খাওয়া বা পান করা। ৭। মিসওয়াক করা। ৮। লিখা বা পড়া। 

কাপড় পরিধানের সুন্নত সমূহঃ

১. কাপড় পরিধানের সময় পূর্ব বিসমিল্লাহ বলে ৩ বার ঝাড়া দেওয়া। (তিরমিয়ী)। 

২. কাপড় পড়ার সময় প্রথমে ডান হাত এবং পায়জামা পড়ার সময় প্রথমে ডান পা প্রবেশ করাবে। 

৩. কাপড় খোলার সময় প্রথমে বাম হাত ও পায়জামা খোলার সময় বাম পা আগে খুলবে এবং বিসমিল্লাহ বলবে। 

৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন লুঙ্গি বা কাপড় পড়তেন তখন পোশাকের নাম নিয়ে এ দোয়া পড়তেন।

اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ كَسَوْتَنِيْهِ اَسْاَلُكَ مِنْ خَيْرِه وَخَيْرِ مَا صُنِْعَ لَهٗ وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ  شَرِّه وَشَرِّ مَاصُنِْعَ لَهٗ

আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আনতা কাসাওতানীহী। আসআলুকা মিন খাইরিহি ওয়া খইরিÑ মা স্বুনিআলাহু ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহী ওয়া শাররি মা স্বুনি আলাহ্। 

৫. নতুন পোশাক পরিধান করার সময় নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করলে তার অতীত ও ভবিষ্যতে এবং এ কাপড় যতদিন দুনিয়াতে থাকবে ততদিন সওয়াব লিখা হবে ইনশাল্লাহ। 

اَلحَمْدُ لِلهِ الَّذِي كَسَانِي هَذَا الثَّوْبَ وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ

দোয়াটি আলহামদুলিল্লাহী মনি গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওয়াহ। 

৬. নতুন কাপড় পরিধান করানোর সময় দোয়া ইলবাস জাদীদান ওয়া ইশ হামীদান ওয়ামুত শাহীদান। (ইবনে মাজাহ)। অর্থ তুমি নতুন পোশাখ পরিধান কর এবং সুন্দর জীবন যাপন কর। আর শহীদের মর্যাদা নিয়ে মৃত্যু বরণ কর। 

৭. নতুন পোশাক পরিহিতের জন্য দোয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাগনের কেউ নতুন পোশাক পরিধান করলে তাকে দেখে বলতেন দোয়াটি (আবু দাউদ)। 

৮. পোশাক সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ অর্থÑ হে আদম সন্তান। আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান সমূহ ঢেকে রাখে এবং নাযিল করিছি সাজসজ্জার বস্ত্রও। আর তাকওয়ার পোশাক এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিতর্শন যাতে তারা উপদেশ গ্রহন করে। সূরা আরাফ আয়াতÑ২৬। 

উপরোক্ত আয়াতে কারিমায় পোশাক নাযিলের দুটি উদ্দেশ্য (১) গুপ্তাংগ আচ্ছাদিত করা। (২) তাকওয়া অর্জন করা। 

৯. নারীদের গুপ্তঙ্গ প্রসংঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনÑ নারীই গুপ্তাঙ্গা। (তিরমিযী, মিশকাত)। 

১০. যে পুরুষ নারীর পোশষাক পড়ে এবং যে নারী পুরুষের পোশাক পড়ে তার প্রতী নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের লানত (অভিসম্পাদ)। দিয়েছেন। (আবুদাউদ) 

১১. পায়জামা দাঁড়িয়ে পরিধান করলে স্বরণ শক্তি কমে যাবে এবং দারিদ্রতা আসে। বসে পরিধান করবে। 

১২. সাদা এবং সবুজ পোশাক পড়া সুন্নত। নতুন কাপড় শুক্রবার থেকে পড়া শুরু করা সুন্নত। 

১৩. সুতি পোশাক ঢিলা পোশাক এবং গোল লম্বার পোশাক পড়া সুন্নত। 

১৪. বিশমিল্লাহ বলে ৩ বার পানি ভালোভাবে নিংরাতে হবে এবং ৩ বারই নতুন পানিতে না ধুলে সেই কাপড় পবিত্র হবেনা এবং নামাজ হবেনা্ 

১৫. নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব পছন্দ করতেন পাঞ্জাবী। পাঞ্জাবী, পায়জামা, গেঞ্জী, মোছা শিরওয়ানী পড়া সুন্নত। পুরুষদের জন্য গেরুয়া রং এবং লাল রং পড়া অছন্দ করতেন না। তবে মহিলাদের পড়তে অসুবিধা নেই। 

জুতা পরিধান ও খোলার সুন্নত তরীকাঃ 

১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক পায়ে জুতা পরিধান করতে নিষেধ করেছেন হয়তো উভয় পা খালি রাখবে আর না হয় উভয় পায়ে জুতা পরিধান করবে। 

২. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুতা পরিধানের পূর্বে বাম হাত দিয়ে জুতা পরিধানের পূর্বে বাম হাত দিয়ে জুতা ঝেড়ে নিতেন এবং পূর্ণ বিসমিল্লাহ বলে ডান পা জুতায় প্রবেশ করাতেন। 

৩. নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোলার সময় প্রথমে বিসমিল্লাহ বলে বাম পায়ের জুতা খলতে আদেশ করেছেন। 

৪. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জুতা উঠাতেন বাম হাতে উঠাতেন এবং যদি বসতেন বাম পায়ে জুতা খুরে রেখে বসতেন। এটা নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্নত। 

৫. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোন কাউকে দাঁড়িয়ে জুতা পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)। 

নিজ ঘরে প্রবেশের সুন্নত সমূহঃ

১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে ঢুকার সময় ডান পা দিতেন বিসমিল্লাহ পড়তেন এবং প্রথমে সালাম দিয়ে ৩ বার দরুদ শরীফ ১ বার সূরা এখলাস পাঠ করতেন। এতে তার রিজিক এতো বেড়ে যাবে যে তার প্রতিবেশির জন্য ও যথেষ্ট হয়ে যাবে। 

অতঃপর এ দুআ পাঠ করতেন-

اَللّٰهُمَّ اِنِّي اَسْاَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللهِ رَبِّنَا تَوَكَّـلْنَا

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাল মাওলাজি, ওয়া খাইরাল মাখরাজি, বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া আলাল্লাহি রব্বানা তাওয়াক্কালনা।

৪. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে কেউ থাকুক বা না থাকুম উপস্থিত না থাকরেও ফেরেস্তাদের নিয়ত করে “আসসালামু আলাইনা ওয়া এবাদিল্লাহিস সলিহীন বলে, এভাবে সালাম দিতে নির্দেশ করেছেন। 

৫. ঘরে ঢুকে জুতা বাম পাশে খুলে রাখা সুন্নত। 

৬. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা যতবার ঘরে যাবে ততবার অনুমতি নিবে এবং সালাম করবে। যদি ও সেটা আপন মায়ের ঘর হোক না কেন। 

৭. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে গিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতেন। রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে যেত তখন তিনি আস্তে আস্তে ঘরে প্রবেশ করতেন। 

৮. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে ঘরে ঢুকলে আস্তে প্রবেশ করতেন এবং মুচকি হাসতে হাসতে প্রবেশ করতেন যাতে ঘুমন্ত মানুষের অসুবিধা না হয় এবং জাগ্রত মানুষের ও শুনতে পান। (যাদুল মায়াদ)। 

৯. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে ঘরে ঢুকেই দুই হাত ধুয়ে কুরে করতেন এবং মিসওয়াক করতেন। 

অন্যের ঘরে প্রবেশের সুন্নততরীকাঃ

১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো ঘরে প্রবেশে করতে হলে ঠিক দরজার সামনে দাঁড়াতেননা বরং ডান বা বাম দিকে একটু সরে দাঁড়াতেন। এবং ঘরওয়ালাদের নিজের আগমেনর কতা জানানোর জন্য জোরে সালাম দিতেন। এভাবে শুনতে না পেলে ৩ বার সালাম দিতেন। অনুমতি না পেলে ফিরে আসতেন। 

২. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যের ঘরে এতো বেশি দেরী করতেননা যাতে গর ওয়ালাদের কষ্ট হয়। তিনি বলেছেন যদি কেউ অনুমিত ছাড়া তোমার ঘরে উঁকি মারে তবে তুমি পাথর মেরে তার চোখ নষ্ট করে দিলে তোমার কোনো গুনাহ হবেনা। 

ঘর হতে বের হবার সুন্নতঃ 

১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ঘর হতে বের হতেন তখন বিসমিল্লাহ বলে দরজা খুলতেন এবং বাম পা দিয়ে বের হতেন। 

২. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘর হতে বের হবার সময় নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করতেন- 

بِسْمِ اللهِ تَوَكّلْتُ عَلَى اللهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّ بِاللهِ

“বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ।” 

৩. উপরোক্ত দোয়া পাঠ করে বাম পা দিয়ে ঘর হতে বের হলে শয়তান বলে সে ব্যাক্তি আল্লাহর হেফাজতে চলে গেলো। (১) সে ব্যাক্তি ধর্মীয় সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়মানুসারে করতে পারবে। (২) বান্দা সকল পাপ কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। (৩) পার্থিব বিপদাপদ হতে মুক্তি থাকেবে। (৪) বান্দা এর দ্বারা আল্লাহর অভিভাবকত্ব পাবে। 

৪. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে ঘর থেকে বের হলে আস্তে আস্তে বিছানা হতে উঠতেন। আস্তে জুতা পরিধান করতেন এবং আওয়াজ ছাড়া বের হতেন এবং উপরের উল্লেখিত দোয়া পড়তেন। (তিরমিযী শরীফ)। 

৫. উচু স্থানে উঠার সময় ডান পা দিতেন এবং আল্লাহু আকবার বলতে নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং নিচে নামার সময় বাম পা দিতেন এবং সুবহানাল্লাহ বলতেন। 

পানি পান করার সুন্নত তরীকাঃ

১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানি ডান হাতে বসে পান করতে বলেছেন। দাঁড়িয়ে পানি ও হেঁটে পানি পান করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন। 

২. মাথায় কাপড় দিয়ে, পানি দেখে খেতে হবে। 

৩. প্রিতিবার পান করার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা এবং প্রতিবার শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা সুন্নত। এত আল্লাহতায়ালা খুব সন্তুষ্ট হন। 

৪. তিন শাসে পান করবে, আর শাস ছাড়ার সময় পাত্র সরিয়ে নিবে। 

৫. মশক, কলস ইত্যাদি পাত্রে (যার ভিতরে সাপ, বিচ্ছু থাকার বা প্রচুর পরিমানে পানি বের হবার আশংকা আছে) সরাসরি মুখ লাগিয়ে পান করবেনা। 

৬. শুধু পানি পান করতে নিম্নোক্ত দোয়া পড়া সুন্নতঃ- 

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ سَقَانَا عَذْبًا فُزَاتًا بِرَحْمَتِه وَلَمْ يَجْعَلْهٗ بِذُنُوْبِنَا مِلْحًا اُجَاجًا

“আলহামদু লিল্লাহহিল্লাযী ছকানা আজবান কুরাতান বিরহমাতিহী ওয়া লাম ইয়াজ আলহু বিযুনুবিনা মিলহান উজাজান।” 

৭. একই মজলিসে একাধিক ব্যক্তিকে পানি যদি পান করাতে হয় তাহলে ডান দিক থেকে শুরু করতে, এভাবে সকলকে দিবে। এরূপ চা শরবত ইত্যাদি পানীয দ্রব্যের বেলায় একই ভাবে নিয়ম বন্টকারী অর্থাৎ (পান করনে ওয়ালা) সবার শেষে পান করবে। 

৮. যমযমের পানি দাড়িয়ে কেবলামুখী হযে পান করবে। 

৯. দুধ পান করার পার নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করবেÑ 

اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ

“আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফীহি ওয়াজিদ না মিনহুম।”

১০. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানি চুষে চুষে গড়গড় করে পান করতেন এবং ব্যায়াম এর পর ক্লান্ত অবস্থায় খাদ্য অথবা ফল খাওয়ার কিংবা গোসলের পর পানি পান করাকে ভলো মনে করতেনা। (যাদুল মাআদ)। 

১১. যে জায়গায় সহজে পানি পাওয়া যায় সেখানে পিপাসার্ত ব্যক্তিকে পানি পান করালে গোলাম আজাদ করার সওয়াব হবে। আর যেখানে পানি পাওয়া যায়না সেখানে পিপাসার্ত ব্যক্তিকে পানি পান করালে মৃত্যুকে জীবন দান করার মতো সওয়াব পাবে। 

১২. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফল খাওয়ার সময় এই দোআ পড়তে আদেশ করেছেনঃ- 

اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ ثَمَرِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِىْ مَدِيْنَتِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِيْ صَاعِنَا وَبَارِكْلَنَا فِىْ مُدِّنَا.

আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি ছামারিনা ওয়া বারিকলানা ফি মাদিনাতিনা ওয়া বারিকলানা ফী ছঈনা ওয়া বারিকলানা ফি মুতিনা।” 

১৩. যমযমের পানি পান করার দোআঃ-

اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْئُلَكَ عِلْمًا نَّافِعًا وَّ اسعًا وَّ شِفَآ ءً مِّنْ كُلِّ دَآءٍ

আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা এলমান নাফিআঁও ওয়া রিঝক্বাও ওয়া ছিআঁও ওয়া সিফাআন মিনকুল্লিা দা—ইন।” 

১৪. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আখলাকগত সুন্ন তরীকাঃ-

ক. রাগস্থির করার সুন্নত তরীকাঃ-

  প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়ানো অবস্থায় বাগ হলে বসে পড়তেন এবং বসা অবস্থায় রাগ হলে শুয়ে পড়তেন এবং দুআ পাঠ করতেন-

اَعُوْ ذُبِكَلِمَا تِ اللهِ التَّآمَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

আউজুবি কালিমা তিল্লাহিওাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক এবং আউজুবিল্লাহি মিনাশশাইত্বনির রাজিম। 

খ. চিন্তার সময় সুন্নত তরীকাঃ

প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো চিন্তা যুক্ত হলে আকাশের দিকে মাথা তুরে এই দোআ বলতেনÑ “সুবহানাল্লাহীল আজিম” আর অত্যাধিক আবেগের সাথে বলতেন “ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইউম।”

২. হাসির সুন্নত তরীকাঃÑ প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লাম এর পবিত্র অভ্যাস ছিল যখনই হাসি দিতেন মুচকি হাসি দিতেন। কোনো রকম আওয়াজ হতো না। 

৩. ক্রন্দনের সুন্নত তরকিাঃ- প্রিয নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্রন্দনের সময় নেত্রদ্বয় অশ্রসজল হযে উঠত ও অশ্র প্রবাহিত হত। তবে কোনো আওয়াজ হতোনা কখনো রক্ষ মুবারক হতে ক্রন্দনের মৃদু আওয়াজ শোনা যেত। 

হাচি দেওয়া ও তার জবাবের সুন্নত তরীকাঃ

১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাচি এলে হাত বা কাপড় মুখ মুবারকে দিয়ে আওয়াজ ছোট করতেন এবং বলতেন আল্লাহতায়ালা হাই ও হাঁচিতে উচ্চওয়াজ করা অপছন্দ করেন। 

২. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন যখন তোমাদের কেউ হাঁচি দেয় তখন সে যেন اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ আলহামদুলিল্লাহ বলে এবং উপস্থিত লোকের يَرْحَمُكُمُ اللهُ ইয়ারহামুকুমুল্লাহ বলে। এরপর পুনরায় হাচিদাতা ইয়াহ্দীকুমুলুল্লাহু ইউস্লিহু বালাকুম বলে তার জবাব দিবে। বলে তার জবাব দিবে। 

৩. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন যদি কেউ হাঁচি দিয়ে আলহামদুল্লিাহ বলবে অন্য থায় বলবে না। 

৪. যদি হাঁচিদাতা আলহামদুলিল্লাহ বলে জানা যায় উপস্থিত লোকেরা শুনুক বা না শুনুক তাহলে তার জবাবে ইয়ারহামুকুমুল্লাহ না বললে গোনাহগার হবে। 

৫. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন কেউ যদি হাঁচিদিবার পর আলহামদুলিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে তার জবাব তো দিবেইনা, এমনকি তাকে স্বরনও করিয়ে দিবেনা। (যাদুল মায়াদ)। 

হাই দেওয়ার সুন্নত তরীকাঃ

১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাউ আসরে স্বীয় বাম হাত দ্বারা নিজের মুখ বন্ধ করে রাখতে নির্দেম দিয়েছেন। কেননা সে সময় শয়তান মুখের অভ্যান্তরে প্রবেশ করে। 

২. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাই আসরে “লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যুল আজিম বলতেন। 

মুসাফাহ করার সুন্নত তরীকাঃ

১. পরস্পর মহিলারা মোসাফাহ করা সুন্নত। 

২. একহাতে মুসাফাহ করা সুন্নতের খেলাফ ও কিয়ামতের আলামত। 

৩. মোসাফাহ করার পর চুমু খাওয়া বিদআত। 

৪. মোসাফাহ করার মাঝে কাপড় বা অন্য কিছু রেখে অন্তরায় সৃষ্টি করা ঠিক নায়। 

৫. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যতক্ষণ কেউ হাত না ছাড়াত ততক্ষণ তিনি ছাড়িয়ে নিতেননা এবং মুসাফাহ করার সময় তার সামনে সামান্য নুয়ে পড়া সুন্নতের খেলাফ। 

৬. নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ কররে উভয় হাত আলাদা হবার আগে গোনাহ উভয়েরই মাফ হয়ে যাবে। 

يَغْفِرُ اللهَ لَنَا وَلَكُمْ

দোআটি- “ইয়াগফিরুল্লাহা লানা ওয়ালাকুম” সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া মুহাম্মদ।

৭. মুসাফাহার পর নিজের হাতে চুমু খাওয়া বা নিজের হাত বুকে লাগানো সুন্নতের খেলাফ। 

৮. কারো সাথে মুসাফাহার সময় এমন সময়হাত বাড়াবেনা যখন সে কোনো কাজে ব্যস্ত।

৯. বিদায়ের সময় গালে চুমু দেওয়া বিদআত। 

১০. কদমবুচী করা বিদআত বা মাকরুহ। 

নখ কাটার সুন্নত তরীকাঃ

১. প্রথমে ডান হাতের নখ কাটবে। ডান হাতের শাহাদাত আংগুল থেকে কনিষ্ঠাঙ্গুল পর্যন্ত কাটবে। 

২. অতঃপর বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল হতে শুরু করে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল সহ নখ কাটবে। 

৩. পায়ের নখ কাটার সময় ডান পায়ের কনিষ্ঠা আংগুল হতে শুরু করে বৃদ্ধাংগুল পর্যন্ত কাটা। অতৎপর বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল হতে শুরু করে কিনষ্ঠাঙ্গুল পর্যন্ত কাটবে। 

৪. শুক্রবার নখ কাটা সুন্নত। 

৫. বুধবার নখ কাটলে কুষ্ঠরোগ হয়। 

৬. হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যাক্তি জুমার দিন নখ কাটবে পরবর্তী জুম্মা পর্যন্ত সকল মুসীবত থেকে আল্লাহ তায়ালা তাকে হেফাজত করবেন। 

৭. মহিলাদের নখ সাদা রাখতে নেই। নখের মেহেদী লাগনো সুন্নত। (আবু দাউদ)। 

তেল লাগানোর সুন্নত তরীকাঃ

১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ সময় তেল ব্যবহার করতেন। এতো পরিমানে ব্যবহার করতেন যে তেলের কারনে মাথার উপরের কাপড়টি কালো হয়ে যেতো। 

২. শিশি থেকে বাম হাতের তালুতে তেল ঢালতেন। তারপর যেখান থেকে ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা ডান চোখের পাপড়িতে এবং বাম চোখের পাপড়িতে অতঃপর ডান চোখে এবং বাম চোখে লাগাতেন। অতৎপর মাথা মোবারকে তেল লাগানোর সময় প্রথমে ডান দিক থেকে শুরু করতেন। 

৩. শরীরে তেল লাগানোর সময় ডানদিন হতে শুরু করতেন। 

৪. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবৃদাই সমস্ত ভালো কাজ ডান দিক হতে শুরু করতেন এবং সমস্ত খারাপ কাজ বাম দিক হতে শুরু করতেন। যেমন: নাকঝাড়া, জুতা স্যান্ডেল, আবর্জনা ফেলা প্রভৃতি কম হাতে করতেন। 

৫. শরীরে তেল লাগানোর সময় দুই হাতের ডান হাত এবং দুই পায়ের ডান পা এবং শরীরের ডান হাত এবং দুই পায়ের ডানপা এবং শরীরের ডান দিক হতে শুরু করা সুন্নত। 

চিরুনী কারার সুন্নত তরীকাঃ

১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সাল্লাম ডান দিক থেকে চিরুনী ব্যবহার করতেন। প্রথমে সিঁথি ছাড়াই চুল পরিপাটি করতেন। পরবর্তীতে মাথার মাঝে সিঁথি করতেন সুন্নত। একদিন অন্তর অন্তব চিরুনী করতেন। প্রথমে মাথায় তেল দিয়ে এরপর চিরুনী করতেন। 

আতর ব্যবহার করার সুন্নত তরীকাঃ

১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় আতর ব্যবহার করতেন। দুই ঈদের দিন, জুম্মার দিন এবং কোনো মজলিসে শরীক হওয়ার ইচ্ছা করলে আতর লাগিয়ে তাশরীফ নিতেন। 

২. আতর ব্যবহারের সুন্নত তরীকা হচ্ছে বাম হাতে শিশি বা আতরদানী নিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের গোড়ার দিকে উঁচু গোসতের উপর আতর লাগাতেন। তারপর দুই হাত ঘষে প্রথমে চেহারায় এরপর দুই হাত দুই বগরে ডলে নিতে হবে। 

সুরমা লাগানোর সুন্নত তরীকাঃ

১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে ঘুমানোর আগে তিনবার সুরমা লাগাতেন। 

২. রাতে সুরমা লাগানো সুন্নত। 

৩. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডান চোখে তিনবার বামচোখে দুইবার সুরমা লাগাতেন। 

৪. প্রতিবার লাগানোর সময় নতুন ভাবে সুরমা কাঠিতে লাগাতে হবে এবং বিসমিল্লাহ পাঠ করবে। 

** আয়না দেখার সুন্নত তরীকাঃ

১. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আয়না দেখতেন তখন এই দোয়া পাঠ করতেন।

اَللّٰهُمَّ حَسَّنْتَ خَلْقِيْ فَاَحْسِنِ خُلُقِيْ وَ اَوْسِعْ فِيْ رِزْقِيْ

“আল্লাহুম্মা হাসসানতা খ¦লকী ফা আহমিন খ¦লকী, ওয়া আওসি ফি রিসকী। 

অর্থঃ হে আল্লাহ। আপনি যেমন আমাকে সুন্দর সৃষ্টি করেছেন, তেমন আমার চরিত্রকে ও সুন্দর করে দিন এবং রিজিকের প্রশস্ততা দান করুন। 

নিদ্রা যাওয়ার সুন্নত তরীকাঃ

প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো কোনো সময় লেজুরের বিছানা, মাটির চৌকি ও চামড়ার উপর শয়ন করতেন।  

১. ওজু অবস্থায় ঘুমানো সুন্নত। 

২. শয়নের পূর্বে কাপড় দ্বারা বিচানা ঝেড়ে নেওয়া সুন্নত। 

৩. শয়নের পূর্বে কাপড় পরিবর্তন করে নেয়া সুন্নত। 

৪. শয়নের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে নিম্নের কাজগুলো করা সুন্নত। 

ক. ঘরের দরজা বন্ধ করা। খ. বাতি নিভিয়ে দেয়া। গ. খাদ্যদ্রব্যের পাত্রের মুখ ঢেকে রাখা। 

ঘ. পাত্রের ঢাকনা না থাকলে একটি কাঠি বিসমিল্লাহ বরে উপরে রেখে দিলে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। 

৫. এশার নামাযান্তে অযথা গল্প গুজব করা নিষিদ্ধ। তবে ওয়াজ নসীহত চাকুরী ইত্যাদির জন্য জাগ্রত থাকায় অসুবিধা নেই। 

৬. নিদ্রার পূর্বে উভয় চোখে তিনবার সুরমা দেয়া সুন্নত। 

৭. শোয়ার সময় ডানপাশে কেবলামুখী হয়ে ঘুমানো সুন্নত। (উপুড় হয়ে ঘুমাবেনা, এভাবে শয়তান ঘুমায়, ডাক্তারী মতে কিডনীর সমস্যা হয়। 

৮. দুপুর বেলা একটু শোয়া সুন্নত। ডন কাতে ৬ বার, বামকাতে ৯ বার চিত হয়ে ১২ বার সুবহানাল্লাহ পড়লে ১ কোটি নেকী লিখা হয়।

৯. চাই খাওয়া হোক বা না হোক। একে কাইলুলা বলে। এতে সারারাত্রি এবাদতের নেকী লাভ হয়। 

১০. নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে কমপক্ষে ১০টি কোরআন কারীমের আয়াত পাঠ করবে। এতে পূর্ণ রাত্রি এবাদতের সওয়াব হবে। আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে। এতে জীন ও মানব তার কিছুই করতে পারবেনা। 

১১. শোয়ার সময় প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নলিখিত আমলগুলো করতে বলেছেন। 

ক. চারবার সূরা ফাতিহা পড়লে চার হাজার দিনার সদকা আদায় হয়ে যাবে। 

খ. তিনবার সূরা এখলাস পড়ে ঘুমালে এক খতম কোরআন পড়ার সওয়াব পাবে। 

গ. তিনবার দরুদ শরীফ পড়লে জান্নাতের মূল্য আদায় হয়ে যাবে। 

ঘ. দশবার ইস্তেগফার পড়লে উভয়ের বিবাদ মিটানোর সওয়াব পাবে। 

ঙ. চারবার কালেমায়ে তামজীদ সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়ালা—ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, পড়লে হজে¦র সওয়াব পাবে। 

চ. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমাতে গেলে ১ বার ফালাক, ৩ বার নাস পড়তেন। অতঃপর উভয় হাতকে একত্রিত করে ফঁ দিতেন এবং হাত দ্বয় সমস্ত শরীরে যতদুর সম্ভব বুলিয়ে নিতেন। এভাবে তিন বার করতেন। (বুখারী)।

১২. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি প্রতি ফজজ নামাযের পর ১০বার সুবহানাল্লাহ, ১০ বার আলহামদুলিল্লাহ ১০ আল্লাহু আকবর এবং রাতে ঘুমানোর সময় ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবর পাঠ করবে যে ব্যাক্তি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। যদিও ইহা পাঠ কারীর সংখ্যা হবে খুবই কম। 

১৩. ১ বার সূরা কাফিরুন পাঠ করলে শিরকের গুনাহ মাফ হবে। 

১৪.৩ বার পাঠ বারবেÑ আস্তাগফিরুল্লাহিল্লা যীলা Ñইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি। তাহলে সমুদ্রের ফেনা সমান গোনাহ থাকলেও মাফ হয়ে যাবে। 

১৫. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া দুই আয়াত রাতে ঘুমানোর সময় পড়বে এটা তার জন্য যথেষ্ট হবে। (বুখারী)।

১৬. বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম ২১ বার পাঠ করলে পাঠকারীর প্রতিটি স্বাথে ফেরেস্তা নেকী লিখবে। 

১৭. আল কারীমু পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেলে আউলিয়ার খাতায় নাম যাবে। 

১৮. সূরা দোখান জুম্মার রাতে পাঠ জুম্মার রাতে পাঠ করলে সকাল হবার আগেই সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। 

১৯. তাহাজ্জুদ নামাজে অন্তত ১০ আয়াত পাঠ করলে গাফেলদের খাতার নাম থাকেবন। 

২০. রাতে সূরা মুলক, সুরা সিজদাহ, পড়া সুন্নত। 

২১. খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখলে তিনিটি কাজ করতে (হবে ১) আউজুবিল্লাহিজ মিনাশ শাইতোনির রাজিম। (২) বামদিকে —৩ বার থুথু ফেলতে হবে (৩) পার্শ্ব বদলিযে শুতে হবে। 

২২. ১ বার তাকাসুর পড়বে। কুলিল্লাহুম্মা পাঠ করবে। (সূরা আলে ইমরান) 

২৩. সবাইকে মাফ করে ঘুমাবে। 

২৪. প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ঘুম যেতেন তখন ডান হাত মাথার ডান পার্শ্বের নিচে রেখে এই দুয়া পাঠ করতেন- 

اَللّٰهُمَّ بِاِسْمِكَ اَمُوْتُ وَاَحْىٰ

“আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহ—ইয়া”। 

২৫. শোয়ার সময় ৩ বার বালিশে মাথা রেখে পড়া সুন্নতÑ 

رَبِّ قِنِىْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ

রাব্বী ক্বিনী আযাবাকা ইয়াওমা তাবআসু ইবাদাকা। অর্থঃ হে আল্লাহ! যেদিন আপনি আপনার আযাব থেকে রক্ষা করিয়েন। 

২৬.যে ব্যক্তি সুরা আল ইমরানের শেষ রুকু (১৮৯—২০০) আয়াত পর্যন্ত পাঠ করবে ফেরেস্তারা সারা রাত নামাযে রাত কাটানোর সওয়াব তার আমল নামায় যাবে। (সুনানে দারেমী)। 

২৭. তাহাজ্জুদ নামায ১ম রাকাতে ছোট সুরা দিয়ে পড়া সুন্নত। 

লাল দস্তর খানার গুরুত্ব ও ফযীলতঃ-

এটা প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম সুন্নত। হযরত ইসা (আঃ) এর দস্তরখানা লাল ছিল। সেট আসমান হতে অবতীর্ণ হয়েছিল। যে ব্যক্তি লাল দস্তরখানে আহার করবে তার প্রতি লোকমার প্রতিদানে একশ করে সওয়াব পাবে এবং বেহেশতের ১০০টি দরজা তার জন্য নির্ধারিত হবে। এবং সে হাজার হাজার নবীদের সালাম এবং দোয়া পাবে। যে ব্যক্তি লাল দস্তরখানায় কোন গরবি্ দুঃখীকে আহার করাবে তার জন্য শ্রেণ্ঠ প্রতিদান তার আমল নামায় লিখা হবে এবং যখন তার রুটি খাওয়া শেষ হবে। তখন আল্লাহ তায়ালা তার পুঞ্জিভূত গোনাহগুলো মাফ করে দিবেন। সে লাল দস্তরখানায় রুটি খাবে সে হজ্জ্ব ও ওমরার সওয়াব পাবে এবং ১০০০ ক্ষধার্তকে পেট ভবে খাওয়ানোর সওয়াব পাবে। সে ব্যক্তি এত বেশি সওয়াব দেয়া হবে যেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের মধ্যে হাজার বন্দী কে মুক্ত করালেন। হযরত ঈসা (আঃ) এবং মুসা (আঃ) কখন ও লাল দস্তর খানা ছাড়া আহার করতেননা। যে ব্যক্তি লাল দস্তরখানায় মেহমানকে খানা খাওয়াবে সে প্রতিটি দানার প্রতিদানে হাজার নেকী পারে। রোজ হাশরে জিব্রাইল (আঃ) তার জন্য বেহেশতী পোশাকসহ বোরাক নিয়ে আসবে, বোরাকে উপবেশন করিয়ে এবং পোশাক পরিয়ে বেহেশতে নিয়ে যাবেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে রহমতের নজরে দেখেন এবং বেহেশতের হাজারটা প্রকোষ্ঠ দান করবেন। 

স্ত্রীর উপর স্বামীর হক আদায়ের সুন্নতঃ

১। স্বামীর আনুগত্য ও খেদমত করা। তবে পাপ কাজে আনুগত্য করবেনা। 

২। সাধ্যের বাইরে কোন কিছু দাবী না করা। 

৩। স্বামীর অপছন্দ এমন কোন পুরুষ বা নারীকে তার অনুমতি ব্যাতিত ঘরে আসতে না দেওয়া। 

৪। অনুমতি ব্যাতিত ঘর হতে বের না হওয়া। 

৫। স্বামীর অর্থ সম্পদ হেফাজত করা। 

৬। শারিরিক চাহিদা পূরনের জন্য ডাকলে সাড়া দেয়া। 

৭। স্বামীর মধ্যে শরিয়তের খেলাফ কিছু দেখলে আদবের সাথে সংশোধন করা এবং দ্বনিদার বানানো। 

৮। সেজে গুজে পরিপাটি হয়ে হাসি খুশি থাকা। 

৯। সফর থেকে বাহির থেকে কাজ করে আসলে খোঁজ খবর নেয়া। 

১০। সর্বাবস্থায় স্বামীর শুকরিয়া আদায় করা। 

১১। আদব ও সম্মান রক্ষা করে চলা, ঝাঁঝালো স্বরে কথা না বলা। 

১২। স্বামীর খেদমত খুশি মনে করা। 

১৩। স্বামী বলার আগে খেদমত করলে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ দান করার সওয়াব হবে। এবং বলার পরে খেদমত করলে সাড়ে সাত তোলা রুপা আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব হবে। 

১৪। কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বামীর কাপড় ধৌত করে প্রতি ফেঁাটা পানিতে হাজার নেকী লেখা হয় এবং হাজার বদী কাটা যায়, সূর্যের আলোক প্রাপ্ত সমস্ত কিছু তার জন্য এস্তেগফার করতে থাকে ও আল্লাতায়ালা তার সম্মান এক দরজা বাড়াইয়া দেন।

১৫। যে স্বামীকে দেখিলেই খুশি হইয়া সামনে আসে এবং মারহাবা বলে সন্তোষ প্রকাশ করে সে ডিহাদের অর্ধেক সওয়াব পাইবে। 

১৬। যে মেয়েলোক তার স্বামী কতৃর্ক গর্ভবতী হয়, তখন হইতে প্রসব বেদনা উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত সর্বদা সে দিনে রোজা রাখা ও রাত্রে নফল নামায পড়ার ছওয়াব পাইতে থাকে। 

১৭। কবরে প্রথম নামাযের পর স্বামীর হক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। 

** যানবাহনে আরোহনের সুন্নত তরীকাঃ

১. সফরে রওয়ানা হবার পূর্বে ২ রাকত নফল নামাজ পড়ে নেয়া সুন্নত। 

২. কমপক্ষে ২জন সফর করা সুন্নত। 

৩. ঘর হতে বের হবার সময বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহী ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ পাঠ করা। 

৪. আর এ দুআ পাঠ করবে:-

আল্লাহুম্মা বিকা আছুলু ওয়াবিকা আহূলু ওয়া বিকা আছীরু।” 

৫. যখন সওয়ারীর পিঠে পা দিবে তখন ডান পা উঠাবে এবং বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলবে। 

৬. অতঃপর বাহনে স্থির হয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলা সুন্নত। 

৭. অতঃপর এ দোয়া পাঠ করবে সূরা যখরুখেরর নিম্নোক্ত আয়াত-

سُبْحَانَ الذِّىْ سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَاكُنَّا لَهٗ مُقْرِنِيْن وَ اِنَّا اِلٰى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنْ ـ

“ আলহামদুলিল্লাহি্ সুবহানাল্লাযী ছাখখারলানা হাযাওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনীন ওয়া ইন্না ইলা রব্বিলা লা মুনক্বলিবূন। 

৮. অতঃপপর তিনবার আলহামদুলিল্লাহ, তিনবার আল্লাহু আকবর পাঠ করবে। 

৯. অতঃপর নিম্নোক্ত দুআ পাঠ করতঃ আকাশের দিকে তাকিয়ে মুছকি হাসি দিবে। দুআটি এইঃ— সুবহানাকা ইন্নি যলামতু নাফসী ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুযযুনুবী ইল্লা আংতা। 

১০. বাহন উপরে উঠার সময় আল্লাহু আকবার এবং নিচে নামার সময সুবহানাল্লাহ পড়বে। 

১১. পূর বা ব্রীজ অতিক্রমের সময় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ অথবা ইয়া রব্বিগ সাল্লিম সাল্লিম পাঠ করবে। 

১২. নৌকা বা পানি পথে সফর করার সময় গাড়িতে উঠার অন্যান্য সুন্নত আদায় করার সাথে সাথে নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবে- 

سَبْحَانَكَ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْلِيْ فَاِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ.

বিসমিল্লাহি মাজরিহা ওয়া মুরছাহা ইন্না রব্বী লাগাফুরুর রহীম।” 

১৩. গন্তব্য স্থলে পেঁাছার পর পড়বেÑ

أعُوذُ بِكَلِماَتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطاَنٍ وَهاَمَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ

আউজুবি  কালিমা তিল্লাহিত্তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক। (মুসলিম শরীফ)। 

১৪. যখন গন্তব্যস্থলে কোন শহর বা গ্রামে প্রবেশের ইচ্ছা করবে তখন দুআ পাঠ করবেÑ 

اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهَا

“আল্লাহুম্মা বারিকলানাফীহা।” 

১৫. দূরের সফর হতে এল বাড়িতে সংবাদ দিয়ে প্রবেশ করা সুন্নত। 

১৬. সফর হতে প্রত্যাবর্তনের সময় এ দুআ পাঠ করবেÑ 

آئِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ

আইবূনা তাইবূনা আবিদূনা লিরব্বিনা হামিদূন। (বুখারী শরীফ)। 

১৭. সফর হতে ফিরে ২ রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত। 

ঐানবাহন হতে নামার সময় বাম পা দিয়ে বিসমিল্লাহ বলে নামা। নামার পূর্বের দোয়া—

رَبِّ اَنْزِلْنِيْ مَنْزِلًا مُّبَارَكًا وَّاَنْتَ خَيْرُ الْمُنْزِلِيْنَ

রব্বী আংঝিলনী (মিশকাত শরীফ)। 

** বয়ান শুনার সুন্নত সমূহঃ 

১. খুব দৃঢ়তার সাথে শুনা। 

২. খুব ধ্যান খেয়ালের সাথে শুনা। 

৩. শুনার সাথে সাথে মানার পাক্কা নিয়ত করা। 

৪. অপরের নিকট পৌঁছানো নিয়তে শুনা। 

৫. আল্লাহতায়ালার ওয়াদা কেউ যদি ধ্যান খেয়ালের সাথে বয়না শুনে মহান আল্লাহ অবশ্যই তাকে হেদায়েত দিবেন ইনশাল্লাহ। 

প্রতিবেশির হকঃ

১. অসুস্থ হলে খেদমত করা। 

২. মারা গেলে জানাযার ব্যবস্থা করা। 

৩. কর্জ চাইলে দেয়া। 

৪. বিপদের সময় সন্তানা দেয়া। 

৫. নিজের বাড়ি প্রতিবেশির চেয়ে অধিক উঁচু না করা। যার ফলে সে আলো বাতাস থেকে বঞ্চিত না হয়। 

৬. বস্ত্রহীন হলে বস্ত্র দেয়া। 

৭. নিজের বাড়ির ধোয়া পানি ইত্যাদি দ্বারা কষ্ট না দেয়া। 

৮. সাহায্য চাইলে সাহাস্য করা। 

৯. কষ্ঠ পেলে সবর করা। 

১০. বিবি, সন্তানাদি ও জীব জন্তুর হেফাজত করা।

১১. বিশেষ কোনো রান্না বা ফলের ব্যবস্থা হলে হাদিয়া দেয়া হলে হাদিয়া দেয়া। সম্ভব না হলে গোপনে খাওয়া। 

১২. তার অনুমতি ব্যাতিত ময়রা আবর্জনা বাড়ির আশে পাশে ফেলে দুর্গন্ধের কষ্ট না দেওয়া। 

১৩. প্রতিবেশি সংগে খারাপ ব্যবহার কারী জাহান্নামে যাবে। 

কতিপয় সুন্নত সমূহঃ 

১. বৃষ্টির হওয়ার সময় পড়বে আল্লাহুম্মা ছয়্যাবান ন্নাফীআন। 

২. বেশি বৃষ্টি হলে পড়বে আল্লাহুম্মা হাওলাইনা ওয়ালা আলাইনা। 

৩. নতুন চছাদ দেখলে পড়বে-

আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিলআমলী ওয়ালা ঈমানী ওয়াসালামাতি ওয়াল ইসলামী রব্বী ওয়া রব্বুকাল্লাহ। 

অর্থঃ— হে আল্লাহ! আপনি এ চন্দ্রকে বরকত ঈমান এবং শান্তি ও ইসলামের সাথে উদিত করুন। (এবং হে চাঁদ) আমার ও তোমার প্রতিপালক এক আল্লাহ। (তিরমিযী শরীফ)। 

অসুস্থ লোক দেখতে গেলে পড়বে-

অর্থ আমি আরশের আযীমের মালিক মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট সুস্থতার কামনা করছি। 

দুআঃ আসআলুল্লাহাল আজিমা রব্বাল আরশির আজিম আইয়্যাশফিইয়্যাকা। 

** যখন বিয়ে হয়ে যাবে তখন বর ও কনের জন্য এ দোয়া পড়া সুন্নতঃ

বারাকাল্লাহু লাকা ওয়া বারাকাল্লাহু আলাইকা ওয়া জামা’আ বাইনাকুমা ফী খাইরিন। 

** বিবাহের পর স্ত্রীর সাথে যখন সাক্ষাত হয় তখন প্রথমে বিবির কপালের চুল ধরে এই দোয়া পড়া সুন্নাত। 

দুআ আল্লাহুম্মা ইন্নি আছআলুকা মিন খাইরিহা ওয়া খাইরিমা জাবালতা হা আলাইহি ওয়া আউজুবিকা মিরশাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা আলাইহি। 

** সবজি কাটা দুআ পিঁয়াজ গোল করে কাটা সুন্নত। প্রতিটি তরকারী বা যে কোন জিনিস ৩ বার দরুদ শরীফ বিসমিল্লাহ বলে ৩ বার ধোয়া সুন্নত। যে কোন ভালো কাজ ডান হাতে করা এবং খারাপ ডান হাতে করা সুন্নত। তরকারী কাটার দোয়া “ ফামা বাহুহা ওমা কাদু ইয়াফ আলুন। 

মিসওয়াকের ফযীলত সমূহঃ

প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন যদি আমার উম্মতের জন্য কঠিন হওয়ার আশংকা না হত তবে আমি প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করা ওয়াজীব করে দিতাম। (বুখারী, মুসলিম)। 

অন্যত্র বর্ণিত আছে, হযরত জিব্রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম যতবার আগমন করেছেন ততবার মিসওয়াক করার নির্দেশ দিয়েছেন। মিসওয়াকের সত্তরটি উপকারীতা রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট ফায়দা হচ্ছে মওতের সময় কলেমা নসীব হওয়া। 

হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন মিসওয়াক করে নামায পড়লে ২ রাকাতে ৭০ গুন বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। 

হযরত আব্বাস (রাঃ) হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত আতা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মিসওয়াক করে নামাজ পড়লে সেই নামাযের সওয়াব নিরানব্বই থেকে চারশতগুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। 

হযরত হাসান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে ওজু ঈমানের অর্ধেক এবং মিসওয়াক ওজুর অর্ধেক। 

হযরত আলী (রাঃ) বলেন মিসওয়াক করার ফলে স্বরণশক্তি বেড়ে যায় এবং বা কফদুর হয়। 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহঃ) মিসওয়াকের বরকতে যুদ্ধেবিজয় লাভ করেন। মিসওয়াক করলে ফেরেস্তা মোসাফাহ করেন। বর্ণিত আছে, হযরত ইব্রাহিম নাখয়ী (রহঃ) যা কিছু পড়তেন এবং মুখস্ত করতেন সব ভুলে যেতেন।  এক রাত্রিতে তিনি প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখলেন এবং জিজ্ঞাসা করেনÑ “হে আল্লাহর রাসুল! আমি যা কিছু পড়ি স্বরণ থাকেনা। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেনে, হে ইব্রাহিম কয়েকটি জিনিষের উপর আমল করবে, কম খাবে, কম ঘুমাবে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করবে। বেশী বেশী নফল পড়বে, প্রত্যেক নামাযের জন্য মিসওয়াক করবে এবং প্রত্যেকবার ওজুর সময় মিসওয়াক করবে। হযরত ইব্রাহিম নাখয়ী (রহঃ) বলেন আমি ঘুম হতে জাগ্রত হয়ে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ অনুযায়ী আমল আরম্ভ করলাম এবং কিছু দিনের মধ্যেই আল্লাহ তায়ালা আমাকে সবার মুরব্বী বানিয়ে দিলেন। 

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন মিসওয়াক মৃত্যু ব্যাতিত সকল রোগের আরোগ্য দানকারী। 

মিসওয়াকের আদবের প্রতি ভ্রম্নক্ষেপ না করা অত্যন্ত ক্ষতি কর। ওলাময়ে কেরাম লিখেছেনÑ 

“যে ব্যাক্তি আদব পালনে অলসতা করে তাকে সুন্নত পালন করা থেকে বঞ্চিত করা হয়, যে ব্যাক্তি সুন্নত পালনে অলসতা করে তাকে ফরজ পালনে বঞ্চিত করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ফরজ পালনে অলসতা করে তাকে পরকালের নিয়ামত হতে মাহরুম বা বঞ্চিত করে দেয়া হয়। 

অতএব মানুষ যে পর্যন্ত আদব সমূহের হেফাজত করে, ততক্ষন পর্যন্ত শয়তান তাকে ধেঁাকা দেবার চেষ্টা করেনা। আদব ছেড়ে দিলে শয়তান তাকে ফরজ সুন্নত, মুস্তাহাব ওয়াজিব নষ্ট করে তাকে দ্বীন থেকে বের করে দেয়। বুযুর্গানেদ্বীন সবসময় আদব ও সুন্নতের বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দান করেছেন। আবু হানিফা (রহঃ) শুধুমাত্র একটি আদম ছুটে যাওয়ার কারনে চল্লিশ বছরের নামায পুনরায় পড়েছেন। 

মিসওয়াক কেমন হওয়া সুন্নতঃ

১. মিসওয়াক গাছের ডাল দ্বারা হওয়া সুন্নত। 

২. পিলু বা যয়তুন গাছের ডাল হওয়া উত্তম। তবে বিষাক্ত গাছের ডাল বা যে  ডাল দ্বারা মিসওয়াক করতে কষ্ট হয় সেটি ব্যবহার উচিত নয়। 

৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পিলু বৃক্ষের প্রশংসা করেছেন। মিসওয়াক অর্ধ হাত পরিমান হওয়া এবং আঙ্গুলের চেয়ে মোট না হওয়া সুন্নত। 

মিসওয়াক ধরার সুন্নত তরীকাঃ

১. কনিষ্ঠ আঙ্গুল মিসওয়াকের নিচে থাকবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুল উপরের দিকে মিসওয়াকের মুখের নিচে থাকবে। বাকী আঙ্গুল গুলো মিসওয়াকের উপরে থাকবে। 

২. হাতের মুঠোয় মধ্য রেখে মিসওয়াক করা নিষেধ। এতে অশ^ রোগ হবার আশংকা করয়েছে। 

৩. হাকিম তিরমিযী (রাহঃ) থেকে বর্ননা করেছেন যে, বাম হাতে মিসওয়াক করা শয়তানের কাজ। 

মিসওয়াক ধরার নিয়মঃ

মিসওয়াক করার সময় নিয়ত করতে হবে, হে আল্লাহ! আমি আমার মুখ নামায, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির করার জন্য পরিত্র করছি। 

দোয়াঃ আল্লাহুম্মা বারিকলী ফিহ। 

ফযীলত পূর্ণ মহান আল্লাহর নাম সমূহ- 

১. আল্লাহু জাল্লা জালালুহু। (আল্লাহ তায়ালার শান অতি মহান)।
২. আর রাহমানু জাল্লা জালালুহু। (পরম দয়ালু তাঁহার শান অতি মহান)
৩. আর—রহীমু জাল্লা জালালুহু। (পরমকরুনাময় তাঁহার শান অতি মহান)।
৪. আল মালিকু জাল্লা জালালুহু। (বিচার দিবসে অধিপতি তাঁহার শান অতি মহান)।
৫. আলকুদ্দুসু জাল্লা জালালুহু। (অতি পবিত্র তাঁহার শান অতি মহান)।
৬. আস সালামু জাল্লাজালালুহু। (শান্তি দাতা তাঁহার শান অতি মহান)।
৭. আল মু’মিনু জাল্লা জালালুহু। (আশ্রয়দাতা তাঁহার শা অতি মহান)।
৮. আল মুহাইমিনু জাল্লাজালালুহু। (রক্ষাকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৯. আল’ আযীমু জাল্লাজালালুহু। (পরাক্রমশালী তাঁহার শানঅতি মহান)।
১০. আল জাব্বারু জাল্লাজালালুহু। (সর্বশক্তিমান তাঁহার শান অতি মহান)।
১১. আলমুতাকাব্বিরু জাল্লাজালালুহু। ( গর্বের অধিাকারী তাঁহার অতি মহান)।
১২.আল খলিক্বো জাল্লাজালালুহু। (সৃষ্টিকর্তা তাঁহার শান অতি মহান)।১৩. আল কাবিউ জাল্লাজালালুহু। (সৃজনকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
১৪. আল মুসাব্বিরু জাল্লাজালালুহু। (শ্রেষ্ঠ শিল্পী তাঁহার শান অতি মহান)।
১৫. আল গাফফারু জাল্লা জালালুহু। (পরম ক্ষমাশীল তাঁহার শান অতি মহান)।
১৬. আল কহহারু জাল্লাজালালুহু। (মহা শক্তিশালী তাঁহার শান অতিমহান)।
১৭. আল ওয়াহ্হাবু জাল্লাজালালুহু। (মহান দাতা তাঁহার শান অতি মহান)।
১৮.আররজ্জাক্বো জাল্লাজালালুহু। (শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা তাঁহার শান অতি মহান)।
১৯. আল ফাত্তাহু জাল্লাজালালুহু। (মহা বিজয়ী তাঁহার শান অতি মহান)।
২০.আল আলীমূ জাল্লা জালালুহু। (মহাজ্ঞানী তাঁহার শান অতি মহান)।
২১. আল ক্বাবিদ্বো জাল্লাজালালুহু। (অবরোধকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
২২.আল্ বাসিতু জাল্লা জালালুহু। (প্রসারকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
২৩.আল খাফিদ্বো জাল্লা জালালুহু। (পতনকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
২৪.আর—রাফিউ জাল্লাজালালুহু। (উচ্চাসনকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
২৫.আল মু’ইযযু জাল্লাজালালুহু। (সম্মান দাতা তাঁতাহার শান অতি মহান)।
২৬.আল মুজিল্লো জাল্লা জালালুহু। (অপমান দাতা তাঁহার শান অতি মহান)।
২৭.আস সামী’উ জাল্লাজালালুহু। (সর্বশ্রেষ্ঠ শ্রোতা তাঁহার শান অতি মহান)।
২৮.আল বাসীরু জাল্লা জালালুহু। (সর্বদ্রষ্টা তাঁহার শান অতি মহান)।
২৯. হাকামু জাল্লাজালালুহু। (সুবিচারক তাঁহার শান অতি মহান)।
৩০.আল ‘আদলু জাল্লাজালা‘লুহু। (শ্রেষ্ঠ বিচারপতি তাঁহার শান অতি মহান)।
৩১.আল লাতিফু জাল্লা জালালুহু। (সুক্ষ দর্শক তাঁহার শান অতিমহান)।
৩২.আল খারীরু জাল্লা জালালুহু। (শ্রেষ্ঠ সংবাদদাতা তাঁহার শান অতি মহান)।
৩৩.আল হালীমু জাল্লা জালালুহু। (বৈর্য্যশীল তাঁহার শান অতি মহান)।
৩৪. আ ‘আজীমু (তাঁহার শ্রেষ্ঠতম শান অতি জাল্লাজালালুহু মহান)।
৩৫. আল গাফূর জাল্লা জাল্লালুহু। (শ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল তাঁহার শান অতি মহান)।
৩৬.আশ্ শাকূরু জাল্লাজালালুহু। (কৃতজ্ঞদের প্রতি অধিকদাতা তাঁহার শান অতি মহান)।
৩৭. আল “আলিইয়্যু জাল্লাজালালুহু। (বৃহৎ তাঁহার শান অতি মহান)।
৩৮.আল কাবীরু জাল্লাজালালুহু। (মহান তাঁহার শান অতি উচ্চ)।
৩৯.আল্ হাফীজু জাল্লাজালালুহু। (মহান রক্ষাকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৪০.আল্ মুকিতু জাল্লাজালালুহু। (জীবিকা প্রদানকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৪১. আল্ হাসবিু জাল্লাজালালুহু। (হিসাব নিকামের কর্তা তাঁহার শান অতি মহান)।
৪২.আল্ জালীলু জাল্লাজালালুহু। (মহা মহিম তাঁহার শানঅতি মহান)।
৪৩.আর্রাক্বীবু জাল্লা জালালুহু। (প্রহরী তাঁহার শান অতি মহান)।
৪৫.আল্ মুজীবু জাল্লাজালালুহু। (প্রার্থনা কবূলকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৪৬. আল ওয়ামি’উ জাল্লাজালালুহু। (প্রশস্থকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৪৭. আল হাকীমু জাল্লাজালালুহু। (কৌশলবিদ তাঁহার শান অতি মহান)।
৪৮. আল ওয়াদূদু জাল্লাজালালুহু। (শ্রেষ্ঠ বন্ধু তাঁহার শান অতি মহান)।
৪৯. আল মাজীদু জাল্লাহালালুহু। (শ্রেষ্ঠ যুযুর্গ তাঁহার শান অতি মহান)।
৫০. আল বাইছু জাল্লাজালালুহা। (আবির্ভাবকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৫১. আশ্ শাহীছু জাল্লাজালালুহু। (শ্রেষ্ঠ সাক্ষী তাঁহার শান অতি মহান)।
৫২. আল্ হাক্বক্বো জাল্লাজালালুহু। (পরম সত্য তাঁহার শান অতি মহান)।
৫৩. আল্ ওয়াকীলু জাল্লা জাল্লা জালালুহু। (অভিভাক তাঁহার শান অতি মহান)।
৫৪. আল ক্বাভিইয়্যু জাল্লা জালা জালালুহু। (পরাক্রমশালী তাঁহার শান অতি মহান)।
৫৫. আল মাতীনু জাল্লাজালালুহু। (অত্যন্ত আটল তাঁহার শানঅতি মহান)।
৫৬. আল ওয়ালিয়্যু জাল্লাজালালুহু। (বন্ধু, সাহাস্যকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৫৭. আল হামীদু জাল্লাজালালুহু। (প্রশংসিত তাঁহার শান অতি মহান)।
৫৯. আল্ মুব্দিউ জাল্লা জালালুহু। (প্রথম সৃজনকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৬০. আল মু’ইদু জাল্লা জালালুহু। (পুনরু ত্থানকাকী তাঁহার শান অতি মহান)।
৬১. আল মুহ্য়ী জাল্লাজালালুহু। (জীবনদাতা তাঁহার শান অতি মহান)।
৬২. আল মুমীতু জাল্লা জালালুহু। (পুনরু ত্থানকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৬৩. আল হাইয়্যু জাল্লা জালালুহু। (চির জীবন্ত তাঁহার শান অতি মহান)।
৬৪. আল ক্বাইয়্যুমু জাল্লা জালালুহু। (চিরস্থায়ী তাঁহার শান অতি মহান)।
৬৫. আল ওয়াজিদু জাল্লা জালালুহু। (শ্রেষ্ঠ প্রাপক তাঁহার শান অতি মহান)।
৬৬. আল মাজিদু জাল্লাজালালুহু। (মহিমান্বিত তাঁহার শান অতি মহান)।
৬৭. আল ওয়াহিদু জাল্লা জালালুহু। (প্রকক, এক তাঁহার শান অতি মহান)।
৬৮. আল্ আহুদু জাল্লাজালালুহু। (এক, অদ্বিতীয় ত৭াহার শান অতি মহান)।
৬৯. আস্— সামাদু জাল্লাজালালুহু। (অভাব শূন্য তাঁহার শান অত মহান)।
৭০. আল ক্বাদিরু জাল্লা জালালুহু। (সর্ববিদ সক্ষম তাঁহার শান অতি মহান)।
৭১. আল্ মুক্বতাদিরু জাল্লাজালালুহু। (মহাক্ষমতাশীল তাঁহার শান অতিমহান)।
৭২. আল মুক্কাদ্দিমু জাল্লাজালালুহু। (অগ্রগামী তাঁহার শান অতি মহান)।
৭৩. আল মুআখ্খিরু জাল্লা জালালুহু। (সর্বশেষ তাঁহার শান অতি মহান)।
৭৪. আল আউয়ালু জাল্লাজালালুহু। (আদি, সর্বপ্রথম তাঁহার শান অতি মহান)।
৭৫. আল্ আখিরু জাল্লাজালালুহু। (শেষ পরবর্তী শান অতি মহান)।
৭৬. আজ্জাহিরু জাল্লাজালালুহু। (প্রকাশ তাঁহার শান অতি মহান)।
৭৭. আল বাত্বিনু জাল্লাজালালুহু। (অপ্রকাশ তাঁহার শান অতি মহান)।
৭৮. আল ওয়ালী জাল্লা জালালুহু। (অধিপতি তাঁহার শান অতি মহান)।
৭৯. আল মুতা’আলী জাল্লাজালালুহু। (সর্বোপরি মহিয়ান তাহার শান অতি মহান)।
৮০. আল বার্রু জাল্লাজালালুহু। (আল বার্রু জাল্লাজালালুহু)।
৮১. আত্ তাউয়াবু জাল্লাজালালুহু। (তওবা কবুলকারী তাঁহার শান অতি মাহন)।
৮২. আল মুনতাক্বিমু জাল্লাজালালুহু। (প্রতিশোধ গ্রহনকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৮৩. আল ফাফুওতু জাল্লা জালালুহু। (মার্জনাকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৮৪. আর্ রাউফু জাল্লাজালালুহু। (মেহেরবান তাঁহার শান অতি মহান)।
৮৫. মালিকাল মুলুকি জাল্লাজালালুহু। (সমগ্র রাজ্যের মালিক তাঁহার শান অতি মহান)।
৮৬. জুলজালালী ওয়াল ইকরামি জাল্লাজালালুহু। (মহা মহিমদাতা তাঁহার শান অতি মহান)।
৮৭. আল মুক্বসিত্বু জাল্লাজালালুহু। (মুবিচারক তাঁহার শান অতি মহান)।
৮৮. আল জামিউ জাল্লাজালালুহু। (সাবাবেশকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৮৯. আল গানিইয়্যু জাল্লাজালালুহু। (ঐশ্বর্য্যশালী তাঁহার শান অতি মহান)।
৯০. আল্ মুগ্নিয়্যু জাল্লাজালালুহু। (ঐশ্বর্য্যদাতা তাঁহার শান অতি মহান)।
৯১. আলমু’ত্বিইয়্যু জাল্লাজালালুহু। (দাতা তাঁহার শান অতি মহান)।
৯২. আল মনিউ জাল্লাজাল্লালুহু। (নিষেধকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৯৩. আদ্ দ্বার্রু জাল্লাজালালুহু। (ক্লেশদাতা তাঁহার শান অতি মহান)।
৯৪. আন্ নাফি’উ জাল্লাজালালুহু। (লাভ প্রদানকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৯৫. আদ্দার্রু জাল্লাজালালুহু। (ক্লেশদাতা তাঁহার শান অতি মহান)।
৯৬. আল বাদী’উ জাল্লা জালালুহু। (নব সৃজনকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৯৭. আল বাক্বিইয়্যু জাল্লাজালালুহু। (অবিনশ্বর তাঁহার শান অতি মহান)।
৯৮. আলওয়ারিছু জাল্লাজালালুহু। (চিরস্থায়ী রাজ্যের অধিকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
৯৯. আর্ রাশীদু জাল্লাজালালুহু। (সৎপথ প্রদর্শনকারী তাঁহার শান অতি মহান)।
১০০. আস্ সাবূরু জাল্লাজালালুহু। (মহাধৈর্য্যশীল তাঁহার শান অতি মহান)।

রাসুলুল্লাহর নাম সমূহের মাহাত্য

১. মুহাম্মদ (উচ্চ প্রশংসিত) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। 

২. আহ্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অধিক প্রশংসাকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)।

৩. হামিদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (প্রশংসাকারী তাঁহার প্রতি দরুদ ও সালাম)। 

৪. মাহ্মুদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (প্রশংসিত তাঁহার প্রতি দরুদ ও সাল্লাম)। 

৫. কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (বিতরণকারী তাঁহার প্রতি দরুদ ও সালাম)। 

৬. আবিক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সমাপ্তিকারী তাঁহার প্রতি দরুদ ও সালাম)। 

৭. ফাতিহা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (বিজয়ী তাঁহার প্রতি দরুদ ও সালাম)। 

৮. খাতিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নবুওয়তের সমাপ্তকারী তাঁহার প্রতি দরুদ ও সালাম)। 

৯. হাশির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (একত্রকারী তাঁহার প্রতি দরুদ ও সালাম)। 

১০. মাহী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম (বাতিল ধ্বংসকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ওয়া সাল্লাম)। 

১১. দাঈ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আহবানকারী তাঁহার প্রতি দরুদ ও সালাম)। 

১২. ‘সিরাজ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (প্রদীপ বিশেষ ত৭াহার প্রতি দরুদ ও সালাম)। 

১৩. ‘বাশীর’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সুসংবাদদাতা তাঁহার প্রতি দরুদ ও সালাম)। 

১৪. ‘নাসীর’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ( ভীতি প্রদর্শনকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)।

১৫. ‘রাসুল’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহর  প্রেরিত দূত তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

১৬. ‘হাদী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সৎ পথ প্রদর্শক তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

১৭. ‘নাবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সংবাদদাতা তাঁহার প্রতি দরুদ ও সালাম)। 

১৮. ‘মুনতীহী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সমাপ্তকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

১৯. ‘খালীল’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অকপট বন্ধু ত৭াহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)।

২০. ‘ওয়ালী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

২১. ‘হামীদ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অত্যন্ত প্রশংসিত তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

২২. ‘মাহ্দী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (পথ প্রদর্শক তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

২৩. ‘নাছীর’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সাহায্যকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)।

২৪. ‘ইয়াসীন’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অর্থ অজ্ঞাত তাঁহর প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

২৫. ত্বহা— সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অর্থ অজ্ঞাত তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

২৬. ‘মুয্যাম্মিল’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (কম্বল ভূষনকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

২৭. ‘মুদ্দাস্সির’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (চাদর ভূষনকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

২৮. ‘হাবীব’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহর বন্ধু তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

২৯. ‘কালীম’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহর সহিত আলাপকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম। 

৩০. ‘মুছতাফা’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহর নির্বাচিত তঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৩১. ‘মুরতাযা’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মনোনীত তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৩২. ‘মুখতার’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (পছন্দকৃত তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৩৩. ‘মুছাদ্দিক’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (প্রমানকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৩৪. ‘হুজ্জাৎ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তত্ত্বাবধায়ক প্রমান তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৩৫. ‘হাফিয’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তত্ত্বাবধায়ক তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)।

৩৬. ‘শাহীদ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সাক্ষী, প্রকানকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৩৭. ‘আদিল’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ন্যায়পরায়ন তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৩৮. ‘হালীম’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সহনশীল তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৩৯. ‘নূর’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (জ্যোতি তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৪০. ‘মাতীন’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (দৃঢ়, অটল তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৪১. ‘বুরহান’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (দলীল তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৪২. ‘মুত্বী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহর অনুগত তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৪৩. ‘যাকির’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (স্বরনকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৪৪. ‘আমিন’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (বিশ^াসীÑ তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৪৫. ‘ওয়াইয’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (উপদেশদাতা তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৪৬. ‘ছাহিব’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মালিক তাঁহার প্রতি দুুরুদ ও সালাম)। 

৪৭. ‘নাতিক্ব’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (যুক্তিবাদী, বক্তা তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৪৮. ‘ছাদিক’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সত্যবাদী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৪৯. ‘মাকীন’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (গৃহবাসীÑ তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৫০. ‘ইয়াতীম’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (পিতৃহীন তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৫১. ‘লাছন্নী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহর প্রদত্ত জ্ঞান তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৫২. ‘গারীব’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (বিরল দুর্লভ তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৫৩. ‘হারীছ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (উচ্চভিলাষী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৫৪. ‘কুরাইশ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (কুরাইশ বংশীয় তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৫৫. ‘আযীয’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (প্রভাবশালী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৫৬. ‘হিজাযী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হিজায দেশীয় তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৫৭. ‘রাউফ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অসীম দয়ালু তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৫৮. ‘কারীম’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অনুগ্রহকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৫৯. ‘আলীম’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (জ্ঞানী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৬০. ‘রাহীম’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (পরম দয়াবান তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৬১. ‘মাহ্দিয়্যুন’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হেদায়েত প্রাপ্ত তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৬২. ‘হুদান’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সুপথ প্রদর্শনকারী তাঁহার প্রদি দুরুদ ও সালাম)। 

৬৩. ‘মুনীরুন’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (উজ্জল আলোকপদ তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৬৪. ‘ওয়ালিইয়্যুন’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহ পাকের বন্ধু তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৬৫. ‘মুকার্রামুন’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অধিক সম্মানিত তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৬৬. ‘ওয়াসুলুন’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহ পাকের সহিত মিলন প্রাপ্তি তাঁহার প্রতি দরুদ ও সালাম)। 

৬৭. ‘জুফাদ্বলিন’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (পেষ্ঠ মত বা ওয়ালা তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৬৮. ‘নিমাতুল্লাহি’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহ পাকের অফুরন্ত নেয়ামত তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৬৯. ‘সিরাত্বোম মুস্তাকীম’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সরল সঠিক পথ নির্দেশক তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)।

৭০. ‘গাওছুন’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (প্রবনকারী তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

৭১. ‘ইমামুল মুত্তাক্বীন’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মুত্তাকীগনের ইমাম তাঁহার প্রতি দুরুদ ও সালাম)। 

বিশেষ সম্মানীত ফযীলতপূর্ণ দুরুদ

উচ্চারণঃ ০১. আল্লাহুম্মা ছল্লিআলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিউ ওয়াছীলাতী ইলাইকা ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম। 

উচ্চারণঃ ০২. সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া মোহাম্মাদ। 

ফযিলতঃ — প্রিয় নবীজী সাইয়্যিদিনা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ শরীফ পাঠ করবে আলাহপাক তার প্রতি ১০ বার রহমত অবতীর্ণ করবেন ১০ টি গুনাহ মাফ করবেন, ১০টি মর্যাদা বুরন্দ করবেন। দরুদের বাক্যগুরি মুখ হতে বাহির হওয়ামাত্র আল্লাহতায়ারা দুরুদের শব্দ সমূহ হতে এক একটি ফেরেস্তা সৃষ্টি করবেন। সেই ফেরেস্তা সিদরাতুল মুনতাহার সান্নিকস্থ নদীতে ডুব দিয়া যখন পাখা নাড়ায় তখন সেই পাখা নি:সৃত প্রতিটি পানির ফোঁটা হতে এক একটি ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন, যাহারা কেয়ামত পর্যন্ত ঐ দুরুদ শরীফ পাঠ কারীরজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। 

* কেহ যদি ১০০ শত বার দুরুদ শরীফ পাঠ করে তার ১০০ টি মনের আশা পুর্ণ হবে। তার মধ্যে ৭০টি আখিরাতে ৩০টি দুনিয়াতে। কেহ যদি ৫০০ শত বার দরুদ শরীফ পড়ে তাহার খুশি আনন্দ চিরস্থায়ী হবে। তাহার দোয়া কবুল হবে। সে দুশমনের উপর জয়ীহবে, নেকও ভালো কাজের তওফিক হবে ইনশাল্লাহ। 

* কেহ যদি ১০০০ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করে মহান আল্লাহ তাহার দেহের জন্য দোযখের আগুন হারাম করবেন। কবরে সওয়াল জওয়াবের সময় চিরন্তন সত্যের উপর সুদৃঢ় রাখবেন। নিজের জান্নাত নিজেই মৃত্যুর আগে স্বপ্নে দেখবেন। জান্নাতে ঢোকার সময় তার কাঁধ নবীজীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাঁধের সাথে মিলে যাবে। পরকালে নিঃসন্দেহে জান্নাতে যাবেন ইনশাল্লাহ। 

* রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম সমূহের ফযীলত সমূহঃ

প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র নাম সমূহের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা অপরিসীম। যে ব্যক্তি এই নাম সমূহ খাঁটি মনে ভক্তির সহিত পাঠ করিবে, রোড কেয়ামতে তাহার চেহারা নূরের ন্যায় চমকাইতে থাকিবে। সেইদিন সকলেই তাহার সম্মান করিবে। ইহা পড়িলে তাঁহার বরকতে লোক গুনাহ হইতে বাঁচিবে নেক কাজের তওফিক হয়, ঈমানের সহিত মৃত্যু নসীব হয় ইনশাল্লাহ। নিদ্রার পূর্বে এই নাম পড়িয়া শুইলে স্বপ্নে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যিয়ারত নসীব হইয়া থাকে। 

* বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কেহ যদি নিয়মিত আল্লাহ তায়ালা এবং সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র নাম সমূহ এবং ১০০০ বার উপরোক্ত দুরুদশরীফ গুলি পাঠ করে সে ব্যাক্তি অবশ্যই নিঃসন্দেহে জান্নাতে প্রবেশ করবে ইনশাল্লাহ। এবং তাহার দুনিয়াবী সমস্যা সমাধান করা মহান আল্লাহর ওয়াজীব হয়ে যাই। 

* তওবার দোয়াঃ আল্লাহুম্মাগফিরা তুকা আউছাউ মিনজুনুবি ওয়া রাহমাতুকা আরজা ইনদি মিন আমালী। ইন্নি আস্ আলুকা রিদ্বাকাওয়াল জান্নাতুল ফেরদাউস। 

মহান আল্লাহর ৯৯ নামের ফযীলতঃ

১১ বার আস্তাগফিরুল্লাহ ১১ বার দুরুদ শরীফ ৭/৩৩ বার আল্লাহর ৯৯ নাম সমূহ পাঠ করলে দোয়া কবুল হয়। 

১. মহান আল্লাহর নাম সমূহকে আসমাউল হুসনা বলা হয়। এই নাম সমূহের ফযীলত ও সাহাত্ব্য অফুরন্ত ও অপরিসীম। এই নাম সমূহ জিকির দ্বারা ইহ—পরলৌকিক যাবতীয় মাকছাদ এবং কল্যান হাসিল হয়। 

২. ইহা অনবরত জিকির কররে মান সম্মান সুখ শান্তি এবং যশ খ্যাতি অর্জিত হয়। 

৩. হাদীস শরীফে আছে, এই আমরকারীর সব মনোবাসনা পূর্ণ হয়। 

৪. মানুষ এই সকল নামে মহান আল্লাহকে ডাকিলে তিঁনি জবাবে বলেন, “হে বান্দা! কি চাই বল আমি হাজির আছি। তোমার যে কোন প্রার্থনা আমি পুরণ করিব। 

* প্রয়োজন পূরনের দোয়াঃ যদি কোন প্রয়োজন দেখা যায় তখন প্রথমে অজু করবে এবং হাজত পুরা হওয়ার নিয়তে দুরাকাত নামাজ আদায় করবে। নামাজ শেষ করার পর এই দোয়া পাঠ করবে আল্লাহুম্মা ইন্নি আছআলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহু ইলাইকা বি নাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যি রাহমাতি ফী হাজাতীহা ফিহি লিতুক্দ্বাবি লি ফাশাফফিহ ফিয়্যা।

অর্থঃ হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে প্রার্থনা জানাই এবং আপনার দিকে নিজেকে সমর্পন করি আপনার করুনার নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওছিলায়, আমার এই হাজত (আশা) পুরনের জন্য, সুতরাং আপনি তা আমার সাপেক্ষে পুরন করার তাওফিক দান করুন। 

* সোবহানাল্লাহী ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহীল আজিম ওয়া বিহামদিহী আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ। 

ফযীলতঃ উক্ত তাসবীহ ফজর নামাযের পূর্বে বা পরে ১০০ বার পড়িলে ১ লক্ষ ২৪ হাজার নেকী লিখা হয়। এবং পর্বত পরিমাণ গুনাহ থাকলে মাফ হয়ে যায়। এই জিকিরের বদলে দুনিয়াতে রিজিক এসে থাকে। ইহা পড়িয়া মসুলমান নর নারীর উপর বখশাইলে যাদের দোয়া কবুল হয় তাহাদের তালিকায় তাহার নাম লিখা হয়। ইহার সওয়াব ঐ তাসবীহ পাঠকারী কেয়ামত পর্যন্ত পাইতে থাকিবে। আল্লাহ তায়ালা এর এক একটি শব্দ হইতে এক একজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করিয়া কেয়ামত পর্যন্ত তাসবীহ পাঠে নিযুক্ত করিয়া দিবেন। উহার সমূদয় সওয়াব পাঠকারী পাইতে থাকিবে। 

আল্লাহুম্মা লাক্ককিন্নী হুজ্জাতাল ঈমানী ইনদাল মাউতঃ 

ফযীলতঃ এই দোয়া দৈনিক সকাল সন্ধ্যা তিনবার করিয়া পাঠ করিলে মৃত্যুর সময় আল্লাহতায়ালা ফেরেস্তা পাঠাইয়া কলেমার তালকিন করাইয়া ঈমানের সহিত মৃত্যুদান করিবেন। 

* সাইয়্যিদুল এস্তেগফার অর্থসহঃ

اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لَآ إِلٰهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْۢبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لَايَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণঃ আল্লা—হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা—হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’। [১০৫]

* মিসওয়াক করার সুন্নত তরীকাঃ

১. দাঁতের উপরের পাটিতে প্রথমতঃ ডানদিকে তিনবার অতঃপর বামদিকে তিনবার। এমনি ভাবে নিচের পাটির ডানদিকে তিনবার এরপর বামদিকে তিনবার। 

২. প্রত্যেকবার মিসয়োক পানিতে ভিজিয়ে নেয়া সুন্নত। 

৩. প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁতের প্রস্থে মিসওয়াক করতেন। 

৪. দাঁতের বাইরে ও ভিতরের দিকে মিসওয়াক করতঃ জিহ্ববার দৈর্ঘ্য ও মিসওয়াক করা সুন্নত। 

৫. এছাড়া কখনো গাছের ডাল উপস্থি না থাকলে আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করবে। 

* আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াকের সুন্নতঃ 

১. মুখের ডানদিকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা এবং বাম দিকে তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা পরিস্কার করবে। 

* যে যে সময়ে মিসওয়াক করা মোস্তাহাবঃ 

১. নিদ্রা হতে উঠে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্ব প্রথম দুহাত তিনবার ধুয়ে মিসওয়াক করতেন। 

২. উযু করার সময় পুনরায় মিসওয়াক করতেন। 

৩. কোরআন তিলাওয়াতের সময়। 

৪. হাদীস পড়া ও পড়ানোর সময়। 

৫. নামাযে দাঁড়ানোর সময়। (যদি অনেক এগ ওজু করে থাকে)। 

৬. আল্লাহর জিকির করা পূর্বে। 

৭. মুখে দুর্গন্ধ হলে। 

৮. কোনো দ্বীনী মজলিসে যাওয়ার পূর্বে। 

৯. ঘরে প্রবেশের পরে সর্বপ্রথম প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিসওয়াক করতেন।

১০. স্ত্রী সহবাসের পূর্বে। 

১১. ক্ষুধা বা পিপাসিত হলে। 

১২. সফরে যাওয়ার পূর্বে। 

১৩. আহার গ্রহণের পূর্বে। 

১৪. নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে। 

১৫. সেহরী খাওয়ার সময়।

১৬. মৃত্যু চিহ্ন ফুটে উঠার পূর্বে। 

* মিসওয়াকের গুনাবলী বা উপকারিতাঃ

মিসওয়াকের ওছীলায় নিম্নোক্ত নেয়ামত লাভ করা যায়। 

১. আল্লাহর সন্তুষ্টির ওয়াদা রয়েছে। 

২. নামাযের সওয়াব নিরানব্বই হতে চারশতগুন বেড়ে যায়। 

৩. নিয়মিত মিসওয়াক করার ফলে সচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়। 

৪. জীবিকা নির্বাহু সহজ হয়ে যায়। 

৫. মুখ পরিষ্কার হয়। 

৬. মাড়ি মজবুত হয়। 

৭. মাথা ব্যাথা ও মাথার সর্বপ্রকার রোগ সেরে যায়।

৮. কোন নিশ্চল রগ নড়াচড়া করেনা এবং নড়াচড়াকারী নিশ্চল হয়না। 

৯. কফ দুর হয়। 

১০. দাঁদ শক্ত হয়। 

১১. দৃষ্টিশক্তি পরিষ্কার হয়।

১২. পাকস্থলী ঠিক হয়।

১৩. শরীর শক্তিশালী হয়। 

১৪. মানুষের বাকপটুতা মুখস্থ শক্তি ও জ্ঞান বাড়ে। 

১৫. অন্তর পবিত্র হয়। 

১৬. পূণ্য বেড়ে যায়। 

১৭. ফেরেস্তা খুশী হন। 

১৮. তার চেহারার জোতির কারনে ফেরেস্তারা মোছাফাহ করেন।

১৯. যখন সে মসজিদ হতে বের হয় ফেরেস্তারা তার পিছনে পিছনে চলে। 

২০. নবী ও রাসুল তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। 

২১. মিসওয়াক শয়তানকে অসন্তুষ্ট ও তাকে তাড়িয়ে দেয়। 

২২. পাকস্থলী পরিস্কার করে। 

২৩. খাদ্য হজম করে। 

২৪. অধিক সন্তান জন্মায়।

২৫. পুলসিরাত বিজলীর ন্যায় পার করে দিবে। 

২৬. বাধর্ক্য পিছিয়ে দেয়। 

২৭. আমল ডান হাতে দিবে। 

২৮. আল্লাহর এবাদত করবার জন্য শরীরে শক্তি দান করেন। 

২৯.শরীর থেকে উষ্ণতা দূর হয়। 

৩০. পিঠ মজবুত করে। 

৩১. মৃত্যুর সময় কলেমায়ে শাহাদত নসবি হয়। 

৩২. মৃত্যু কষ্ট অতি তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। 

৩৩. দাঁত সাদা করে। 

৩৪. মুখে সুঘ্রান আনে।

৩৫. কন্ঠ পরিস্কার করে। 

৩৬. জি¦হবা পরিষ্কার করে। 

৩৭. বুদ্ধি তীক্ষè করে। 

৩৮. প্রয়োজন পুরা হতে সাহায্য করে। 

৩৯. আদ্রতা বন্ধ করে। 

৪০. কবর প্রশস্ত হয়ে যায় এবং মৃত্যুর জন্য সমবেদনাশীল হয়ে যায়। 

৪১. যারা মিসওয়াক করেনা তাদের সওয়াব তার আমল নামায় লিখা হয়। 

৪২. বেহেশতের দরজা খুলে যায়। 

৪৩. ফেরেস্তাগন প্রতিদিন তার জন্য বলতে এই ব্যাক্তির নবীদের অনুসারী। তাঁদের পদাংক অনুসরণকারী। 

৪৪. তার জন্য দোযখের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। 

৪৫. মিসয়োককারী দুনিযা হতে পবিত্র হয়ে যায়। 

৪৬. মৃত্যুর ফেরেস্তা তার কাছে এমন সুরতে হাজির হয়, যেরূপ কোনো ওলী আল্লাহ বা নবীদের নিকট হাজির হয়। 

৪৭. মিসওয়াককারী ব্যাক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাউজ হতে পানি পান করার পূর্বে মৃত্যু বরণ করবেনা। 

৪৮. মিসওয়াক কররে বেশি বীর্য সৃষ্টি হয়। 

৪৯. বুদ্ধি তীক্ষ্ম হয়। 

৫০. মিসওয়াককারীর কবর প্রশস্ত হয়। 

৫১. সর্বোপরি ফজিলত এই যে, মিসওয়াককারীর প্রতি আল্লাহতায়ালা রাজি খুশি হন। 

মিসওয়াকের আরও বহু হাদীস বর্নিত আছে। মিসওয়াকরে ৭০টির বেশি উপকারিতা আছে। কোন কোন বুজুর্গ একটি স্বন্বের টুকরার বিনিময়ে ১টি মিসওয়াক ক্রয় করেছেন। 






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ