ময়মনসিংহ বিভাগ: বিস্তারিত তথ্য
ময়মনসিংহ বিভাগ বাংলাদেশের অষ্টম এবং নবীনতম প্রশাসনিক বিভাগ, যা ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর গঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত এবং ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ।
১. ভৌগোলিক অবস্থান
- ময়মনসিংহ বিভাগের উত্তর সীমান্তে ভারতের মেঘালয় রাজ্য।
- পূর্বে সিলেট ও কিশোরগঞ্জ, দক্ষিণে ঢাকা বিভাগ এবং পশ্চিমে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ।
২. উপজেলা ও জেলা সমূহ
ময়মনসিংহ বিভাগে বর্তমানে ৪টি জেলা ও ৩৬টি উপজেলা রয়েছে।
- ময়মনসিংহ জেলা
- জামালপুর জেলা
- শেরপুর জেলা
- নেত্রকোনা জেলা
৩. জনসংখ্যা ও আয়তন
- আয়তন: প্রায় ১০,৫৮৪ বর্গ কিলোমিটার।
- জনসংখ্যা: আনুমানিক ১ কোটির বেশি।
- জনসংখ্যার বেশিরভাগই কৃষি ও মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল।
৪. অর্থনীতি
ময়মনসিংহ বিভাগ মূলত কৃষি নির্ভর।
- কৃষি পণ্য: ধান, পাট, গম, সরিষা, বিভিন্ন শাক-সবজি।
- মৎস্য: ময়মনসিংহকে "মাছের রাজধানী" বলা হয়। এখানে মাছ চাষ ও প্রসেসিং শিল্পের বড় অবদান রয়েছে।
- জামালপুর ও নেত্রকোনা অঞ্চলে বিস্তৃত হস্তশিল্প ও তাঁত শিল্প রয়েছে।
৫. শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ময়মনসিংহ বিভাগে শিক্ষার হার ক্রমাগত উন্নতি করছে। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ:
- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ময়মনসিংহ)
- ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ
- আনন্দমোহন কলেজ
- নেত্রকোনা সরকারি কলেজ
- বিভিন্ন মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
৬. পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান
ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ঐতিহ্যবাহী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।
- মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি (ময়মনসিংহ)
- ব্রহ্মপুত্র নদ
- গারো পাহাড় ও বিজয়পুরের চিনামাটি পাহাড় (নেত্রকোনা)
- ঝিনাইগাতি গারো পাহাড় (শেরপুর)
- হাতিবান্ধা ইকো পার্ক (জামালপুর)
৭. সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
ময়মনসিংহ বিভাগের লোকজ সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
- ময়মনসিংহ গীতিকা: বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
- বাউল ও পালাগান: এই অঞ্চলের জনপ্রিয় সঙ্গীত।
- বিভিন্ন মেলা, নাট্য উৎসব এবং পূজা-পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়।
৮. পরিবহন ব্যবস্থা
- ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ বিভাগে সড়ক ও রেলপথে সহজেই যাতায়াত করা যায়।
- ময়মনসিংহ ও জামালপুরের মধ্য দিয়ে বেশ কিছু আন্তঃনগর ট্রেন চলে।
- বিভিন্ন নদীপথও যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ময়মনসিংহ বিভাগ ঐতিহ্য, প্রকৃতি, শিক্ষা ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ