مِنۡ شَرِّ الۡوَسۡوَاسِ ۬ۙ الۡخَنَّاسِ ۪ۙ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সেই কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে, যে পেছনে আত্মগোপন করে ৩
তাফসীরঃ
৩. হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত : যে-কোনও শিশু জন্মগ্রহণ করে, কুমন্ত্রণাদাতা (শয়তান) তার অন্তরে চেপে বসে। যখন সে সচেতন হয়, তখন যদি আল্লাহ তাআলার যিকির করে, তবে সে কুমন্ত্রণাদাতা পেছনে অদৃশ্য হয়ে যায়। আবার যখন গাফেল হয়ে যায়, ফিরে এসে কুমন্ত্রণা দেয়। (রূহুল মাআনী; হাকীম, ইবনুল মুনযির ও যিয়া’র বরাতে)।
৪. সূরা আনআমে (৬ : ১১২) বলা হয়েছে, শয়তান যেমন জিন্নদের মধ্যে হয়, তেমনি মানুষের মধ্যেও হয়। তবে জিন্ন শয়তানদেরকে চোখে দেখা যায় না। তারা অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। আর মানুষ শয়তানদেরকে চোখে দেখা যায়। তারা এমন সব কথাবার্তা বলে, যা শুনলে অন্তরে নানা রকমের কুচিন্তা জাগ্রত হয়। তাই এ আয়াতে উভয় রকম কুমন্ত্রণাদাতা থেকে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় চাওয়া হয়েছে। এ সূরায় যদিও শয়তানের কুমন্ত্রণা দেওয়ার শক্তির কথা জানানো হয়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনার নির্দেশ দিয়ে এটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলার কাছে পানাহ চাইলে এবং তাঁর যিকির করলে শয়তান দূরে সরে যায়। সূরা নিসায়(৪ : ৭৬) বলা হয়েছে, তার কৌশল দুর্বল এবং তার এ শক্তি নেই যে, মানুষকে গুনাহ করতে বাধ্য করবে। সূরা ইবরাহীমে (১৪ : ২২) খোদ শয়তানের স্বীকারোক্তি বর্ণনা করা হয়েছে যে, ‘মানুষের উপর আমার কোন আধিপত্য নেই’। বস্তুত শয়তান যে মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে এটা মানুষের জন্য এক পরীক্ষা। যে ব্যক্তি তার ধোঁকায় পড়তে অস্বীকার করে এবং এজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে পানাহ চায়, শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। কুরআন মাজীদের সূচনা হয়েছিল সূরা ফাতিহা দ্বারা। তাতে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও গুণাবলী উল্লেখ করার পর তাঁরই কাছে সরল পথের হেদায়াত দান করার জন্য দোয়া করা হয়েছিল। এবার সমাপ্তি টানা হয়েছে সূরা ‘নাস’ দ্বারা। এতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়া হয়েছে। এভাবে সরল পথে চলার ক্ষেত্রে শয়তানের পক্ষ হতে যে বাধার সৃষ্টি হতে পারত, তা অপসারণের পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে নফস ও শয়তান উভয়ের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন আমীন। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা নিজ ফযল ও করমে আজ ১৭ই রমযানুল মুবারক ১৪২৯ হিজরী মোতাবেক ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০০৮ খ্রি. তারিখে কুরআন মাজীদের এ খেদমতকে সমাপ্তিতে পৌঁছিয়েছেন (অনুবাদের কাজ শেষ করিয়েছেন আজ ২৯ শে মহররম ১৪৩২ হিজরী মোতাবেক ৫ই জানুয়ারি ২০১১ খ্রি.)। হে আল্লাহ! কোনও মুখ ও কোনও কলম আপনার শোকর আদায়ের ক্ষমতা রাখে না। কত মহান আপনি! এক মূল্যহীন বিন্দুকে আপনার মহা মর্যাদাবান কালামের খেদমত করার সৌভাগ্য দিয়েছেন! হে আল্লাহ! আপনি যখন এ তাওফীক দিয়েছেন তখন মেহেরবাণী করে একে কবুলও করে নিন। এর উছিলায় এই অকর্মণ্য তরজমাকারীর জন্য কবর থেকে হাশর পর্যন্ত প্রতিটি ধাপকে সহজ করে দিন এবং এ খেদমতকে আখেরাতের পুঁজি বানিয়ে দিন। পাঠকের অন্তরে এর মাধ্যমে কুরআন মাজীদকে বোঝার, এর উপর আমল করার এবং এর মহিমান্বিত বার্তা ও আবেদনকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার প্রেরণা সৃষ্টি করে দিন। (হে আল্লাহ! এই একই দোয়া অধম গুনাহগার -অনুবাদকও আপনার দরবারে করছে। মেহেরবাণী করে কবুল করে নিন) আমীন।
0 মন্তব্যসমূহ