اَلۡحَمۡدُ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ۙ

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। 

তাফসীরঃ
২. আপনি যদি কোনও ইমারতের প্রশংসা করেন, তবে প্রকৃতপক্ষে সে প্রশংসা হয় ইমারতটির নির্মাতার। সুতরাং এই সৃষ্টিজগতের যে-কোনও বস্তুর প্রশংসা করা হলে পরিণামে সে প্রশংসা হয় আল্লাহ তাআলার, যেহেতু সে বস্তু তাঁরই সৃষ্টি। জগতসমূহের প্রতিপালক বলে সে দিকেই ইশারা করা হয়েছে। মানব জগত, জড় জগত ও উদ্ভিদ জগত থেকে শুরু করে নভোমণ্ডল, নক্ষত্রমণ্ডল ও ফিরিশতা জগত পর্যন্ত সব কিছুর সৃজন ও প্রতিপালন আল্লাহ তাআলারই কাজ। এসব জগতের মধ্যে যা কিছু প্রশংসাযোগ্য আছে, আল্লাহ তাআলার সৃজন ও রবূবিয়্যাতের মহিমার কারণেই তা প্রশংসার যোগ্যতা লাভ করেছে।

الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ ۙ

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী

যিনি সকলের প্রতি দয়াবান, পরম দয়ালু,


مٰلِکِ یَوۡمِ الدِّیۡنِ ؕ

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী

যিনি কর্মফল-দিবসের মালিক। 

তাফসীরঃ
৩. কর্মফল দিবস বলতে সেই দিনকে বোঝানো হয়েছে, যে দিন সমস্ত বান্দাকে পার্থিব জীবনের যাবতীয় কৃতকর্মের বদলা দেওয়া হবে। এমনিতে তো কর্মফল দিবসের আগেও সৃষ্টিজগতের সমস্ত কিছুর প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলাই। তবে তিনি দুনিয়ায় মানুষকেও বহু কিছুর মালিকানা দান করেছেন। যদিও তাদের সে মালিকানা অসম্পূর্ণ ও সাময়িক, তারপরও আপাতদৃষ্টিতে তাকে মালিকানাই বলা হয়ে থাকে। কিন্তু কিয়ামত দিবসে যখন শাস্তি ও পুরস্কার দানের সময় এসে যাবে, তখন এই অসম্পূর্ণ ও সাময়িক মালিকানাও খতম হয়ে যাবে। সে দিন বাহ্যিক মালিকানাও আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও থাকবে না। এ কারণেই এ স্থলে আল্লাহ তাআলাকে বিশেষভাবে কর্মফল দিবসের মালিক বলা হয়েছে।

اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَاِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ ؕ

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী

[হে আল্লাহ] আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই। 

তাফসীরঃ
৪. এর দ্বারা বান্দাদেরকে আল্লাহ তাআলার কাছে দু‘আ করার নিয়ম শেখানো হয়েছে। সেই সঙ্গে এটাও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কেউ কোনও রকমের ইবাদত-উপাসনার উপযুক্ত নয়। আরও জানানো হচ্ছে, প্রতিটি কাজে প্রকৃত সাহায্য আল্লাহ তাআলার কাছেই চাওয়া উচিত। কেননা যথার্থভাবে কার্য-নির্বাহকারী তিনি ছাড়া আর কেউ নেই। দুনিয়ার বিভিন্ন কাজে যে অনেক সময় মানুষের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়, তা এই বিশ্বাসে চাওয়া হয় না যে, সে কর্মবিধায়ক। বরং এক বাহ্যিক ‘কারণ’ মনে করেই চাওয়া হয়। [এটা নাজায়েয নয়। তবে বাহ্যিক আসবাব-উপকরণের ঊর্ধ্বে কোনও বিষয়ে গায়রুল্লাহর সাহায্য চাওয়া কিছুতেই জায়েয নয়। তা শিরকের অন্তর্ভুক্ত, যেমন সন্তান, জীবিকা ও শিফা ইত্যাদি চাওয়া। -অনুবাদক]

اِہۡدِنَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ ۙ

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী

আমাদের সরল পথে পরিচালিত কর।


صِرَاطَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمۡتَ عَلَیۡہِمۡ ۙ۬  غَیۡرِ الۡمَغۡضُوۡبِ عَلَیۡہِمۡ وَلَا الضَّآلِّیۡنَ ٪

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী

সেই সকল লোকের পথে, যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ।  ওই সকল লোকের পথে নয়, যাদের প্রতি গযব নাযিল হয়েছে এবং তাদের পথেও নয়, যারা পথহারা। 

তাফসীরঃ
৫. কাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ হয়েছে, সে সম্পর্কে সূরা নিসায় ইরশাদ হয়েছে, কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করলে সে নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সালিহীন (সৎকর্মপরায়ণগণ)-এর সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। আর তারা কত উত্তম সঙ্গী সূরা নিসা (৪ : ৬৯)। -অনুবাদক
৬. অর্থাৎ যারা সরল-সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, আমাদেরকে তাদের পথে চালিও না। মৌলিকভাবে এরূপ লোক দুই শ্রেণীর। (ক) যারা সত্য জানার পরও হঠকারিতা ও বিদ্বেষবশত তা গ্রহণ করে না। الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ বলে তাদের দিকে ইশারা করা হয়েছে। এরা হল ইয়াহূদী জাতি। উপর্যুপরি বিদ্বেষ ও হঠকারিতার কারণে তাদের প্রতি আল্লাহর গযব নাযিল হয়েছে। (খ) যারা অজ্ঞতাবশত বিপথগামী হয়, যেমন খ্রিস্টান সম্প্রদায়। الضَّالِّينَ-এর দ্বারা তাদেরই প্রতি ইশারা করা হয়েছে। তারা এমনই অজ্ঞ যে, বিভিন্ন লোকের লেখা হযরত ঈসা ‘আলাইহিস সালামের জীবনী গ্রন্থসমূহকে ‘আসমানী কিতাব ইঞ্জিল’ নামে অভিহিত করছে, ইয়াহূদীরা জনৈক ব্যক্তিকে শূলে চড়িয়ে ঈসা বলে প্রচার করে দিয়েছে আর সে কথাই তারা বিশ্বাস করছে, সর্বোপরি হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রচারিত তাওহীদি দ্বীনের পরিবর্তে ইয়াহূদী সেন্ট পৌল যে মনগড়া পৌত্তলিক ধর্ম প্রচার করেছে, তারা খ্রিস্টধর্ম বিশ্বাসে তারই অনুসরণ করেছে এবং এভাবে চরমভাবে পথহারা হয়ে গেছে। -অনুবাদক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ